মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন

কবিতার পর শিশুসাহিত্য নিয়ে ভাবতে বেশি ভালো লাগে-সোমের কৌমুদী

কবিতার পর শিশুসাহিত্য নিয়ে ভাবতে বেশি ভালো লাগে-সোমের কৌমুদী

পাতা প্রকাশ : কেমন আছেন? বসন্ত কেমন কাটছে?

সোমের কৌমুদী : এই তো। ভালো আছি।বসন্ত আসলে হৃদয় কাননে ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক প্রকৃতিতে ফুল ফুটবেই আর সে ফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়বে মন বাগানেও। বসন্তে যেমন প্রেমিক কোকিল গান গায় তেমনি বিরহী কোকিলও গান গায়। বসন্ত সবার মনকেই ছুঁয়ে যায়, এটাই বসন্তের বৈশিষ্ট্য। আমিও বসন্তের গান গাইছি।

পাতা প্রকাশ : আপনার লেখালেখির শুরুর গল্পটা শুনতে চাই…  

সোমের কৌমুদী : আমরা সব ভাই-বোন নানাবাড়িতে বড় হয়েছি। আমার বড় দুই ভাই। আমার নানা ছিলেন প্রাইমারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।নিয়িমিত খবরের কাগজ ও অন্যান্য বই পড়তেন। বাড়িতে বড় ভাই নিয়মিত গানের রেওয়াজ করতেন।তিনি ছিলেন সাহিত্যের ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই আমাকে সাহিত্যের বিভিন্ন বই পড়তে দিতেন এবং পড়েছি কি না তা যাচাই করতেন।  ছোট মামাও টুকটাক লিখতেন।এমন পরিবেশ পেয়েই লেখালেখির প্রতি আগ্রহ জন্মে।আমি আমার বড় ভাইয়ের কাছে শিখেছি কীভাবে লেখায় শিল্পরস নিয়ে আসতে হয় আর ছোটভাইয়ের কাছে শিখেছি লেখাটাকে কীভাবে জীবন ঘনিষ্ঠ করে তুলতে হয়। যারা অন্যের ভালো চান তাদের অধিকাংশই অন্যের ভালো করতে গিয়ে সেই ব্যক্তির ভালো হবার পর সেখানে নিজের স্বার্থ খুঁজে না পেলে চরিত্র বদলে ফেলে।কিন্তু আমি আমার নানাজী ও ছোট ভাইজানের কাছে শিখেছি কীভাবে নিঃস্বার্থ ভালোবাসতে হয়।সাহিত্যকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার শিক্ষাটাও আমি আমার ছোট ভাইজানের কাছ থেকে পেয়েছি।

পাতা প্রকাশ : ছোটোবেলায় জীবনের লক্ষ্য কী ছিলো? তা কি হতে পেরেছেন?

সোমের কৌমুদী : ছোটবেলায় জীবনের লক্ষ্য ছিলো ক্রিকেটার হওয়া। কিন্তু যখন কলেজে পড়ি তখন থেকে লেখকই হতে চেয়েছি। আমি সে পথেই হাঁটছি।

পাতা প্রকাশ : আপনি নিজেকে কি কবি ভাবেন? নাকি অন্যকিছু?

সোমের কৌমুদী : কবিতা লিখতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখা কখনোই লক্ষ্য নয় আমার। কবিতার পর শিশুসাহিত্য নিয়ে ভাবতে বেশি ভালো লাগে।

পাতা প্রকাশ : নিজের বই নিয়ে উপলব্ধি কী?

সোমের কৌমুদী : দেখুন, আর দশটা মানুষের ন্যায় লেখকেরাও পরিণত হয় বয়স আর অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে।লেখার বয়স বাড়ার সাথে সাথে লেখকও পরিপক্বতার দিকে ধাবিত হয়। আমার কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে।যার শেষেরটি “জোছনা রাঙা বৃষ্টি”। এ পর্যায়ে এসে সত্যি বলতে, আমি আমার বই নিয়ে পুরোপুরি তৃপ্ত না। আমি মনে করি আমার আরো ভালো কিছু দেয়া উচিৎ ছিল।এবং উপরওয়ালা আমাকে সে সামর্থ্য দিয়েছেন বলে মনে করি। পরবর্তী বইগুলোতে আরো ভালো কিছু দেবার চেষ্টা করবো। এজন্যই তিন বছর নতুন বই প্রকাশ করা থেকে বিরত আছি।    

পাতা প্রকাশ : আপনার কাছে কবিতা কী?

সোমের কৌমুদী : আমার সবসময়ই মনে হয় ,কবিতা হলো কবির আত্ম প্রতিকৃতি। তবে এজন্য কবিকে অবশ্যই তাঁর ব্যক্তিসত্তাকে জাতিসত্তায় পরিণত করতে হবে।যে কবিতায় মাটি ও মানুষের ঘ্রাণ নাই, তা পরিপূর্ণ কবিতা মনে হয় না আমার কাছে।কবিতা একটা মাধ্যম যা মানুষের ভাবাবেগকে জাগ্রত করে।

পাতা প্রকাশ : আপনার মাথায় লেখার ইমেজ কীভাবে আসে?

সোমের কৌমুদী : জীবনে পাওয়া কষ্ট, অভাববোধ, জানা সত্ত্বেও উত্তর দিতে না পারা প্রশ্নগুলোই আমার সবচেয়ে বড় সম্বল। দৈনন্দিন জীবনে ঘুরেফিরে এরা আমার জীবনে আসে, আমি আসতে দেই। এগুলোই আমাকে লিখতে তাড়িত করে।

পাতা প্রকাশ : আপনি কার লেখা বেশি পড়েন? বিশেষ কারও লেখা কি আপনাকে প্রভাবিত করে?

সোমের কৌমুদী : ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম-এর বই পড়া হয়। অনেকের লেখাই পড়া হয়। তবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, নির্মলেন্দু গুণ আর হেলাল হাফিজ-এর কবিতা এবং হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল আর ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়-এর বই আমাকে বেশি টানে।

বি…শে….ষ কারো লেখা………….. না, বিশেষ কারো লেখা আমাকে প্রভাবিত করে বলে মনে করি না। তবে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষের জীবন আমাকে অনেক প্রভাবিত করে।

পাতা প্রকাশ : আপনার সমকালীন লেখকদের কবিতা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী? কার লেখা বেশি ভালো লাগে?

সোমের কৌমুদী : সমকালীন অনেক কবি-ই ভালো কবিতা লিখছেন। তাঁদের কবিতার কাব্যরস পাঠককে ভাবনার ক্ষেত্র এনে দিচ্ছে।চিত্রকল্প,কল্পনাবোধ,পরিমিত কাব্যালঙ্কার,সময়ের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে তাঁদের সৃষ্ট কাব্য সাহিত্যের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে।বর্তমান সময়ের ওবায়েদ আকাশ, ফারুক আফিনদী’র কবিতা আমার বেশি ভালো লাগে।  

পাতা প্রকাশ : সবশেষে, লেখক হিসেবে চূড়ান্ত লক্ষ্য কী?

সোমের কৌমুদী : পাঠকের ভালোবাসা অর্জন করা, দেশ ও কালের গণ্ডি পেরিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পাঠকের মনে বেঁচে থাকা।এমন একটা পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যাওয়া যাতে মা-বাবা আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করতে পারেন।

শেয়ার করুন ..

Comments are closed.




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge