পর্ব-২
ক্লাস পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে শেষের দিকে। এ্যানি ক্লাস শেষ হওয়ার অপেক্ষা করলো না। বেরিয়ে পড়লো। বিরক্ত লাগছে। ম্যাক্রো ইকোনমিক্সের কোর্স হচ্ছে।একটা বিশেষ টপিক নিয়ে আলোচনা চলছে। টপিকটা ম্যালথুশিয়ান নামের এক ভদ্রলোকের উদ্ভব। তিনি পপুলেশন ট্র্যাপ নামের একটা ধারনা দিয়েছেন। যেই ট্র্যাপ দিয়ে বোঝা যায় জন্মহার একদম শূন্যর কোঠায় নিয়ে গেলেও একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জনসংখ্যা বাড়তে থাকবে। কী সেই কারন যেটা জন্মহার বেঁধে ফেললেও জনসংখ্যা বাড়ায়? সুতরাং দেখা যাচ্ছে টপিক হিসেবে এটা যথেষ্ট ইন্টেরেস্টিং। তবুও এ্যানির বিরক্ত লাগছে।
তবে কারন টা জানতে পারলে ভালো হতো। জাপানের সাথে তুলনামূলক বিচার করা যেত। গত চল্লিশ বছরে সেই দেশের জনসংখ্যা নাকি অর্ধেকে নেমে এসেছে। সরকারের মাথা নষ্ট। হণ্য হয়ে তারা উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। নতুন সন্তান জন্ম হলেই ভাতার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এগুলো ভাবা যায় !
এ্যানি করিডোর দিয়ে হাঁটছে। ক্লাসের জানালায় তার নিজের রিফ্লেকশন দেখা যাচ্ছে। রিফ্লেকশনে তার চেহারা কিছু আহামরি না। আজকের লিপস্টিক দেওয়াটা কড়া হয়েছে। গাঢ় লাল লিপস্টিক দেওয়াতে তাকে অদ্ভুত দেখাচ্ছে। তার ধারনা তাকে প্রস্টিটিউটের মতো লাগছে। সে জানালায় নিজের রিফ্লেকশনের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে ট্যিসু বের করলো। লিপস্টিক হালকা করতে হবে।
শেষ মুহূর্তে সে এই সিদ্ধান্ত থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলো। এখন ট্যিসু দিয়ে লিপস্টিক হালকা করা যাবে না। ঠোঁটে লেপ্টে যাবে। তখন হয়তো দেখাবে কোন রেপড হওয়া উইম্যান। একদম প্রস্টিটিউট থেকে রেপড কেস। আচ্ছা মানুষের চোখে তখন তার প্রমোশন হবে না ডিমোশন? যদি যেকোন একটা বাছাই করতে বলা এই দু’টো থেকে, তাহলে মানুষ কোনটা বাছাই করবে? খুব সম্ভবত মেয়েরা প্রস্টিটিউশন। আর ছেলেরা? রেপ? কেন তাদের জিনে কী কোন না কোন ভাবে দমন করে যৌন আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার বাসনা থাকেই সবসময়?
এ্যানি এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ফ্যাকাল্টির নিচে নেমে আসলো। বাইরে এখন রোদ উঠেছে। কুয়াশা কেটেছে। সকালের দিকে বেশ কুয়াশা ছিলো। এখন সেই যন্ত্রণা নেই। অতএব গাড়ি চালাতে ড্রাইভারের কোন সমস্যা হবে না।
এ্যানি সাদা রঙের টয়োটা গাড়ির পেছনের সিটে গিয়ে বসলো। গাড়ি চলতে শুরু করেছে। অল্প কিছুক্ষণ পরেই সে নির্দেশ দিলো গাড়ি থামাতে। বিবিএ ফ্যাকাল্টির দালানের নিচে থেকে একজন হেঁটে আসছে। মাথা নিচু করে। গাড়ির সামনে আসতেই সেই একজনকে এ্যানি নির্দেশ দিলো গাড়িতে উঠে বসতে। ছেলেটা থতমত খেয়ে গেছে। এ্যানি আবার বললো তাকে গাড়িতে উঠে বসতে। এইবার সে নিজেই দরজা খুলে দিলো। অগত্যা ছেলেটাকে গাড়িতে উঠে বসতেই হলো। এ্যানির পাশে।
গাড়ি চলতে শুরু করেছে। ছেলেটা মাথা নিচু করে বসে আছে। এ্যানির এই মুহুর্তে ভয়ঙ্কর বিরক্ত লাগছে। লিপস্টিকের কারনেই বোধহয় তার ঠোঁট ভাড়ি ভাড়ি লাগছে।
এ্যানি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো “মাথা তুলুন। আমার দিকে তাকান। দেখুন তো আমাকে প্রস্টিটিউটের মতো লাগছে কিনা?”
ছেলেটা এক মুহুর্তের জন্য যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। একটু সময়ের জন্য তাকালো তারপর আবার চোখ নামিয়ে নিলো।
“আপনি এরকমলজ্জবতী মেয়েদের মতো বসে আছেন কেন? যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার জবাব দিন। আপনি এই মুহুর্তে আমার হেফাজতে। আপনাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। সুতরাং এই মুহুর্ত থেকে আমি যা বলবো আপনি তাই করবেন। বুঝতে পেরেছেন?”
ছেলেটি এইবারও ভয় ভয় চোখে তার দিকে তাকালো অথচ কিছু বললো না। কিংবা বলতে পারলো না। ভয় পাওয়া মানুষের কিছুক্ষণের জন্য কথা বন্ধ হয়ে যায়।
“আপনাকে আপনার ইউনিভার্সিটি থেকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। এটা কী আপনার কাছে অভিনভ মনে হচ্ছে না?”
“আমার মনে হয় না আমি কিডন্যাপ হয়েছি।”
“আপনি তাহলে বোবা কানা না? তাই তো? কথা বলতে পারেন। আর বেশ স্পষ্ট করেই বলতে পারেন। যাইহোক এরকম যে কেউ খানিকটা ধমক দিলেই কী আপনিগাড়িতে উঠে বসেন নাকি?আপনার ব্যাক্তিত্ব তো দেখা যাচ্ছে খানিকটা নড়বড়ে।”
“আপনি তো অপরিচিত কেউ না।”
“আপনি আমাকে চেনেন তাহলে? সুতরাং দেখা যাচ্ছে মাই ফিজিক্যাল বিউটি ইজ কুয়াইট আই ক্যাচি।”
“কিছু মনে করবেন না। আপনি নিজেকে যতটা সুন্দরী ভাবছেন ততটা আপনি নন। আমি আপনাকে তেমন করে চিনি না। ইউনিভার্সিটিতেই কয়েকবার দেখেছি। আপনি সম্ভবত এখানকার একজন শিক্ষার্থী।”
“আপনার নামটা যেন কী? অনয় না অময়?”
“অনয়।”
“কীভাবে জানি জানতে চাইলেন না?”
“না, চাইলাম না। আশাকরি আমার চাওয়া না চাওয়াতে আপনার সমস্যা হচ্ছে না? এখন আমি নেমে যেতে চাই। দয়া করে গাড়ি থামাতে বলুন।”
“মনে হচ্ছে আপনি রেগে যাচ্ছেন। রাগলেও কিছু করার নেই। আপনি এখন গাড়ি থেকে নামতে পারবেন না। গাড়ির দরজা লক করে দেওয়া হয়েছে। আপনি কিডন্যাপড হয়েছেন।”
“এখন কোথায় নিয়ে যেতে চান আমাকে?”
“সিনেমায় দেখেননি কিডন্যাপাররা ভিকটিমদের সাথে এইসব নিয়ে কথা বলে না? সুতরাং আমি বলবো না।”
“আপনি যেই মজাটা শুরু করেছেন আমি চাই সেটা আপনি বন্ধ করুন।”
“আপনার চাওয়া না চাওয়াতে কিছু আসে যায় না।আপনিই বলেছেন। আচ্ছা আপনার এই সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে এতো ক্ষোভ কেন?”
অনয় অবাক হলো “কে বললো আমি সমাজ নিয়ে ক্ষোভের মধ্যে আছি?”
“সেদিন যে একটা বিতর্ক হলো আমি সেখানে ছিলাম। বিতর্কটা সম্ভবত ছিলো সামাজিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন নিয়ে। আপনি তো পুনর্গঠনের পক্ষে ছিলেন। তাই না?”
“এটা কী আমার প্রতি একটু অতিবিচার হয়ে যাচ্ছে না? ছোট্ট একটা বিষয় থেকে আপনি বড় সিদ্ধান্তে চলে এসেছেন।”
“তাহলে আপনি সমাজ সংস্কার চান না?”
“চাই। চাইবো না কেন ! সবাই ভালো কিছু চায়। সমাজ সংস্কার বলুন আর পুনর্গঠনই বলুন। এর ফলাফল যদি ভালো কিছু হয় তাহলে চাইবো না কেন?
“শুধুমাত্র এই কারনেই আপনাকে কিডন্যাপ করা যেতে পারে। কিডন্যাপ করে গুম করে ফেলা যেতে পারে।সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা কখনোই চাইবে না সমাজ সংস্কার হোক। কারন তারা এই গোঁজামিলের সমাজ থেকেই মহা আনন্দে মধু সংগ্রহ করছেন। আমার গাড়ি দেখে নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পারছেন আমার পরিবার সমাজের প্রতিষ্ঠিত কেউ। সুতরাং আমিও চাইবো না।”
“এইজন্যই কী আমাকে কিডন্যাপ করেছেন?”
“আপনাকে কিডন্যাপ করিনি। আমার এই মুহুর্তে কারো সঙ্গ প্রয়োজন। আমি সেই প্রয়োজন মেটাচ্ছি।”
“আপনার প্রয়োজন শেষ হলে কী আমি যেতে পারি?”
“আপনি আমার বাবাকে চেনেন? তিনি আপনার এই সো কলড সমাজের কিংবা দেশেরও বলতে পারেন একজন কর্তা পুরুষ। বড় রকমের নেতা। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত। বাবার আদর্শ মেয়ে হিসেবেও আপনাকে কিডন্যাপ করা যেতে পারে। তাই আপনি যেতে পারবেন না।”
অনয় এ্যানির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা খুব ব্যাক্তিত্বের সাথে মজা করে চলেছে। অথচ মুখ গম্ভীর। টাকা পয়সা আর ক্ষমতা থাকলে যে কেউ ইচ্ছে মতো যা খুশি করতে পারে।
অনয় মুখ নিচু করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো। কিন্তু বলতে পারলো না। এ্যানি হাত ইশারায় তাঁকে চুপ করতে বলেছে। তার ফোন বাজছে। সে ফোন কানে নিলো। ওপাশ থেকে কিছু শোনা যাচ্ছে না। যেটা শোনা যাচ্ছে সেটা এ্যানির কথা।
এ্যানি বলছে “আমি? …. আমি এই মুহুর্তে আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে আছি। তার নাম বোধহয় অনয়, না হলে অময়। নাম দিয়ে কিছু যায় আসে না। চেহারা মোটামুটি ইনোসেন্ট। গোবেচারা ধরনের। উপরের পাটির ডান পাশের দাঁতে একটা গ্যাজা দাঁত আছে। এই দাঁত থাকা মানে বুদ্ধির চিহ্ন। কিন্তু আমার ধারনা হচ্ছে এই ছেলেটা মহা গর্ধভ। আমার বোধহয় বয়ফ্রেন্ড লাক ভালো না। যাই পাওয়া যায় মানুষ হিসেবে সব রিজেক্টড।….আচ্ছা রাখছি।”
অনয় হতভম্ব হয়ে এ্যানির দিকে তাকিয়ে আছে। এ্যানি কিছুই হয়নি এমন ভাব করে সিটের পাশে ফোন রেখে দিলো।মোটামুটি অবাক গলায় বললো করলো “আশ্চর্য ! এমন করে অসভ্যের মতো তাকিয়ে আছেন কেন?”
“আপনার নিশ্চয়ই এখন আমার প্রয়োজন মিটেছে? এখন তো আমি যেতে পারি?”
“অবশ্যই পারেন না। এখন আপনি আমার ভারপ্রাপ্ত বয়ফ্রেন্ড। আপনাকে আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে।”
“জায়গাটা কোথায়?”
“জায়গাটা এই শহরের একটা প্রসিদ্ধ এলাকা। ভিআইপি এরিয়া। যেখানে আমার একটা ফ্ল্যাট আছে। আপনি আমার সাথে সেখানে যাবেন।”
“সেখানে যেতে হবে কেন? আপনি কী সত্যি সত্যিই আমাকে কিডন্যাপ করেছেন?”
“সেখানে যাচ্ছি কারন সেখানে গিয়ে আপনার সাথে কিছুটা মাস্তি করবো। আপনি মাস্তি মানে বুঝতে পারছেন তো?”
“না, বুঝতে পারছি না।”
“মাস্তি মানে হলো মজা। যদি স্পষ্ট করে বলি তাহলে বলতে হয় আপনার সাথে সেক্স করবো। আপনার কোন আপত্তি নেই তো?”
অনয় এইবার অবাক হওয়ার বদলে যেন সত্যিকারের ভয় পেয়ে গেল। চোখ গোল গোল। মুখ হাঁ। চোয়াল ঝুলে পড়েছে।
“এতো অবাক হচ্ছেন কেন? আপনি তো এখন আমার ভারপ্রাপ্ত বয়ফ্রেন্ড। সেক্স তো আপনার সাথে করাই যায়। তাই না?…. আচ্ছা দেখুন তো কড়া লিপস্টিকে আমাকে অন্যরকম লাগছে না? খানিকটা প্রস্টিটিউটের মতো লাগছে না?”
এতক্ষণ অনয় এ্যানিকে লক্ষ্য করেনি। এখন করছে। এ্যানি পরেছে নীল জিন্স আর লং ব্ল্যাক জ্যাকেট। জ্যাকেটের বোতামগুলো উপরের দিকে বুকের অংশ পর্যন্ত খোলা। তার বুকের উপরিভাগের বেশ কিছু অংশ উন্মুক্ত। মুখ লম্বাটে। যতটা বোল্ড কথা বলে দেখে ততটা বোল্ড মনে হয় না।এই মেয়েটার নিজের চেহারাও খানিকটা ইনোসেন্ট মার্কা। কোথাও যেন একটা ছেলেমানুষী ভাব লুকানো আছে।
অনয় প্রশ্নের জবাব দিলো না। আগের মতোই ভয় পাওয়া চোখে এ্যানির দিকে তাকিয়ে আছে। ভীত অবস্থা এতটা গভীর যে সে নিজের ফোনের শব্দ পর্যন্ত টের পাচ্ছে না। যখন টের পেল তখন দেখলো ফোন এ্যানির হাতে। সে খুব স্বাভাবিক ভাবে ফোন ধরেছে। ওপাশে অনয়ের মা কথা বলছে।
“হ্যালো আন্টি আমি অনুফা … ডাক নাম এ্যানি …. এই ডাক নামটা আমি নিজেই দিয়েছি … অনুফা থেকে এ্যানি …. সুন্দর না?…. হ্যাঁ অনয় আমার পাশেই আছে ….. আমি ওঁর বান্ধবী…. আমরা এক জায়গায় যাচ্ছি, তবে কোথায় যাচ্ছি সেটা আপনাকে বলা যাবে না। বললে আপনি লজ্জা পাবেন। … আচ্ছা রাখছি।”
ফোন ফেরত দিতে দিতে এ্যানি আবারো স্বাভাবিক গলায় বললো “আপনি আমার ফোন ধরেছেন আমি আপনারটা ধরেছি। শোধবোধ ! বললেন না তো আমাকে প্রস্টিটিউটের মতো লাগছে কিনা?”
এ্যানির খুব মজা লাগছে। অনয় নামের ছেলেটা চূড়ান্ত পরিমাণ বিভ্রান্ত হয়ে গেছে। কী বলবে বুঝতে পারছে না। হয়তো ভয়ও পাচ্ছে। এ্যানি গাড়ি আরো জোরে চালাতে বললো।
আগামীকাল বিকালের দিকেএকটা বিশাল গণসমাবেশ আছে। আব্বাস হুসাইনের এই মুহুর্তে দম ফেলার সময় নেই। নেতাকর্মীদের চতুর নির্দেশনা দিতে হবে। তিনি দম বন্ধ করেই স্ক্রিপ্টের লেখা ভাষণ পড়লেন। এবং প্রশ্রয়ের হাসি দিয়ে ভাষণের কপি ছিঁড়ে ফেললেন। এটা তার দুই ঘন্টার মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ভাষণের স্ক্রিপ্ট ছিঁড়ে ফেলা। তারপর পিএ’র দিকে তাকিয়ে অসম্ভব মিষ্টি গলায় বললেন “এটা কী লিখেছো ! জাহেদ তুমি কিন্তু তোমার কাজ ফাঁকি দিচ্ছো। দেশের আদর্শ নাগরিক হতে হলে প্রথমেই নিজের কাজ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।”
জাহেদ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আব্বাস হুসাইন আবার মিষ্টি গলায় বললেন “দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও ভাষণ রেডি করো।” তারপর তিনি নিজের টেবিলে রাখা বিশেষ এক বোতামে চাপ দিলেন। প্রায় সাথে সাথেই অফিস ঘরের বাইরে তার দেহরক্ষী এসে দাঁড়িয়েছে। তটস্থ ভঙ্গি। ঘরের এই কোণা থেকে ওই কোণা সব পর্যায়ক্রমে লক্ষ্য করছে। এক হাতে ওয়াকিটকি। যেটা প্রায় মুখের কাছাকাছি। আরেকহাত পকেটে। হাত রাখার ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে পকেটের ভিতর কোন অস্ত্র ধরে আছে। পান থেকে চুন খসলেই সেটা বেরিয়ে আসবে।
আব্বাস হুসাইন আবার মিষ্টি গলায় বললেন “রাজন তোমাকে এতো সতর্ক হতে হবে না। তুমি আমার দু’টো কাজ করে দিবে। প্রথমটা সব ভিজিটরদের চলে যেতে বলবে। আজ আর আমি কারো সাথে দেখা করবো না। আর দ্বিতীয়টা হলো অফিস ঘর আগামী পনের মিনিটের জন্য পুরোপুরি বন্ধ করে দিবে। লক্ষ্য রাখবে যাতে কেউ এদিকে না আসে।”
গাট্টাগোট্টা চেহারার রাজন চলে গেল। অফিস ঘর এই মুহুর্তে একদম বন্ধ। আব্বাস হুসাইন চেয়ার ছেড়ে উঠলেন। শান্ত সৌম্য চেহারার বিশাল শরীর নিয়ে তিনি জাহেদের দিকে এগিয়ে গেলেন। এবং মাছি মারার মতো জাহেদের গালে চড় বসিয়ে দিলেন।
“ছাগলের বাচ্চা ছাগল। এগুলো কী লিখছিস ভাষণে? জানিস না নির্বাচন সামনে? এখন মানুষকে উন্নয়নের কথা বলতে হবে। আশা দেখাতে হবে। আশাটাই বড়। ভাষণে এসব কোথায়? আমি লিখবো? সবকিছু আমার বলে দিতে হবে।” তার গলা থেকে আগের অসম্ভব মিষ্টি স্বর উধাও।
জাহেদ গালে হাত দিয়ে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
“যাহ্ গিয়ে এটা ঠিক কর। না হলে তোর চাকরি নাই। যথেষ্ট রাগিয়ে দিয়েছিস। আর না। দুধ কলা দিয়ে অপদার্থ পালতে পারবো না।”
জাহেদ চলে যাওয়ার পর তিনি আবার রাজনকে ডাকলেন। “রাজন তোমার আরো দু’টো কাজ করতে হবে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যারা এসেছে তাদের এখানে নিয়ে আসবে। এখনি। আর তোমাদের এ্যানি ম্যাডামের ড্রাইভারকেও এখানে আসতে বলবে। অবশ্যই সেটা ঘন্টাখানেক পর।”
“স্যার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্যরা চলে গেছেন।”
আব্বাস হুসাইন আবার মিষ্টি গলার মুখোশ পরে নিয়েছেন “চলে গেছেন মানে?”
“আমি তাদের চলে যেতে বলেছি। আপনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন ভিজিটরদের চলে যেতে বলি। আজ আপনি কারো সাথে দেখা করতে পারবেন না।”
“রাজন তোমার সাথে কিছু কথা আছে। তুমি দরজা বন্ধ করে এদিকে আসো। আর কাউকে একটা বলে দাও যেন আগামী পনের মিনিট এই ঘরের কাছাকাছি কেউ না আসে।”
আব্বাস হুসাইন বন্ধ ঘরে আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করলেন। তবে তিনি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছেন চড় খেয়েও রাজনের নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে। যেন কিছুই হয়নি।
“তুই যেভাবেই পারিস ব্যবসায়ীদের এখানে নিয়ে আয়। হাতে পায়ে ধরেই হোক কিংবা যেভাবেই হোক। না হলে তোর চাকরি নাই। নির্বাচন সামনে। দলের এখন ক্যাপিটাল ক্রাইসিস। যাহ্, ঝটপট কর।”
ড্রাইভার কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আব্বাস হুসাইন মিষ্টি গলায় বললেন “তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো, আমার সামনে বসো।”
ড্রাইভার তবুও নড়ছে না। একইরকম মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আব্বাস হুসাইন একটা দৃষ্টান্ত স্থাপনের মতো কাজ করলেন। উঠে গিয়ে নিজে দায়িত্ব নিয়ে ড্রাইভারকে চেয়ারে বসালেন।
স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু গলায় বলতে শুরু করলেন “এটা গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র। এখানে সবার অধিকার সমান। তুমি ড্রাইভার বলেই যে তোমার অধিকার কম হয়ে যাবে এটা কখনো ভাববে না।”
ড্রাইভার ইতস্তত করে বললো “জ্বী আচ্ছা স্যার।”
“তুমি কী ভয় পাচ্ছো? তোমার এখানে ভয় পাবার কারন নেই। আমার কাজ মানুষের ভয় দিয়ে নয়। ভালোবাসা দিয়ে।”
“ভয় পাচ্ছি না স্যার।”
“তোমার এই চাকরি কেমন লাগছে? তুমি কী জানো তোমার এ্যানি ম্যাডামের বিশেষ অনুরোধে তোমাকে চাকরি দেওয়া হয়েছে?”
“আমি এটা জানি স্যার।”
“তুমি কী আগে সত্যিই ছিনতাইকারী ছিলে?”
ড্রাইভার চুপ করে বসে আছে। কথা বলছে না। আব্বাস হুসাইনের দিকে তাকাচ্ছেও না।
“তোমার এ্যানি ম্যাডামের পার্স ছিনতাই না করলে বোধহয় তুমি এই চাকরি পেতে না। মাঝে মাঝে খারাপ কিছু থেকেও ভালো কিছু হয়ে যায়। তাই না?”
ড্রাইভার এইবারও চুপ। কিন্তু আব্বাস হুসাইন পুনরায় গলায় আওয়াজ তুলে বলতে শুরু করলেন “যাক সেসব কথা। আমার মেয়েটাও হয়েছে আমার মতো জনদরদী। তাতে কোন সন্দেহ নাই।”
“খানিকটা সন্দেহ আছে স্যার।”
আব্বাস হুসাইনের বিরিয়ানি খেতে গিয়ে এলাচে কামড় পড়ে গেল। তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন “সন্দেহ আছে মানে?”
“স্যার কিছু মনে করবেন না। আপনি ঠিক জনদরদী না। আপনি জনদরদীর একটা মুখোশ নিয়ে থাকেন। এ্যানি ম্যাডামের মধ্যে মুখোশ ব্যাপারটা নেই।”
“তোমার নামটা যেন কী বললে?”
“স্যার আমি আমার নাম আপনাকে বলিনি। কারন আপনি জিজ্ঞেস করেননি আর আমিও নাম বলার সুযোগ পাইনি।”
আব্বাস হুসাইন মিষ্টি গলায় কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এর আগেই তার পিএ এসে জানালো ব্যাবসায়ীরা তার জন্য অপেক্ষা করছে। সুতরাং তিনি কথা ঘুরিয়ে বললেন “তোমার সাথে এসব নিয়ে পরে কথা হবে। এখন যেই জন্য ডাকা। তোমার এ্যানি ম্যাডাম কোথায়?”
“বলতে পারবো না স্যার।”
আব্বাস হুসাইন হেসে হেসে মিষ্টি গলায় বললেন “বলতে পারবে না কেন? তুমি আজকের জন্য এনাফ উদ্ধত কথা বলে ফেলেছো। আমি দিনে একবারের বেশি উদ্ধত কথা পছন্দ করি না। সুতরাং ঝেড়ে কাশো প্লিস।”
“স্যার আমার পক্ষে ঝেড়ে কাশা সম্ভব না। কারন ম্যাডাম নিজে ড্রাইভ করে একজায়গায় গিয়েছেন।”
“সেই এক জায়গাটা কোথায়?”
“বলতে পারবো না। তবে একটা ফ্ল্যাটের কথা বলছিলেন।”
“ফ্ল্যাটটা কোথায়?”
“এতো বিস্তারিত তো বলতে পারবো না স্যার। তবে তিনি তার এক বন্ধুকে বলছিলেন ফ্ল্যাটে গিয়ে মাস্তি করার কথা। তারপর আমাকে নামিয়ে দিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে চলে গেলেন।”
“তার বন্ধু কী তখন সাথেই ছিলো? তুমি তার নাম জানো?”
“হ্যাঁ সাথেই ছিলো। কিন্তু নাম বলতে পারবো না।”
আব্বাস হুসাইন অন্যমনস্ক ভাবে বললেন “ওহ্। তুমি এখন যেতে পারো। শোন… তোমার নামটা যেন কী?”
“স্যার আমার নাম রগ কাটা ছামছু। যখন ছিনতাই করতাম তখন এই নাম ছিলো। ছিনতাইয়ের সুবিধার জন্য মানুষের রগ কেটে দিতাম। তবে ম্যাডাম এখন আমার নাম দিয়েছেন স্যাম।”
“তোমার ভাষা শুনে কিন্তু মনে হয় না তুমি ছিনতাইকারী ছিলে।”
“স্যার আমি শিক্ষিত ছিনতাইকারী। বইপড়ুয়া ছিনতাইকারী। তাই ভাষা মার্জিত। অশিক্ষিতনেতাকর্মী, অশিক্ষিত ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারলে শিক্ষিত ছিনতাইকারীও হওয়া যায়।”
“ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারও অশিক্ষিত হয় নাকি?”
