মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন

অনুগল্প # স্তব্ধ সময়-খন্দকার উল্লাস

অনুগল্প # স্তব্ধ সময়-খন্দকার উল্লাস

ঘর থেকে বাহির হবার সময় নিলয় বারে বারে আজ রুমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে মনে হচ্ছে আজ সৌন্দর্য অবলোকন তৃষ্ণাটা বড্ডো চেপে বসেছে। রুমা বললো “রাতের ডিনারটা অন্তত করে যাও”

“না এখন ডিনার করতে গেলে সময় ব্যায় হবে আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে থাকবে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যাবে তুমি ডিনার টা সেরে শুয়ে পড় আমার কাঁধে দেশের দায়িত্ব আগে।” এই বলে ফায়ার প্রোটেকশন ড্রেস পড়ে হুরমুর করে বাহির হয়ে চলে যায় নিলয়।

সবে মাত্র নবদাম্পত্যে পা রেখেছে রুমা আর নিলয় অথচ নিলয়ের পেশাদারিত্বে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ টুকুও হয়ে উঠেনি তেমন ভাবে,চেনা জানাও ঐ ফুলসজ্জার রাত অবধি।

যতটুকু মনে পড়ে নিলয় সেদিন বলেছিল” দেখো রুমা আমি জানিনা কতটুকু দায়িত্বভার তোমার নিতে পারবো কারণ পেশায় আমি দমকল কর্মী,

সর্বমূলে যারা শপথে বলীয়ান দেশের কর্মযজ্ঞে তাই দেশ ও দেশের মানুষের জীবন রক্ষায় যদি কখনও আমি অবহেলা করি এবং তাতে করে যদি একটা প্রাণ হারিয়ে যায় চিরতরে তাহলে নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবোনা।এই খুনের দায় আমাকে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে।”

“দেশের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি কখনও তোমার প্রতি দায়িত্বের গাফিলতি হয় তবে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।”

জবাবে রুমা একগাল হেঁসে বলেছিল”স্বপ্নময় রাতে দুঃস্বপ্নের কোন গল্প শুনতে চাইনা”

নিলয় বাহির হবার সময় দরজার সামনে বাধা খায় রুমা বলে” একটু বসে যাওনা প্লিজ” জবাবে নিলয় আলতো করে প্রিয়তমার গাল স্পর্শ করে বলে ” ভয় নেই,তোমাকে বার বার জ্বালাতে ঘরে আমায় ফিরতেই হবে।”এই বলে নিলয় ফায়ারিং প্রোটেকশান হেলমেট মাথায় পড়ে বাহির হয়ে যায়,রুমার চোখ বেয়ে অশ্রু নামে রুমা তাকিয়ে দেখছে নিলয় অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে,পিছনে ফিরে একবার তাকালো তারপর আবার রওনা হল।

বাড়ি থেকে কিছু দূরেই শহরের রাস্তা হতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীর হর্ন শোনা যাচ্ছে।

গাড়ীর ভেতর থেকে কমান্ডার চিৎকার করে বলছে “হারিয়াপ নিলয়,আগুনের লেলিহান রূপ খুব একটা সুবিধার নয় দ্রুত না পৌছানো গেলে ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে পারে। অনেক মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।”

নিলয় এক লাফে গাড়িতে উঠে বসে সেখানে সহকর্মীদের সাথে কিছুটা খুনশুটি যার মধ্যে জয়দ্বীপ অন্যতম,সারাদিন নিলয়ের সাথে ফাইজলামিতে যার সময় কাটে,ধর্মে জয়দ্বীপের ভিন্নতা থাকলেও কর্মে ও দেশের দায়িত্বে গর্বিত আগুনসেনা তারা।গাড়ীর সাইরেনের শব্দে শুধু এতটুকু কথা বোঝা যায় জয়দ্বীপ নিলয় কে বলছে “কি রে বউয়ের মায়া ছাড়তে মনে চায়না নাকি,কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে গাড়ী হুঁস নাই!” কথা শুনে নিলয় রাগ চোখে জয়দ্বীপের দিকে তাকায়,জয়দ্বীপ হেঁসে ফেলে বলে “বুঝি রে সবই বুঝি,কি করবি বল নাম যখন আগুন সৈনিক তখন তার মায়া শুধুই মানবতায়।

