পর্ব-১
পর পর কিছু ঘটনা একসাথে ঘটে গেল। ঠিক ভাবে ভেবে দেখলে দেখা যায় কোনটারই খুব বেশি মাথামুণ্ডু নেই।পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক ঘটনা যাকে বলে আরকি!
ধুরধুরিয়া বাজারে বাস থেমে গেল। গোবেচারা চেহারার একটা ছেলে বাস থেকে মাটিতে পা ফেললো। পা ফেলার সাথে সাথেই তার পুরো জগৎ সংসার নাড়াচাড়া শুরু করে দিল। মাথা ঘুরে গেল। ছেলেটা পা ফসকে পড়ে গেল। যেখানে পড়লো সেটা কাঁদার পানি। ছেলেটা উঠার চেষ্টা করলো। তখন দেখা গেল ছেলেটা শুধু গোবেচারা না, মহা অকর্মণ্যও। এই মহা অকর্মণ্য যতবারই কাঁদার জল থেকে উঠতে চেষ্টা করছে ততবারই নতুন করে পড়ে যাচ্ছে।চারপাশে হাড় কাঁপানো শীত।এই শীতের মাঝেই চারপাশের মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই নাটক দেখছে। এই অকর্মণ্যের গোবেচারা চেহারা তাদের মধ্যে মায়া করুণার ভাব জাগাতে পারছেনা। চারপাশে মৃদু চাপা হাসি শোনা যাচ্ছে। নাটক দর্শনার্থীরা হাসাহাসি করছে।
আজকের দিনটা খুব এলোমেলো ভাবে শুরু হতে চলেছে। ভাতের অবস্থা জানতে সব ভাত টিপে টিপে দেখতে হয় না। একটা টিপলেই বোঝা যায়। তেমনি দিনকাল কেমন যাবে জানতে পুরো দিনের অপেক্ষা করতে হয় না। দিনের প্রথম ছ’ঘন্টাই যথেষ্ট। অনয়ের এই প্রথম ছ’ঘন্টা বেশ ঘটনাবহুল। সুতরাং ভাত টেপাটেপির তত্ত্ব বলছে আজকের দিনটা হবে সাংঘাতিক।
পৌষ মাসের প্রচণ্ড শীত। হিমালয়ের কোন একটা জায়গা থেকে সরাসরি ঠান্ডা বাতাস আসছে। হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে।অনয় নাটক দর্শনার্থীদের হতাশ করে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তার পরনে হালকা সবুজ রঙের পলেস্টারের জ্যাকেট। ভিজে জবজব করছে। যার বাঁ হাতের দিকে আবার বমি লেগে আছে। অনয় নাক কুঁচকালো।
হিউম্যান সাইকোলজি বলেআয়নায় মানুষ নিজেকে তিনগুণ বেশি সুন্দর দেখে। খুব সম্ভবত এই অবস্থায় এই সাইকোলজি কাজে আসবে না। অনয় নিজেকে আয়নায় দেখবে নরকের দূত হিসেবে।
অনয় এই মুহুর্তে নিজের চরিত্রের একটা বিচিত্র দিক নিয়ে ভাবছে। বাস সহযাত্রীর বাচ্চা তার শরীরে বমি করেছে।সে প্রথমে ব্যাপারটা বিরাট উদার দৃষ্টিতে দেখেছে। এমন ভাব করেছে যেন এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। বাসে চলতে গিয়ে দু’তিনবারবমি লাগা তার জন্য কোন ঘটনাই না। অথচ তার জায়গায় অন্য যেকেউ হলে কী কিছু কঠিন কথা শুনিয়ে দিতো? শুধু কী অনয় পারেনি? প্রথমে উদার ভাব দেখালেও এখন তার বিরক্তিবোধ হচ্ছে।প্রত্যেকটা মানুষই সম্ভবত এরকম দু’টো আলাদা চেহারা নিয়ে বেঁচে থাকে।
বিচিত্র চরিত্র নিয়ে ভাবনা দীর্ঘস্থায়ী হলো না। দশটার কাছাকাছি বেজে গেছে। এখন যেতে হবে। দার্শনিক ভাবনার আরো সময় পাওয়া যাবে।
ভাত টেপাটেপি বিষয়ক তত্ত্বটায় কিছু ত্রুটি আছে। দিন যতটা বাজে ভাবে কাটবে মনে হচ্ছিল ততটা বাজে ভাবে কাটছে না। অনয়ের রিক্সার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হলো না। রিক্সা সামনে এসে হাজির।
“সার যাইবান কই?”
রিকাশাওয়ালার আপাদমস্তক বিচিত্র সব কাপড়ে ঢাকা। পৌষ মাসের শীতের কোন ক্ষমতা নেই তাকে স্পর্শ করার। শুধু চোখ দু’টো দেখা যাচ্ছে।
“চরণখোলা প্রাইমারি স্কুলের কাছে। যাবেন?”
“ওইঠা পরেন। দেন, ব্যাগপত্তর গুলা আমারে দেন।”
অনয় বিনা বাক্যব্যয়ে উন্মুক্ত চোখের রিকশাওয়ালার রিকশায় উঠে পড়লো। এখানে দাঁড়িয়েঠান্ডায় জমে যাওয়ার কোন কারন নেই।
“আপনে প্রাইমারি ইস্কুলের নতুন সার?”
“সার মানে? ওহ্ হ্যাঁ… স্যার? … না শিক্ষক নই।”
“তাহলে আপনের বাসা এইখানে? কোনদিন তো দেখি নাই।”
“আপনি এখানের সবাইকে চেনেন?”
“না, হেইডা না।আপনেরে বিদিশি মানুষ মনে হইতাছে। অন্য টাউন থেকে আইছেন?”
“আমার বাসা এখানে না।”
“তাইলে?”
অনয় মনে মনে খুব বিরক্ত হলো। লোকটা কথা বলছে জেরা করার ভঙ্গিতে। কিন্তু যথারীতি সে বিরক্তি প্রকাশ করতে পারলো না। তার চরিত্রের দ্বৈত ভাব ফিরে এসেছে।
“বিশু বাবুর বাড়িতে যাচ্ছি।”
রিকশাওয়ালা প্রায় আৎকে উঠলেন। একঝলক পিছনে তাকিয়ে আবার সামনে তাকালেন।
“বিশু বাবু তো কাইল রাতেই মইরা গেছে।”
অনয় নির্বিকার ভাবে বললো “জানি। সেজন্যই যাচ্ছি। তিনি সম্পর্কে আমার পিসেমশাই হন। প্রীতিলতা দেবীর নাম শুনেছেন? তিনি আমার পিসি … মানে ফুফু হন।”
“খুব ভালা লোক আছিন বিশু বাবু।”
অনয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো “মারা গেলে সব মানুষই ভালো হয়ে যায়। তবে তিনি সত্যিই ভদ্রলোক ছিলেন।”
“কথাটা ঠিক কইলেন না সার। যে খারাপ হে সবসময়ই খারাপ। কোন খুনী মানুষ রাইতের বেলা মানুষ কাইট্টা সকাল বেলা রিকশা চালাইলেও হে খুনীই থাকবো।”
অনয় আরেকবার বিরক্ত হলো।”কী করছেন? দেখে চালান … তাড়া নেই আমার।”
“আপনে টাইট হইয়া বইসা থাকেন। কুয়াশার মধ্যে আমার চালায়া অভ্যাস আছে। এক্সিডেন্ট হইবো না।”
“আচ্ছা।”
“এক্সিডেন্ট হইবো না কেন জানেন সার?”
“কেন হবে না?”
“কারন আমাগোর সামনে একটা রিকশা আছে। এক্সিডেন্ট হইলে আগে ওইটার হইবো। আমি তখন ব্রেক কইরা দিমু।”
“ওহ্। রিকশা দেখা যাচ্ছে না।”
“আমি দেখতাসি। সার বড় রোড দিয়া যখন ট্রাক চালাইতাম তখনো এই বুদ্ধি কাজে লাগাইতাম। সামনে একটা বড় গাড়ির পিছনে আস্তে আস্তে গাড়ি চালাইতাম। আল্লার রহমতে কোনদিন এক্সিডেন্ট করি নাই।”
“আপনি আগে ট্রাক চালাতেন?”
“হ্যাঁ আগে চালাইতাম।”
“ছাড়লেন কেন? এক্সিডেন্টের ভয়ে?”
“ছাড়ি নাই। মালিক চাকরি খায়া দিসে।”
“ওহ্। কোন ধরনের বড় গাড়ির পিছনে আপনি আস্তে আস্তে ট্রাক চালাতেন?”
“মাল ভর্তি ট্রাকের পিছনে। মাল ভর্তি ট্রাক সবসময়ই আস্তে আস্তে চলে।”
“বাস জোরে চলে নাকি?”
“হ্যাঁ বাস জোরে চালায়। যাত্রী উঠানির ধান্দা থাকে তো। আমার চাকরি কে খায়া দিসে জানেন?”
“কে?”
“আপনের পিসা … বিশু বাবু। আমি তার ট্রাক চালাইতাম।”
অনয়ের এই মুহুর্তে কিছুটা আগ্রহ হচ্ছে। সে আগ্রহী গলায় বললো “আপনার নাম কী ভাই?”
“জালাল। এই রিকশাটাও বিশু বাবুই কিইনা দিসে।”
“আপনার চাকরি চলে যাওয়ার কারন কী?”
রিকশাওয়ালা জালাল রিকশা থামিয়ে দিলো। চরণখোলা প্রাইমারি স্কুল পেরিয়ে রিকশা সদ্য প্রয়াত বিশু বাবুর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। উঠানে শ্মশান ফেরত মানুষের ভিড়।
রিকশাওয়ালা নির্বিকার ভাবে বললো “আমি চুরি করতাম। লোহা বোঝাই ট্রাক থেইকা লোহা চুরি কইরা উপরি কামাইতাম। একবার লোভে পইড়া ট্রাক ডাকাতির নাটক কইরা ধরা খাইছি। তখন থেইকাই চাকরি নাই হইয়া গেছে।”
রিকশাওয়ালা আর দাঁড়ালো না। এমনকি ভাড়াও নিলো না। রিকশা ঘুরিয়ে চলে গেল। ঘটনা হিসেবে এটাও বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হলো অনয়ের কাছে।
অনয় বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। গ্রামের ধনী মানুষদের বাড়ি যেরকম হয় ঠিক সেরকম বাড়ি। সামনে মস্ত বড় উঠান। চারদিকে পার্টিসন। গতবার ছিলো টিনের। এইবার এসে দেখে ইটের দেয়াল। দোতলা বাড়ির প্রায় পুরোটুকু গ্রীল দিয়ে মুড়ানো। সামনে সিঁড়ির কাছে দু’টো খুব বড় বড় শান বাঁধানো বেঞ্চ।
মানুষ মারা গেলেও কোথাও যেন একটা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠান ভাব ছড়িয়ে থাকে। চারদিকে প্রচুর মানুষ। শ্মশানের কাজ শেষ হয়েছে। সম্ভবত শেষ রাতের দিকে পিসেমশাইকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনয় খুব কুন্ঠিত পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। সিঁড়ির কাছাকাছি এসে থমকে দাঁড়ালো।
সিঁড়ির কাছে প্রীতিলতা দেবী বসে আছেন। মাথা নিচু। হাঁটুর কাছে মুখ গুঁজে বসে আছেন। অনয়কে আসতে দেখে একবার তাকলেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুখ নামিয়ে নিলেন। কিছু বললেন না।
প্রীতিলতা দেবীর বয়স পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি। অদ্ভুত কারনে তাকে দেখে মাঝবয়সী মহিলা মনে হয় না। কিন্তু আজ অবস্থা ভিন্ন। অনয় লক্ষ্য করলো তার পিসিমনির চোখ ডেবে গেছে। কপালের দিকে সূক্ষ্ম কুঁচ পড়েছে। কিন্তু মুখে কান্নার ভাব নেই। চোখ মুখ শুকনো। ভেজা কাপড়ে সিঁড়ির দিকে বসে আছে। শাড়ির রং ঈষৎ খয়েরী।
অনয় খুব ইতস্তত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। তার কী করা উচিত বুঝতে পারছে না। সংকোচ কাজ করছে। তার কী পিসিমনির কাছাকাছি গিয়ে বসে থাকা উচিত নাকি তার সাথে কথা বলা উচিত? কথা বলাটা বোধহয় ঠিক হবে না। পিসিমনির মুখ চোখ খুব শান্ত। মানসিক চাপের একটা অদ্ভুত পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে তিনি যাচ্ছেন। কথাবার্তা বলে সেটা স্বাভাবিক করা যাবে না।
অনয়ের কাজটা সহজ হয়ে গেল। ভিতরে বাড়ি থেকে আশির কাছাকাছি বয়সের এক বৃদ্ধা বের হয়ে আসছেন। কাছাকাছি আসার পর শোনা গেল তিনি বিলাপ করে করে আসছেন। ছোটখাটো শরীর। গুঁজা হয়ে হাঁটার কারনে আরো ছোট দেখাচ্ছে। বৃদ্ধা সম্ভবত চোখে কম দেখেন। সিঁড়ির কাছে এসেই তিনি খেই হারিয়ে ফেললেন।এদিক ওদিক তাকাতে লাগলেন।মোটা কাঁচের চশমা পরা সত্ত্বেও তিনি প্রীতিলতা দেবীকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। যখন খুঁজে পেলেন তখন ধপ করে তার সামনে বসে পড়লেন। আর বিলাপের অসমাপ্ত অংশ পুনরায় শুরু করে দিলেন।
প্রীতিলতা দেবী আবার মুখ তুললেন এবং কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার হাঁটুতে মুখ গুঁজে নিলেন। তার চোখ মুখ একইরকম শান্ত। বৃদ্ধার বিলাপের কারনেই হোক বা অন্য কোন কারনে সিঁড়ির কাছে মানুষ জমতে শুরু করেছে। কেউ কেউ সান্ত্বনা দিয়ে বলছে “কান্দলে কী মরা মানুষ জেতা হইয়া আইবো? থাক কাইন্দেন না।”
বৃদ্ধার বিলাপ থামছেই না। অবশ্য তার সুরেলা বিলাপের বেশ কিছু অংশই অস্পষ্ট। যেটুকু বোঝা যাচ্ছে সেটুকুর পাঠোদ্ধার করলে বোঝা যায় তিনি সন্তানের আকষ্মিক মৃত্যুতে মর্মাহত।
অবশ্য বিলাপের সবটুকু অংশ পুরোপুরি সত্য না। তীব্র কষ্টে মানুষের বাস্তবজ্ঞান খানিকটা হলেও লোপ পায়। বিশু বাবু বৃদ্ধার সন্তান না। তিনি সম্পর্কে বিশু বাবুর মামী হন। মামা মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি এখানে আছেন। মামার সন্তান একজন ছিলো সে যক্ষায় মারা গেছে আরো বছর চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ আগে। সুতরাং এই দীর্ঘজীবন তিনি কাটিয়েছেন বিশু বাবুর পুরো পরিবারের সাথে।
বিলাপের এক পর্যায়ে বৃদ্ধার বেশ বাড়াবাড়ি অবস্থা হয়ে গেল। চোখ মুখ উলটে ফেললেন। লোকজন তাঁকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়লো। প্রীতিলতা দেবী ঠিক তখনো বেশ নির্বিকার রইলেন। সিঁড়ির কাছে ভিড় কমে আসলে তিনি অনয়ের দিকে মুখ তুলে তাকালেন। এবং তাকিয়েই রইলেন।
বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই বললেন “বাবা….”।তারপর আর কোন কথা না। আবার কিছুক্ষণ মুখ গুঁজে বসে থেকে হঠাৎ করে উঠে দাঁড়ালেন “আয়, ঘরে আয়।”
অনয়ের বুক মুচড়ে উঠলো। পিসিমনি শক্ত ধরনের মানুষ। সন্তান নেই। তবুও কোথায় যেন খুব একটা ভেঙে পড়েছেন। মুখে কান্না নেই। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠিকই দুর্বল হয়ে পড়েছেন। খুব শক্তিশালী মানুষেরাও বোধহয় ভেতরে ভেতরে দুর্বল।
প্রীতিলতা দেবী হেঁটে যাচ্ছেন লম্বা টানা বারান্দা দিয়ে। তার ভেজা শরীর থেকে টপটপ করে জল পড়ছে। এখন সবকিছু সমান সমান সম্পূর্ণ মনে হচ্ছে। চোখ থেকে না পড়ুক ভেজা শরীর থেকে তো জল পড়ছে।ধুরধুরিয়া অঞ্চলের শীতের খুব নাম ডাক। অনয় এই মুহুর্তে সেটা হারে হারে টের পাচ্ছে। রাত বেশি হয়নি। আটটার কাছাকাছি। ঘরের জানালা সব লাগানো। দরজার পর্দা ফেলে রাখা হয়েছে। তবুও কোথাও কোন গুপ্ত সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে কনকনে হাওয়া ঢুকে পড়ছে। অনয় পা নামিয়ে বিছানার এক কোণায় বসেছে। অল্প অল্প পা নাড়ছে।
প্রীতিলতা দেবীর পরনে সাদা শাড়ি। তিনি বসে নেই। এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নড়ছে না। কথা বলছে না। তবুও সাদা শাড়ির আঁচলের অংশ হাওয়ায় মাঝে মাঝে খানিকটা নড়ছে। কিন্তু তিনি নিশ্চল। গায়ে কোন শাল-চাদর নেই। দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড শীত কোন কারনে তাঁকে স্পর্ষ করতে পারছে না।
ঘরে আরেকজন আছেন। তিনি রশিদ চাচা। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। বেঁটে খাঁটো মানুষ। মাথার চুল কুচকুচে কালো। কলপ ব্যবহার করেন না কারন এতে তার শরীরের এলার্জির ভাব হয়। চামড়ায় চাকা চাকা লাল দাগ হয়ে যায়। অথচ গালের দু-তিনদিনের না কামানো দাড়ি কাঁচাপাকা। তিনি বিশু বাবুর খুব কাছের মানুষ এবং তার রাইসমিলগুলোর একক ম্যানেজার। তার পুত্র সন্তান ছিল তিনজন। এরমধ্যে শুধু জীবিত আছে বড় জন। বড় সন্তান তার স্ত্রী এবং মা’কে নিয়ে থাকে অন্যজায়গায়। আর তিনি থাকেন এই বাড়িতে।
রশিদ চাচা বসে আছেন কাঠের চেয়ারে। গভীর ভাবে কিছু নিয়ে চিন্তা করছেন। ঘরের এই তিনজনের কারো মুখে কোন কথা নেই। কেউ কারো দিকে তাকিয়েও নেই।
রশিদ চাচা চিন্তা বন্ধ করলেন। প্রীতিলতা দেবীর দিকে তাকিয়ে বললেন “মাসী আপনার সাথে কিছু কথা বলা প্রয়োজন।”
প্রীতিলতা দেবী আগের মতোই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এইবার শুধু মুখ তুলে রশিদ চাচার দিকে তাকালেন।
“রাইসমিলগুলোর এখন কী হবে?”
প্রীতিলতা দেবী খুব অবাক হলেন। “কী হবে মানে? যেমন চলছিলো তেমন চলবে। কেন আপনি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান?”
“দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা আসছে না। মিলগুলোর টেকওভার করার তো কেউ নেই।”
“কেন আমি আছি না?”
“মহিলা মানুষ হিসেবে আপনি কী এতগুলো মিলের দায়িত্ব সামলাতে পারবেন?”
প্রীতিলতা দেবী এইবার একটু যেন নড়ে উঠলেন “চাচা আপনার কেন মনে হচ্ছে যে আমি পারবো না?”
রশিদ চাচা এইবার অস্থির হয়ে বললেন “মাসী অপরাধ নিবেন না। আপনি পারবেন না, এই কথা বলতে চাইনি। আসলে মিলগুলোতে শ্রমিকেরা খুব খেপে আছে। তিন মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। কেউ কেউ বিদ্রোহ করে উঠছে। এর মধ্যে আকাশ নামের একজন মিল টেকনিশিয়ান আছে। চ্যাংড়া বয়স। এই ছেলেটাই সব নষ্টের গোড়া। আবার এই মুহূর্তে মালিকের মৃত্যু। সবকিছু মিলিয়ে একটা ঝামেলা তৈরি হতে পারে।”
“বেতন কেন দেওয়া হয়নি?”
“মানি ক্রাইসিস চলছে। দেনাদারেরা টাকা ঠিকমতো পরিশোধ করছে না। বিশু বাবু নরম সরম হয়ে কথা বলতেন। কারো সমস্যার কথা বললে তিনি টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিতেন না। এখন তার অবর্তমানে সেই টাকা কতটা ফেরত পাওয়া যাবে সেটা নিয়েই বরং সন্দেহ হচ্ছে।”
“সন্দেহ করার কিছু নেই। আমি সবকিছুর দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনি আমার সাথে থাকুন।”
রশিদ চাচা যেন শুনতে পাইনি এরকম করে বললো “আপনি এখন সবকিছুর দায়িত্ব নিবেন?”
“হ্যাঁ নেব। কেন এখানেও কোন সমস্যা আছে নাকি?”
“আপনার তো এখন অশৌচ চলছে। এরমধ্যে ব্যবসার ঝামেলা নেওয়াটা কি ঠিক হবে?”
“কেন, ঠিক হবে না বলছেন?”
“না বলছিলাম যে গ্রামের মানুষজন কী ব্যাপারটা ভালো চোখে দেখবেন?”
প্রীতিলতা দেবী একবার নিজের সাদা শাড়ির দিকে তাকালেন। এরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন “ভালো চোখে দেখা, না দেখার কিছু নেই। আমার স্বামীর বিষয়সম্পত্তি আগলে রাখাই বরং এখন আমার প্রধান কাজ।”
রশিদ চাচা কোন কথা বললেন না। তার মুখ থেকে চিন্তার ছাপ চলেও গেল না। তিনি আরো গম্ভীর হয়ে চেয়ারে বসে রইলেন। যেন কিছু নিয়ে খুব চিন্তা করছেন।
“আচ্ছা চাচা আমাদের ধানী ফসলি জমির দায়িত্ব যেই ভদ্রলোককে দেওয়া হয়েছিল তার যেন নাম কী?”
“রোজ আলী। সুবিধার মানুষ না। বিশু বাবু কী ভেবে যে তাঁকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন কে জানে!”
“আমি তার সাথে কথা বলতে চাই। বছর তিনেক থেকে আমাদের ফসল দেওয়া কমে যাচ্ছে। এর কারণ কী জানতে চাই। আর দেনাদারদের সাথেও কথা বলতে চাই। আপনি ব্যবস্থা করুন।”
রশিদ চাচা কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বললেন না। থেমে গেলেন। ঘরে বাতাসী এসে প্রবেশ করেছে। প্রীতিলতা দেবী সেদিকে তাকিয়ে রইলেন। বাতাসী খুব ইতস্তত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত কিছু বলতে এসেছে। সংকোচে পড়ে গেছে। ভাবছে বলবে কি বলবে না।
প্রীতিলতা দেবী বাতাসীর সংকোচ ভাব কাটানোর জন্য জিজ্ঞেস করলেন “কিছু বলবি? কিছু বলতে এসেছিস?”
বাতাসী ওইভাবেই দাঁড়িয়েই পায়ের নক দিয়ে ঘরের শান ঘসছে। কিছু বলছে না। কিছু বলার চেষ্টাও করছে না।
“বাতাসী আমার জন্য এককাপ চা নিয়ে আসতে পারবি? রশিদ চাচা চা খাবেন? এক কাজ কর চাচার জন্য ও চা নিয়ে আয়। যাহ্।”
অনয় চুপচাপ বসেছিল। পারিবারিক মিটিং হচ্ছে। এখানে তার কিছু করার নেই। এখানে সে বাইরের মানুষ। এইবার খুব মৃদু স্বরে বললো “আমার জন্যও এক কাপ নিয়ে এসো।”
বাতাসী অনয়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই আতঙ্কিত গলায় বললো “বৌদি চা খাবেন? চা খাওয়া কী নিয়মে আছে?”
“কোন নিয়মে থাকার কথা বলছিস?”
“শুদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত তো ওসবখাওয়া যায় না!”
“তোর দাদাবাবু মারা যাওয়ার পরেই কী আমি অশুদ্ধ হয়ে গেছি? শোন বাতাসী এইসব কুসংস্কার ছাড়। এখন আমাদের জন্য চা নিয়ে আয়।”
বাতাসী আবার পায়ের নক দিয়ে শান ঘসতে শুরু করেছে। সে ইতস্তত ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে বললো “আমার ভয় লাগে।”
“কিসে ভয় লাগে তোর? চা বানাতে?”
বাতাসী এইবার কয়েক পা এগিয়ে এসে প্রীতিলতা দেবীর সামনে এসে দাঁড়ালো। একেবারে প্রসঙ্গ পাল্টে বললো “বৌদি দাদাবাবুর মৃত্যুটা স্বাভাবিক না।”
“তোর দাদাবাবু স্ট্রোক করেছেন। মারা গেছেন। গতকাল সবার সামনে সবকিছু হলো। তবুও তুই বলছিস মৃত্যুটা স্বাভাবিক না?”
“বৌদি দাদাবাবু এখনো আছেন। ফিসফিস করে আমার সাথে কথা বলতে চান।”
“শোন বাতাসী স্ট্রোক করলে কী হয় জানিস? মানুষের মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তখন মানুষ কথা বলতে পারে না, চলতে পারে না, খেতে পারে না। স্ট্রোক করার পর যতক্ষন মানুষ জীবিত থাকে ততক্ষণই কথা বলতে পারে না আর এখন তো মারা গেছে!”
বাতাসী তবুও কোন কথা বলছে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে এখন ভীত মনে হচ্ছে। অনয় জানে তার পিসিমনি জ্ঞানী মানুষ। সারাক্ষণ বই নিয়ে থাকেন, পড়াশোনা করেন। সুতরাং তার কাছে সমস্ত ঘটনার ব্যাখা অন্যরকমই হবে।
প্রীতিলতা দেবী কিছুক্ষণ বাতাসীর দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন “আচ্ছা তোর চা আনতে হবে না। বিক্রমকে গিয়ে বল আমি ডাকছি।”
বাতাসী ভয়ে ভয়ে প্রীতিলতা দেবীর দিকে তাকিয়ে পিছন ফিরে হাঁটতে শুরু করলো। প্রীতিলতা দেবীর এই মুহুর্তে খানিকটা মায়া হচ্ছে। বাতাসী উনিশ বছরের কিশোরী। তার বয়স যখন বার তখন থেকেই এই বাড়িতে আছে। ফুটফরমাস খাটে। তাদের সন্তান নেই। বাতাসী তাদের কাছে সন্তানের মতো। এখন এই মেয়েটা বড় হয়েছে। তার স্বামীর খুব প্রিয় ছিল বাতাসী। সে বাতাসীর জন্য একটাবিয়ের সমন্ধও ঠিক করেছিল। অথচ এক ধাক্কায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। একদম এলোমেলো।
“বাতাসী …?”
বাতাসী পেছন ফিরলো। আবার দাঁড়িয়ে পড়লো। ঘরের শানে নক ঘসতে শুরু করলো।
“তোর বিয়ের একটা সমন্ধের কথা বলছিলেন না তোর দাদাবাবু?”
“এখন এসব কথা থাক।”
“শোন তোর বিয়েটা আমি খুব ধুমধাম করে দিতে চাই। এই ইচ্ছাটা তোর দাদাবাবুর ছিল। তোর কোন মতামত থাকলে জানাতে পারিস।”
বাতাসীর মুখ ছোট হয়ে গেল। চিৎকার করে বললো “আমি বিয়ে করতে চাই না, আমি বিয়ে করতে চাইনা।” বলতে বলতে ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেল।
প্রীতিলতা দেবী আর বাকি দু’জন প্রথমে ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন না। যখন বুঝতে পারলেন তখন দেখলেন পর্দা কাঁপছে। বাতাসী ঘরে নেই। দূর থেকে দৌড়ে যাওয়ার শব্দ ভেসে আসছে। আর ভেসে আসছে চাপা আর্তনাদ। কিশোরী বাতাসী কান্না গিলে ফেলার চেষ্টা করছে। সেই বিভৎস শব্দও শুনতে পাওয়া যাচ্ছে।
চা থেকে ধোঁয়া উঠছে। চায়ের মগ হাতে আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছেন প্রীতিলতা দেবী। তিনি এই মুহুর্তে কিছুটা কাঁপছেন। একবার দেখে এই কাঁপুনি শীতের জন্য মনে হলেও তা সত্যি না। সূক্ষ্ম ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তিনি অল্প মৃদু পা নাড়াচ্ছেন। আগের জায়গাতেই বসে আছে রশিদ চাচা। তার হাতেও ধোঁয়া উঠা চা। কিন্তু ঘরের একটা বিশেষ পরিবর্তন হয়েছে। এখন অনয় নেই। তবে অনয়ের বদলে যে আছে তার নাম বিক্রম। সাতাশ বছর বয়সী চাপা ভাঙ্গা যুবক। গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চুল এই বয়সেই কাঁচাপাকা। অগোছালো। রোগা পটকা চেহারা। বেশিরভাগ সময়ই গোঁজা হয়ে চলাফেরা করে। কিন্তু আজ দাঁড়িয়েছে মিলিটারি এটেনশান ভঙ্গিতে। দেখে মনে হচ্ছে সোজা হয়ে দাঁড়াতে তার কষ্ট হচ্ছে। তবুও সে চেষ্টা করছে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে।
প্রীতিলতা দেবী চায়ে চুমুক দিলেন “এরকম কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কিছু নেই। তুমি চাইলে সহজ হয়ে দাঁড়াতে পারো।”
বিক্রম একবার চোখ তুলে তাকিয়েই গোঁজা হয়ে দাঁড়ালো। এখন তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে সে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে।
“তোমরা যাবে কবে?”
বিক্রম বোধহয় কথাটা বুঝতে পারলো না। সে আরেকবার চোখ তুলে আবার নামিয়ে ফেললো। চোখ দু’টো ঘন লাল। অস্বাভাবিক বড়। দেখে মনে হয় এইমাত্র নেশা করে এসেছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নেশার ঘোরে ঝিমাচ্ছে আর সাতপাঁচ ভাবছে। জগৎ সংসারের কোন কথায় তার মনোযোগ আসার কথা না।
“বলছিলাম তোমরা এই বাড়ি থেকে চলে যাবে কবে?”
বিক্রম আরো সংকোচিত হলো “চলে যাবো।”
“তোমরা কী জানো তোমাদের মামার মতো ভালো মানুষও তোমাদের কী প্রচন্ড রকম ঘৃণা করতো?”
“হ্যাঁ জানি।”
“সেটার কারন কী? সেটাও জানো?”