“অবশ্যই হয়। যে রবীন্দ্র নজরুল পড়েনি তাকে আমি শিক্ষিত বলতে পারিনা।”
“তুমি বলতে না পারলেও তারা শিক্ষিত।শুধুমাত্র রবীন্দ্র নজরুলের মধ্যে শিক্ষাটাকে সীমাবদ্ধ করে রাখা উচিত না। তার মানে এটা ভেবো না যে আমি রবীন্দ্র নজরুল পড়িনি। বেশ ভালো করেই পড়েছি।থাক সেসব কথা। ছামছু তুমি এখন যেতে পারো।”
“স্যার আপনি কিন্তু আমাকে স্যাম ডাকলেন না। সুতরাং এখান থেকেও বোঝা যায় আপনার সাথে আপনার মেয়ের কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে।”
আব্বাস হুসাইন আবারো মিষ্টি গলায় বললেন “ছামছু তুমি এখন যাও। আমার একটা জরুরি মিটিং আছে।”
রগ কাটা ছামছু কিংবা শুধু ছামছু কিংবা স্যাম এইবার আব্বাস হুসাইনের মিষ্টি গলা নকল করে বললো ” স্যার আমি কী দরজা বন্ধ করে পনের মিনিট এখানে কাউকে না আসার কথা বলে আসবো?”
“মানে? কী বলতে চাও তুমি?”
“স্যার আপনি বোধহয় আমাকে চাকরি নাই হয়ে যাওয়ার ফাঁকা হুমকি দিতে চান।”
“ফাঁকা হুমকি কেন মনে হচ্ছে তোমার?”
“ফাঁকা হুমকি মনে হচ্ছে কারন আমার মনে হয় না আপনি আপনার পিএ, সিকিউরিটি হেড কিংবা ড্রাইভারদের চাকরি ছাড়িয়ে দিবেন। এতে আপনার অনেকগুলো গোপন তথ্য বেফাঁস হয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে থাকবে। এই ঝুঁকি নেওয়ার মতো বোকা আপনি নন।”
আব্বাস হুসাইন উঠে ড্রাইভারের কাছে আসলেন। ড্রাইভারের এক কাঁধে হাত রেখে বললেন “তুমি বেশ বুদ্ধিমান ছামছু। বেশ বুদ্ধিমান। আমার মনে হয় তোমার বুদ্ধি রাজনীতিতে কাজে লাগানো উচিত।”
ড্রাইভার ছামছু কিংবা স্যাম মাথা ঘুরিয়ে আব্বাস হুসাইনের দিকে তাকালো। ভদ্রলোক আব্বাস সাহেব নিজেও বোধহয় জানেন না তার চোখ চকচক করছে। অতি মূল্যবান বস্তু হঠাৎ কুড়িয়ে পেয়ে গেলে যেমন হয়। ঠিক তেমন। তিনি চোখের চাকচিক্য লুকানোর চেষ্টা করলেন না।
ফ্ল্যাটের আকৃতি রাজকীয় ধরনের। মাঝখানের পার্টিশন গুলো কোনভাবে উঠিয়ে ফেললে মাঝারি সাইজের ফুটবল মাঠ হয়ে যাবে। অনয় মনোযোগ দিয়ে ফ্ল্যাটের গঠন লক্ষ্য করছে। বসেছে ড্রয়িংরুম, সম্ভবত ড্রয়িংরুমের সোফায়ই হবে। সম্ভবত বলা হচ্ছে কারন ফ্ল্যাটের পুরো অংশ ঘুরে দেখার সুযোগ হয়নি। এ্যানি এখানে এসেই উধাও হয়ে গেছে। এটা কিছুটা স্বস্তির।
ড্রয়িংরুমের চারদিকে বিস্কিট চিপসের প্যাকেট ছাড়ানো। অনেকগুলো। এদিক সেদিক বইপত্র ছড়িয়ে আছে। এলোমেলোভাবে। চারদিকে দামি দামি সব কারুকার্যের আসবাবপত্র। সবকিছুর মধ্যে একটা আভিজাত্যের ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে।
দেয়ালের একদিকে ভ্যান গগের স্টারি নাইটের ছবি ঝুলানো।সাইজে বিশাল। ছবির অবস্থান অনয়ের কাছ থেকে বেশ দূরে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ফ্ল্যাটের ভিতর একটা মৃদু অন্ধকার অন্ধকার ভাব ছড়িয়ে আছে। সন্ধ্যা হওয়ার আগে বিকেলের শেষ ভাগে যেমন থাকে। অথচ স্টারি নাইটের ছবিটা যথেষ্ট উজ্জ্বল। কেন? ফরফরাস পেইন্টিং করা? যেই পেইন্টিং আলো শুষে নিয়ে অন্ধকারে অল্প অল্প করে জ্বলে?
এ্যানি পাশের রুম থেকে বেরিয়ে আসছে। এখন তার চালচলনে কিছু অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ছে। কেন? হাঁটাচলা তো বেশ স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। না, সমস্যা হাঁটাচলায় না। সে পোশাক পরিবর্তন করেছে। জিন্স একই আছে কিন্তু উপরের লং ব্ল্যাক জ্যাকেটের বদলে পরেছে হুয়াইট টিশার্ট। ঠোঁটের কড়া লিপস্টিক নেই। এটা কী তার ঘরোয়া পোশাক? বাহ্ বেশ আধুনিক তো !
এ্যানি সোফার কাছাকাছি, একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো। সময় যেন থমকে গেল অনয়ের। বুকের ধকধক বাড়ছে। কোথাও কিছু একটা অস্বাভাবিক হচ্ছে। অনয়আরো গুটিসুটি মেরে গেছে। মেয়েটা হয়তো মজা করছে। মজা করেই কথাগুলো বলেছে কিন্তু তবুও অনয়ের অস্বস্তি হচ্ছে।
“অনয় আপনি রেডি তো?”