গাড়ী এসে পৌছে গেছে বিধস্ত স্থানে কমান্ডার বলছেন “হ্যালো ফায়ারম্যানস্ মাথায় রাখবা তোমরা ময়দানে নামার পর থেকে যেন চুল পরিমাণ ক্ষতি না হয়,নিজের জীবনটা বাজি রেখে দেশের জন্য যাও”

ইয়েস স্যার।

ছড়িয়ে পড়ে আগুন সেনা,জয়দ্বীপ ডানে ওয়াটার পাইপটা নিয়ে ছোটে একবার শুধু নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে “আসছি বন্ধু বেঁচে থাকলে দেখা হবে।” এটাই তো প্রকৃতির প্রকৃত রূপ দেশের দায়িত্বের মানবতা যখন কাঁধে তখন কোন সাম্প্রদায়িকতা বীলিন।

আগুন যেন পৌরণিক ভয়ঙ্কর ড্রাগণ রূপে ধেয়ে আসছে,কাল বিলম্ব না করে অক্সিজেন মাস্ক পরিধান করে নিলয় সামনে অগ্রসর হয়,গগণ বিদারী আত্নচিৎকার সবার বাঁচার জন্য আর্তনাদ যেন মস্তিস্কে হ্যালুসিনেশান ঘটায় নিলয়ের।

হঠাৎ কিছু বুঝে উঠবার আগেই বিকট বিস্ফোরণ।

তারপর নিস্তব্ধতা,নিলয় শেষ বারের মত তারা ভরা রাতের আকাশের ক্যানভাসে প্রিয়তমার মুখচ্ছবি দেখতে পায়।

রুমার নির্ঘুম চোখ মোবাইলের সোসিলায় পর্দায়,ট্র্যাজেডি ঘটে গেছে কিন্তু চোখজোড়া অশ্রু শুন্য।বার কয়েক খবর নেবার ব্যার্থ চেষ্টা কারণ নিলয় ডিউটিতে যাবার পূর্বে মুঠোফোন বাসায় রেখে যায়,নতুন জায়গায় ট্রান্সফার হয়ে আসার বেশিদিন হয়নি তাই রুমা কাউকে খবর নেবার মত পায়না।

এখন শুধু সকালটা হবার প্রতিক্ষা।একসময় সকালের আলো ফোটে আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে বাংলার গর্বিত আগুন সেনারা কিন্তু এরই মাঝে শহীদের শুধা পান করেছে বেশ কিছু আগুনসেনা।

রুমা ঘটনা স্থলে ছুটে যায় নিলয়ের আইডেন্টিটি দেবার পর তাকে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়,চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শরীর হতে বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ,গলিত দেহ।হঠাৎ এক বিচ্ছিন্ন হওয়া হাতের দিকে চোখ আটকে যায় রুমার,হাতটা তখনো হাতঘড়ি পরিহিত অবস্থা।হাত ঘড়িটা চেনা লাগছে কাছে এগিয়ে যেতেই রুমা স্তব্ধ হয়ে হাটুগেঁড়ে বসে পড়ে,এই ঘড়িটা যে তারই কেনা ছিল এবং ফুলসজ্জার রাতে নিলয়কে দেওয়া উপহার,

ঘড়ির স্তব্ধ সময় ১.৩০ মিনিট তখন অনেক রাত।

 

বি:দ্র: কারও জীবনের সাথে সংলাপ মিলে গেলে লেখক দায়ি নয়,বিচ্ছিন্ন হাতের কল্পিত নাম নিলয়।

শেয়ার করুন ..

Comments are closed.




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge