১. শিকড়
যতদূর যাই তবু ফিরতেই হয়,
শিকড়কে ভুলে যেতে হয়না।
জীবনের চড়াই-উতরাই সবকিছু
একটা সময় স্থির হয়ে আসে।
তখন উড়ন্ত ঘুড়িটা ফের আসে
তার লাটাইয়ের কাছে চুপচাপ।
চোখ বন্ধ করলেই অন্ধ হয়না কেউ,
তুমি না দেখলেও সবাই তোমায় দেখে।
তোমার শিকড় তোমাকে ডাকবেই,
একদিন ফিরে আসার জন্যই।
তারপর কোনো এক সূর্যোদয়ে,
লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে তুমি
ফিরে আসবেই তোমার শিকড়ে।।২. শৈশব
সেদিনও বৃষ্টি ছিলো এমনই,
ঝুম বৃষ্টিতে চারিদিক একাকার।
বাসার সামনের খেলার মাঠটা
এক কোমড় বৃষ্টিতে ছয়লাপ।
আমি ছোট্ট বালক তখন,
সেই শৈশব ছিলো দুরন্ত, দুর্বার।
কাগজের নৌকা বানিয়েছিলাম,
আস্তে করে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম।
পানির তোড়ে ভেসে যাচ্ছিলো নৌকা,
যাচ্ছে তো যাচ্ছেই, ভেসেই যাচ্ছে।
ফেরেনি কাগজের নৌকাটা আর,
ভেসে চলে গিয়েছিলো দূর থেকে দূরে।
সেদিন বুঝতে পারিনি আমি,
নৌকার সাথে ভেসে গিয়েছিলো শৈশব আমার।৩. হিসেব
হিসেবটা বোধহয় বাকী অনেকটাই
অনেক পুরাতন সেসব দেনাপাওনা।
যা দিয়েছো যা নিয়েছো, মনে আছেতো?
হৃদয়ের কতোটা ছেড়েছো বা রেখেছো,
মনে থাকলে নিরীক্ষাটা সহজ হবে এখন,
যদি না তোমার মনের স্রোতে বালু না জমে।
ভুলে গিয়ে থাকলেও সমস্যা হবে না,
সব কিছু মনে আছে আমার পাই টু পাই।
এবার চলে এসো আলোচনার টেবিলে
কফি খেতে খেতে হিসেবটা সেরে ফেলি।৪. রূপান্তর
যুদ্ধটা অধিকার আদায়ের জন্যই,
সেটা বলিভিয়া কিংবা ফিলিস্তিন,
অথবা ভিয়েতনামের জঙ্গলে হলেও।
শোষিতেরা যুদ্ধে নামে অসীম সাহসে,
প্রতিপক্ষ প্রবল পরাক্রমশালী শোষক।
তবুও যুদ্ধে হেরে যায় শোষকের বাচ্চারা,
জিতে যায় আপামর শোষিতের দল।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যুগে যুগে এটাই ঘটে,
কিন্তু তারপর শোষক সুযোগ খোঁজে
শোষিতের লোভী হওয়ার কালের জন্য।
সেটা আসে একসময়, আসতেই হয়,
শোষিত হঠাৎ শোষকে রূপান্তরিত হয়।
আর তারপর বাড়তে থাকে শোষিতের দল,
আরেকটা যুদ্ধ তখন অনিবার্য হয়ে পড়ে।৫. অস্তিত্ব
ভোররাতে এসেছিলো তারা
মধ্য আগস্টে বুটের শব্দ তুলে।
পরিচয়হীন করে দিতে চেয়েছিলো
গোটা জাতিকে, তাদের পিতা হত্যা করে।
আস্ফালনে কন্ঠ রুদ্ধ করে দিতে চেয়ে
নিজেরাই বোবা হয়ে গেলো।
অবশেষে তারা বুঝেও গেলো,
জীবিতের চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু
ঢেরবেশী শক্তিশালী।৬. যাচ্ছি মিশে স্রোতে
করছি আমি, করছো তুমি,
যাচ্ছি মিশে স্রোতে।
পাচ্ছি খালি, চাচ্ছি খালি,
অনেক ধনী হোতে।
রুচির আকাল, হচ্ছি নাকাল,
করছি পাচার টাকা।
বলছি ও ভাই যাচ্ছি দুবাই,
গেলাম ছেড়ে ঢাকা।
সেখান থেকে বেগমপাড়ায়
উড়াল দিমু চাচা,
দেশের জন্য প্রেমের অভাব,
নাই মিয়াভাই হাচা!৭. উত্তপ্ত শহরে বনলতা সেন
বাতাস কি সাহারা ছুঁয়ে আসে?
এতো তপ্ত হয় কি করে সেগুলো?
সাগর, মহাসাগর পেরিয়ে তারপর
তোমার চুল উড়িয়েও এতো উত্তপ্ত?
আমার জানালা ছুঁয়ে জলপাই গাছের
পাতাগুলো হালকা নড়লেই বুঝি আমি,
তুমি আশেপাশেই আছো কোথাও।
আমি ভরসায় বসে থাকি এই উত্তপ্ত রাতে
হিমালয় ছুঁয়ে শীতল বাতাস হয়ে আসো,
এসে বলো আমি এসে গেছি প্রিয়,
এই উত্তপ্ত শহরে তোমাকে দু’দণ্ড শান্তি দিতে,
আমিই নাটোরের বনলতা সেন আজ।৮. ফিরে আসা
সুনীল বাবু তিন প্রহরের বিলে
সাপ আর ভ্রমরের খেলা দেখতেন।
আমাদের তিন প্রহরের বিল নেই,
ছাদ বাগানের পানির ড্রামে
কৃত্রিম পদ্মফুল ফোটে এখন।
সেখানে সাপও আসেনা, ভ্রমরও না,
আমরা সেখানে ছোট কচ্ছপ ছাড়ি,
তারা কষ্ট নিয়ে আমাদের আনন্দ দেয়।
আমাদের শিশুরা শাপলা-শালুক চেনে না,
এরা কেএফসিতে মুরগীর রান চিবায়।
এই অসময়ে শাপলা বিলে যায়না কেউ,
অবুঝ বালিকা এটা বুঝতে পারোনা?
টাইম মেশিনে চড়া যায় হয়তো বা
কিন্তু সেই কালে ফিরে আসা যায়না।৯. পাখী
পাখীদের সীমান্ত নেই একদমই,
আকাশের মতো তারাও সীমানাহীন।
ভাবনাহীন এমন উড়ে চলায়,
একদা আমিও পাখী হতে চেয়েছিলাম।
নির্ভাবনায় দিনকাল পাড়ি দিতে
আমিও পাখী হতে চেয়েছিলাম।
তোমাদের অনেক নিয়ম, অনেক বাঁধন
আমাকে ক্লান্ত করে দেয় অবিরাম।
মানিয়ে নিতে নিতে অবসাদে মুহ্যমান
আমি নিশ্চিন্তে উড়ে যেতে চেয়েছিলাম।
প্রতি সকালে যে পাখিটা জানালায় আসে
সেও বলে, চলে আসো বন্ধুবর, উড়ি।
যেতেতো পারিই পাখী কিন্তু জানো কিনা
অনেক মায়া কেটে সব করা যায়না।১০. ছুটে চলা
সবাই ছুটে চলছি আমরা,
দিকবিদিকশুন্য হয়ে।
নানান উছিলায় অবিরত,
ছুটে চলা আমাদের।
কতো স্বার্থ, কতো লোভ,
কতো হীন টানাটানি।
সব ছুটে চলার শেষটা
একেবারে নির্ধারিত।
অবিরাম ছুটে চলা আসলে,
মৃত্যুর দিকেই ধাবিত।
Leave a Reply