অনয় আতঙ্কিত গলায় বললো “কীসের রেডি?”কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বেরলো না। শব্দ বাকযন্ত্রের কোথাও আটকে বসে আছে। ছোটাছুটির কোন সম্ভাবনা নেই।
অনয় জানে সে মোটামুটি ব্যাক্তিত্বহীন একজন মানুষ। নিজের মতামত, নিজের দাবী এমনকি নিজের ইচ্ছাও ওইরকম ভাবে জানানোর ক্ষমতা নেই। সে নিজের উপর অনেক বিরক্ত হলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো এবং আরো গুটিয়ে গেল।
এ্যানি হেসে ফেলে বললো “আপনি এরকম ভিতু সেটা জানা ছিলো না। যাইহোক আপনাকে এখানে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য ভিন্ন।”
এ্যানির আশ্বাস ফাঁকা নয়। ফ্ল্যাটের অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।দেখা যাচ্ছে ফ্ল্যাটে তারা একাকী না। একটা দল পাশের রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। দশ বারো জনের ছোট দল। বিভিন্ন বয়সী। সবচেয়ে বড় বয়সী যিনি তার বয়স অনুমানে ত্রিশের একটু বেশি। তবে বেশিরভাগই অনয়দের সমবয়সী।
এখন খুব সম্ভবত নাটকীয় কিছু ঘটনা হতে চলেছে। অনুমান করা যাচ্ছে। এ্যানি দ্রুত গুটিয়ে যাওয়া অনয়ের কাছ থেকে দূরে সরে গেল। কাছে আসলো আরেকজন। বয়স খুব সম্ভবত সাতাশ আটাশ।
তিনি অনয়ের দিকে হ্যান্ডশেকের হাত বাড়িয়ে দিলো “আমি গৌতম। আর তুমি নিশ্চয়ই অনয়? ভালো আছো তো অনয়?”
অনয় ভয় পাওয়া গলায় বললো “আমাকে নিয়ে কী করবেন? আমাকে সত্যিই কিডন্যাপ করা হয়েছে? আপনারা কী চান?”
গৌতম হেঁসে ফেললো। সাথে ফ্ল্যাটের সবাই। সে এ্যানির দিকে তাকিয়ে বললো “কী বলেছো ওঁকে? এখানে কিডন্যাপের কথা আসছে কেন?”
এ্যানি জবাব দিলো না। দু’হাতে নিজের চুল ঠিক করে সেই ভ্যান গগের স্টারি নাইটের ছবির দিকে চলে গেল। অনয় অবাক হয়ে দেখলো এটা কোন ফরফরাস পেইন্টিং না। বড় একটা স্ক্রিন। যেটা টাচ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেখানে অনয়ের ছবি ভেসে উঠেছে। সাথে তার সমস্ত তথ্য। অনয়ের প্রথমেই মনে হলো এঁরা সবাই কারা? কেন তার তথ্য, এমনকি অতি নগন্য তথ্যও এখানে দেখা যাচ্ছে? সে কী সত্যিই কিডন্যাপ হয়েছে? নাকি আরো বড় কিছু?
এ্যানি স্ক্রিনের সামনে দাঁড়িয়ে একদম গম্ভীর গলায় বললো “এভরিওয়ান প্লিস টেক ইয়োর সিট। এন্ড মিট আওয়ার নিউ গ্রুপ মেম্বার মিস্টার অনয়।” তারপর কিছুটা থেমে থেমে বললো “অনয় … প্লিস লিসেন্ট টু মি ভেরি কেয়ারফুলি। ফ্রম নাউ উই আর গোন্ না ডিল উইথ সাম সিরিয়াস ম্যাটার।”
চারপাশে একটা নাটকের দৃশ্য অবতারণা হয়েছে। সবাই চুপচাপ। এ্যানির দিকে তাকিয়ে আছে। এ্যানি স্ক্রিনের কাছ থেকে হেঁটে আসতে আসতে বলতে লাগলো “আমরা সবাই একটা দল। একটা বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য একসাথে হয়েছি। উদ্দেশ্যেটা খুব পবিত্র। আমরা একটা পরিবর্তন চাই। বেশি কিছু না শুধু পরিবর্তন। আমরা চাই এমন একটা সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে আমরা আরো শান্তিতে বাঁচতে পারবো। ডেমোক্রেসির মোড়কে যেই টোটাল আইডেমোক্র্যাটিক ধারনা চলছে এবং চলে আসছে আমরা সেটা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতে চাই। আমরা গুঁড়িয়ে দিতে চাই পুরো সোশাল সিস্টেমকে। কারন আমরা বুঝতে পেরেছি এই সিস্টেমের মধ্যে থেকে না বেরিয়ে গোটা সিস্টেম পরিবর্তন সম্ভব না। ঠিক এই সময়ে এসে আমাদের একজন নতুন সদস্য যুক্ত হয়েছে … অনয়।” এ্যানি অনয়ের কাঁধে হাত রেখে শেষের কথাগুলো বললো।
অনয় নড়েচড়ে বসলো। সে বুঝতে পারছে পরিস্থিতি দ্রুত হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এখন কিছু বলতেই হবে। “আমি নতুন সদস্য হতে চাই না।”
“কেন? আপনি না বলেছিলেন আপনি এই সমাজের পরিবর্তন চান?”
“হ্যাঁ বলেছিলাম। কিন্তু তারমানে এই নয় যে আত্মঘাতী একটা দলের সদস্য হয়ে যাবো। আবার এটাও নয় যে এতদিন ধরে চলে আসা গোটা সিস্টেম নষ্ট করে ফেলবো।”
“আমরা আত্মঘাতী দল?”
অনয় তীব্র গলায় বললো “শুধু আত্মঘাতী না, পথভ্রষ্টও।”
ছোট দলের মাঝে একটা চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। সবাই অনয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে উত্তেজনা।
দলের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য, যার বয়স আনুমানিক ত্রিশের একটু বেশি তিনি উঠে দাঁড়ালেন। অনয়ের কাছে আসলেন। তার দিকে তাকিয়ে বললেন “অনয় প্যানিক করার কিছু হয়নি।” তারপর তিনি ফ্ল্যাটের চাবি নিয়ে অনয়ের হাতে দিয়ে দিলেন। “এখন তুমি চাইলেই যেকোন সময় এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারো। কিন্তু আমাদের বিষয়ে কাউকে জানাতে পারবে না।আমাদের কাজ খুব গুপ্ত ব্যাপার। অন্তত আমাদের মোটিভ এ্যাচিভ হওয়ার আগ পর্যন্ত।”
শেষের কথাগুলো খুব তাৎপর্যপূর্ণ। অনয় বুঝতে পারছিলো। কেননা কথাগুলোর মধ্যে একটা বিশেষ ধরনের আত্মবিশ্বাসের জোর আছে। দলের ওই সদস্য কথাগুলো বলে চুপ করে তাকিয়ে আছে অনয়ের দিকে। সাথে বাকি সবাই। অনয়ের জবাবের জন্য।
এই তাকিয়ে থাকা অনয়ের মধ্যে অদৃশ্য মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করছে। অনয় বুঝতে পারলো তারা একটা পারফেক্ট টিম। তাদের উদ্দেশ্য আত্মঘাতী নাহলে কিংবা পথভ্রষ্ট নাহলে শুধুমাত্র একক টিম হিসেবে তারা অসাধারণ হতো।
অনয় জবাব দিলো না। তার ইচ্ছে করছে এই নাটকের শেষটা দেখা। এই মুহূর্তে গৌতম এগিয়ে আসলো। দলের অন্য সদস্যের দিক তাকিয়ে বললো “আরিফ ভাই এটা কোন সমাধান না। অনয় আমাদের খারাপ ভাবছে। আত্মঘাতী, পথভ্রষ্ট ভাবছে। হয়তো টেররিস্টও ভাবছে মনে মনে। আমাদের প্রধান দায়িত্ব ওঁর চিন্তাধারা পরিবর্তন করা। এভাবে ওঁকে চলে যেতে দেওয়া যায় না।”
আরিফ পিছন ফিরে নিজের জায়গায় গিয়ে বসলেন। গৌতম দাঁড়িয়ে ছিলো। এইবার এসে অনয়ের পাশে বসলো। অনয়ের নিজেকে 3x এর 3 এর মতো কনস্ট্যান্ট মনে হচ্ছে। আর বাকি সবাই x এর মতো ভেরিয়েবল। যেকেউ যেন x এর মান ধারন করে অনয়ের কাছে বসছে। এবং বাকি সবাই নিজের জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে।
দলের বাকি সদস্যরাও যে যার জায়গায় বসে আছে। শুধুমাত্র এ্যানি বড় স্ক্রিনের কাছ টায় দাঁড়িয়ে আছে। হাত দিয়ে কপালের কাছে চুল নাড়াচাড়া করছে। মেয়েটার চুল বেশি বড় না। মাঝারি মাপের। কাঁধ পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। দলের আরেকজন সদস্য, নাম ঋতু। সে অনয়ের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। কী চলছে কী এসব? আশ্চর্য !