“হ্যাঁ এটাও জানি।”
“তোমরা মা ছেলে বোধহয় তোমার মামা মারা যাওয়ার পরে এসেছো?”
“হ্যাঁ পরেই এসেছি। যখন জানতে পেরেছি তখন এসেছি।”
“পরে এসে ভালোই করেছো। আমার ধারনা মৃত্যুর আগে তোমাদের দেখে থাকলে তিনি কষ্ট নিয়ে মারা যেতেন।”
বিক্রম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। চোখের দিকে তাকাচ্ছে না। তার চরিত্রের মানুষেরা কারো চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারে না।
প্রীতিলতা দেবী চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে বললেন “তোমার নামে চারপাশে যেই গল্প শোনা যায় সেটা কী সত্যি?”
বিক্রম খুব স্বাভাবিক গলায় বললো “খানিকটা সত্যি।”
“খানিকটা কেন? পুরোটা সত্যি না?”
“মানুষ পরনিন্দা করতে পছন্দ করে। গল্প বানাতে পছন্দ করে। সেই গল্পের আবার ডালপালা ছড়িয়ে দিতেও পছন্দ করে।”
“তোমার চুরির ব্যাপার নিয়ে যেই গল্প শোনা যায় সেটাও কী ডালপালা ছড়ানো গল্প?”
বিক্রম এইবার চোখ তুলে রশিদ চাচার দিকে তাকালো। রশিদ চাচাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি কিছু শুনছেন না। ঘুমিয়ে পড়েছেন।
“তিনি সব জানেন। উনার সামনে সঙ্কিত হবার কিছু নেই।”
“চুরির ব্যাপারটা সত্য। কিন্তু চুরির উদ্দেশ্য নেশা করা ছিল না। এই অংশটা ডালপালা ছড়ানো গল্প।”
“তোমার মামা নিসন্তান। সুতরাং যতদূর জানি তার সম্পত্তির উপর একমাত্র ভাগ্নে হিসেবে তোমার একটা অধিকার আছে। তুমি কী অধিকার দাবি করতে চাও?”
“চাই না।”
“তুমি কোনভাবে কী এটা ভেবে নিয়েছো যে, তোমার এই সৎ হওয়ার অভিনয় দেখে আমি সবকিছু তোমার হাতে তুলে দেব?”
“আমি অভিনয় করছি না। আমি মা’কে নিয়ে আজই চলে যাচ্ছি।”
“আমার মনে হয় তোমার একটা সুযোগ পাওয়া উচিত। যদিও তোমার মামা জীবিত থাকলে তিনি সেটা করতেন না।”
বিক্রম কোন কথা বললো না। প্রীতিলতা দেবী খুব দৃঢ়তার সাথে বললেন “আমি চাই রাইসমিলগুলো এখন থেকে তুমি দেখাশোনা করো। এককথায় টেকওভার করো। পারবে না?”
খুব বেশি আবেগতাড়িত হলো না, আনন্দে ঝুঁকেও পড়লো না। বিক্রম সরল গলায় বললো “পারবো।”
রশিদ চাচা আসলে ঘুমাননি। তিনি সবকথা মনযোগ দিয়ে শুনছিলেন। এইবার নড়চড়ে বসলেন। প্রীতিলতা দেবীকে কিছু বলতে যাবেন। তার আগেই প্রীতিলতা দেবী বিক্রমের দিকে তাকিয়ে বললেন “তাহলে এই মুহুর্তে তোমার এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। তুমি এখন যেতে পারো।”
বিক্রম চলে যাওয়ার পর রশিদ চাচা বললেন “এটা কী ঠিক হচ্ছে মাসী? এমন একজনকে দায়িত্ব দেওয়া কী ঠিক হচ্ছে?”
“ঠিক হচ্ছে। ছোটখাটো মানুষ যখন হঠাৎ করে বিরাট বড় কিছু পেয়ে যায় তখন সে সেটাকে নিয়েই তুলো তুলো শুরু করে। আমি বিক্রমের এই তুলো তুলো ব্যাপারটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।”
রশিদ চাচা আর কিছু বললেন না। হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে বসে রইলেন। তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি প্রীতিলতা দেবীর এই সিদ্ধান্তে খুশি হননি। কিন্তু প্রীতিলতা দেবী যেন আরো গম্ভীর হয়ে কিছু ভেবে চলেছেন। তিনি ভালোমতোই বুঝতে পারছেন সামনের পথটুকু তার জন্য সহজ হবে না।(চলবে…)
Leave a Reply