গৌতম খুব ঠান্ডা গলায় বলতে শুরু করলেন “তোমার চিন্তাধারা খুব গতানুগতিক। আমরা এই সমাজের পরিবর্তন চাই। সাথে তোমাদের মতো অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদেরও।”
অনয় খুব শান্ত গলায় বললো “আমি শুনতে চাই না। আপনারা নিশ্চয়ই আমার ব্রেইন ওয়াশ করতে চান। ডাইভার্ট করতে চান। আমি এসব চাই না। প্লিস আমাকে যেতে দিন। আমি চলে যেতে চাই।”
“তুমি নিশ্চয়ই চলে যাবে। তার আগে আমাদের কথা শুনে যাও। আমাদের মটো সম্পর্কে একটু জানো।”
“আমি জানতে চাই না। আমার অবশ্যই নিজের অধিকার জানানোর ক্ষমতা আছে?”
“তুমি অযথা প্যানিক করছো।”
“আমাকে মুক্ত করে দিন।”
“জানো তো এটাই আমাদের বড় সমস্যার জায়গা। তোমার হাতে ফ্ল্যাটের চাবি। তুমি চাইলে যেকোন সময় চলে যেতে পারো। কিন্তু এখান থেকে চলে যাওয়াই কী তোমার মুক্তি? আমাদের এই কথিত মুক্তিও সমাজের এলিমেন্টস দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং সমাজের ভিতরে কোন মানুষ মুক্ত না। কোন সামাজিক মানুষ সম্পূর্ণ গনতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে না। আর যদি সেই সমাজ পঁচা গলা হয় তো কথাই নেই !”
“এইজন্যেই কী আপনারা এইব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চান?”
“পুরোপুরি ভেঙ্গে দিতে চাই না। নতুন করে তৈরি করতে চাই। উই ওয়ান্ট টু রিক্রিয়েট দ্যা হোল সোসাইটি।”
“এই বারোজন টিম মেম্বার নিয়ে?”
“দলের জনসংখ্যা দেখে কী কার্যকারিতার ধারনা করা যায়? পৃথিবীর অনেক সফল আন্দোলন কিন্তু মাত্র কয়েকজনের দল নিয়ে শুরু হয়েছিল।”
অনয় বুঝতে পারছিলো তার মুখচোরা স্বভাব ফুঁড়ে একটা অন্যমানুষ বেরিয়ে আসছে। সে খুব ভেবেচিন্তে বলতে শুরু করলো, যদিও এগুলো বলতে তার মোটেও ইচ্ছে করছিলো না। “আপনাদের এটা আন্দোলন হোক আর যাই হোক সেটা সফল হবে না।”
“কেন সফল হবে না?”
অনয় এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললো “এই যে আপনারা যেই সিস্টেমের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাচ্ছেন …. বিশ্বাস করুন এটা দাঁড়ানো দূরে থাকুক আপনারা ঘাড় পর্যন্ত উঁচু করতে পারবেন না। কারন এটা বহুবছর ধরে তৈরি হওয়া একটা ব্যবস্থা। বহু মানুষ নিজেদের স্বার্থের জন্য এই ব্যবস্থার একদম সরাসরি রক্ষক। এটা রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব না। যদি করতে চান তাহলে তারাই আপনাকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে। বিপদ কেউ পুষে রাতে চায় না। তাছাড়াও যেকোন আন্দোলনের একদম গোড়ার দিকের শক্তি হলো জনগণ। আপনারা কীভাবে ভেবে নিচ্ছেন এইসব আইডিওলজি জনগণ আন্দোলনের প্রথমদিন থেকে বিশ্বাস করতে শুরু করবে?”
গৌতম এইবার উত্তেজিত হয়ে উঠলো। একবার দাঁড়িয়ে তারপর আবার বসে পড়ে বাঁ হাতের তালুতে ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে কিছু একটা বুঝিয়ে বলার মতো করে বললো “ঠিক এটাই। অনয়…. ঠিক এটাই, আমাদের সামষ্টিক আইডিওলজির জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। আর সেটা আমরা শুরুও করে দিয়েছি।”
“কীভাবে শুরু করেছেন?”
“আমাদের দলের সদস্যরা জোন ভাগ করে নিয়েছি। আমরা সবাই নিজেদের জোনে গিয়ে মানুষদের আদর্শিক জায়গা পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি। মানুষদের বোঝাচ্ছি। জানি এই বিশাল স্ট্রাকচারাল সিস্টেমের বিপক্ষে এটা একটা ক্ষুদ্র কাজ তবুও আমরা করছি।”
“আপনারা ভাবছেন এটাই যথেষ্ঠ? দু’চারটা অঞ্চলের মানুষদের আদর্শিক পরিবর্তন মানে সমগ্র দেশের মানুষের পরিবর্তন? তাছাড়াও আপনারা নিজেদের যেই সিস্টেমের বাইরের মানুষ দাবি করছেন, আপনাদের কী মনে হয় সিস্টেমের রক্ষকরা জানে না আপনারা কী করতে চলেছেন? সবকিছু এত সহজ? আর তাছাড়াও….”
অনয় “আর তাছাড়াও” দিয়ে শুরু করা বাক্য আর শেষ করলো না। তবে দেখলো সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। অথচ এ্যানি আগের মতোই চুল নাড়াচ্ছে আপনমনে। তার যেন এদিকে কোন খেয়ালই নেই।
গৌতম বললো “যেটা বলতে চাইছিলে, বলে ফেল।”
অনয় এক মুহুর্ত ভেবে নিয়ে নিজের মুখচোরা স্বভাবের একদম বিপরীত দিক উন্মোচন করে বললো “তাছাড়াও আমার মনে হয় না এই তথাকথিত আন্দোলন দীর্ঘদিন চলবে।”
“কেন মনে হয় না?”
এইবার সরাসরি এ্যানির দিকে তাকিয়ে বললো “কারন বেশি স্বাচ্ছন্দে, আভিজাত্যের মাঝে থাকলে মানুষের ভুতে ধরার মতো রোগ হয়। এই ভুতে ধরা রোগ তো গ্রিক সাম্রাজ্য থেকেই চলে আসছে। মেলানকোলিয়া। অতি আভিজাত্যের কারনে তৈরি হয় এটা। তখন তারা এই আভিজাত্য থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করে। আমার ধারনা এই রোগটা কেটে গেলেই এখানকার সবাই পৃথিবীর পরিবর্তন, সমাজ পরিবর্তন অবাস্তব চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসবে।”
এ্যানি এইবারও কিছু বললো না। যেন কিছু শুনতেই পেল না। অনয় বলতে থাকলো “আমার ধারনা উনাদের অবস্থা… মানে আর্থিক অবস্থার কথা বলছিলাম। সেটা একটু নড়বড়ে হলে হয়তো এইসব ইউটোপিয়ান চিন্তাধারা আসতো না। কারন তখন মূল চিন্তাভাবনায় থাকতো শুধুমাত্র খাদ্যসংস্থান।”
কথাটার কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। গৌতম অনয়ের পাশে বসে আছে। মুখ হাসিখুশি। সে মনে হয় যেকোন কথা হজম করে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু এ্যানি হেঁটে হেঁটে অনয়ের কাছে এসে দাঁড়ালো।তার কথা হজম করার ক্ষমতা বোধহয় গৌতমের মতো অতটা কঠিন না।
এ্যানি গম্ভীর হয়ে দাঁড়ালো। হাত দিয়ে পিছনের চুলগুলো বেঁধে নিলো। তারপর অনয়ের দিকে তাকিয়ে বললো “আপনি এখন চলে যেতে পারেন। আপনাকে কিডন্যাপ করা হয়নি।” তারপর পিছন ফিরে সকলের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে বললো “মিস্টার অনয় আমাদের দলের সদস্য হতে পারবেন না। সত্যি বলতে তিনি সেটা হতে চান না। কারন তিনি ভিতু। ভিতুর চেয়ে বড় ব্যাপার হলো তিনি কাপুরুষ। ভিতুরা পারলেও একজন কাপুরুষ ধরনের মানুষ কখনো সমাজ পরিবর্তন করতে পারে না। নিজের ভিতু স্বত্তা ঢাকার জন্য তিনি অযথা আমাদের দোষ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমাদের পথভ্রষ্ট, আত্মঘাতী বলে দেখানোর চেষ্টা করছেন। এটা কাপুরুষেরা ছাড়া কেউ করে না।”
অনয় উঠে দাঁড়িয়েছে। তার হাতে ফ্ল্যাটের চাবি। সে দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করেছে। এ্যানি হাঁটতে থাকা অনয়ের উদ্দেশ্যে বললো “আমার বাবা কে জানেন? একজন রাজনৈতিক নেতা। আব্বাস হুসাইন। আমি উনার একমাত্র মেয়ে হয়েও এই আন্দোলনের সাথে জড়িত হয়েছি। কেন জানেন? এটার কারন কিন্তু আপনার ওই ভুতে ধরা রোগ মেলানকোলিয়ার জন্য না। এটার কারন আমি সামাজিক সংস্কার চাই। এর মানে বুঝতে পারছেন তো? আমি আমার বাবার সরাসরি প্রতিপক্ষ। আমার বাবা এই সিস্টেমের ধারক। আমি কিনা তারই বিপক্ষে এসে দাঁড়িয়েছি। অথচ এখানে কিন্তু আপনার মতো মনগড়া যুক্তি দেওয়ার কথা ছিলো আমার। কিন্তু দিইনি। কারন আমি আপনার মতো কাপুরুষ নই।” তারপর এক গভীর শ্বাস নিয়ে বললো “আমাদের এই আন্দোলন বেশ দীর্ঘদিনের। আমাদের সমাজ পরিবর্তন করার চিন্তাধারা আপনার যতটা অবাস্তবই মনে হোক না কেন, যতটা হঠকারী চিন্তাভাবনাই মনে হোক না কেন…. আমাদের বেশ গুছানো একটা পরিকল্পনা আছে। এবং আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবোই।”
অনয় দাঁড়িয়ে পড়লো। পিছন ফিরে তাকালো। “আপনাদের এই পরিকল্পনাটি কী জানতে পারি?”
“অবশ্যই না।”
অনয় দরজার কাছ থেকে এগিয়ে আসলো। সোফার যে জায়গায় বসে ছিল সেখানে পুনরায় গিয়ে বসে পড়লো। ফ্ল্যাটের চাবি পাশে বসে থাকা গৌতমের হাতে দিয়ে বললো “আমি যে কাপুরুষ নই সেটা প্রমাণ করতে চাই। তবে এটার মানে এই নয় যে আমি আপনাদের দলের যেকোন সিদ্ধান্ত চোখবুঁজে পালন করে যাবো।”
পুরো ফ্ল্যাটে একটা চাপা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়লো যেন। অনয় বুঝতে পারছে না, সে এতটাই কেন গুরুত্বপূর্ণ এদের কাছে ! কেন? তার দৃষ্টিভঙ্গি তো এদের সবার সাথে মেলে না। তবে কেন সে এতটা গুরুত্বপূর্ণ? নাকি অন্য কোন কারন আছে? এই অন্যকোন কারনটা জানার জন্য হলেও তার এই দলের সাথে থাকা চাই।
এ্যানিএইবার হাত দিয়ে পিছনের বাঁধা চুলগুলো খুলে ফেললো। এরপর কিছুই হয়নি এমন ভাব করে ভ্যান গগের স্টারি নাইটের ছবি দৃশ্যমান স্ক্রিনের দিকে চলে গেল। পরিকল্পনার মূল ধাপে এখন যাওয়া যেতে পারে। অনয় খানিকটা উত্তেজনা, খানিকটা উদ্বেগ নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।
Leave a Reply