বুধবার, ০৭ Jun ২০২৩, ০৯:০৮ অপরাহ্ন

নাটিকা#রক্তদান-কঙ্কন সরকার

নাটিকা#রক্তদান-কঙ্কন সরকার

এক লোক হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে কিছু খোঁজার ভাব করে বলে, রক্ত… রক্ত চাই… খানিক পর ইতস্তত ভাব করে বলে, কোনটে পামো রক্ত! কোনটে পামো! (পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে হাতে নিয়ে নম্বর টিপে কারো সাথে রক্তের কথা বলবে, কিন্তু না সূচক উত্তর পায়। ফোন বন্ধ করে। দুশ্চিন্তাযুক্ত ভাব মুখে।) বলে, পাইনো না তো। কি করি এলা!
(পাশ থেকে একজন নেশাখোর দেখে এগিয়ে আসবে, মুখে সিগারেট)
নেশাখোর : হি হি হি— রক্ত চাই!
লোক: হ, হ ভাই রক্ত। বউয়ের রক্ত নাগবে। অপারেশন হইবে। ডাক্তার রক্ত জোগবার কইচে
নেশাখোর: (সিগারেটে টান দিয়ে) হি হি হি রক্ত জোগবার কইচে! (থামে। যেন স্বাভাবিক হয়।) বলে, কোনো ব্যাপার হলো! ট্যাকা ছাড়ো, রক্ত পাইবা।
লোক: রক্ত পামো!
নেশাখোর: পাইবা। আমি দিমু। তো কখন লাগবো!
লোক: রাইতে অপারেশন। মানে আটটায়। রোগিক নিয়া আচচি ডাক্তার দেখবার। ডাক্তার দেখি কয় আইজে অপারেশন করা নাগবে
নেশাখোর: চাইরটায় পাইয়ে যাবা। দাও পাঁচশ টাকা দাও। আর ঠিকানা কও
(লোক একটু ইতস্তত করে।)
নেশাখোর: আরে কাকা, কি অতো ভাবো! এসব জায়গায় থাইকা থাইকা বুঝতে পারি, কার কি সমস্যা! কতজনরে রক্ত দিলাম! দাও, টাকা দাও। ঠিক সমায়ে পাইয়া যাবা
লোকটি প্যাচ থেকে টাকা বের করে ওর হাতে দেয়। বলে, ভাই, ঠিক সময়ে আইসেন কিন্তু । বড় বিপদ!
নেশাখোর: কাকা, চিন্তা কইরেন না। এইহানেই পাইবা আমারে।

লোকটি যেতে ধরে তার স্ত্রীর দিকে। নেশাখোর যায় তার উদ্দেশে…

পাঁচটা প্রায় বাজে। কিন্তু যে টাকা নেয় তার খোঁজ নেই। লোকটি এদিক ওদিক খোঁজে। মুখমন্ডলে দুশ্চিন্তার ভাব জেগে উঠছে

পাশ দিয়ে দু ছেলে এক মেয়ে যাচ্ছে। লোকটি ডাকবে কি ডাকবে না করতে করতে ডাকে: বাবারে! (আবার ভাবে কি যে বলে! )
ছেলেটি (মাহফুজ): (শুনতে পেয়ে,) ডাকছেন!
লোক: (যেন ছুটে আসে এমন ভাব) হ বাবা,
(ওদুজনও কৌতূহলী দৃষ্টিতে থামে। )
মাহফুজ : কেন, কি হয়েছে!
লোক: একটা লোকক খুজব্যার নাগছি। রক্ত দিবার চ্যায়া ট্যাকা নিয়া গেইচে বাবা।
মেয়ে (সুবর্ণা) : টাকা নিয়ে গেছে মানে!
লোক: হ মা। রোগিক নিয়া আচচি ডাক্তার দেখপার। ডাক্তার দেকি কয় আইজে অপারেশন করা নাগবে। রাইতে হামার বউয়ের অপারেশন। রক্ত নাগবে। কি করি কুনতি যাই! এমন সময় লোকটা আগ্গি আইলো। তাই কয়, আমি দেমো। টাকা দাও, রক্ত পেয়ে যাইবা
২য় ছেলে (আলফ্রেড): টাকা দিয়ে দিয়েছেন!
লোক: হ বাপো, দরকার যে হামার
আলফ্রেড: লোকটি ঠিকানা দেয়নি? নাম বলেনি?
লোক: না তো বাবা, ওউগল্যা তো শুননোই না। হামার চিন্তা রক্ত কোটে পাই! ওমরা যকন আগ্গি আইলো তকন নাম টাম শুনবার কেনা মালুমে হইলে না!
সুবর্ণা: তাই বলে কিছুই শুনলেন না? আচ্ছা লোকটি কেমন?
লোক: লোকটি—! (চিন্তাযুক্ত থেকে একটুপর কিছু পেয়েছেন এমন ভাবে) হ হ হ লোকটার চুলগুলা আউলা ঝাউলা, দাড়িমোচ গুলাও কেমন কেমন! মুখত বিড়ি আচিল… (খানিক থামে। মাথা চুলকায়) আর তো কবার পাবাননই বাবা

মাহফুজ: ও— বুঝেছি! আচ্ছা, আপনার বাড়ি!
লোক: সুন্দরগঞ্জের হরিপুর বা।
সুবর্ণা: আরে, মাহফুজ তোমার এলাকার তো!
লোক: মাহফুজের দিকে দেখে বলে, সুন্দরগঞ্জের!

ওরা নিজেদের মাঝে টুপুরটাপুর করে কথা বলে নিল। তারপর লোকটিকে মাহফুজ বলল, চলেন তো দেখি আপনার রোগী কোথায়?
লোক: চলো বাবা চলো বলে সবাইকে নিয়ে যায়।

ফিরে এসে
মাহফুজ: কাকা, আপনার কপাল খুব ভালো যে আমাদের দুজনার রক্তের গ্রুপের সাথে আপনার রোগীর রক্ত মিলে গেছে
লোক: হ বাবা। আল্লায় মিলি দিচে।
সুবর্ণা: চাচা রক্তের গ্রুপ আগে জেনে নিতে হয়। এই যে দ্যাখেন গ্রুপ পরীক্ষা করতে সময় গেল। আর যদি না মিলতো কত টেনশন!
আলফ্রেড: জানা থাকলে ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয় না চাচা।
লোক: ঠিক কইচেন বা। (সামনে তাকাতেই হাত তুলে দেখিয়ে) ঐ যে বা, টাকা নেওয়া লোকটা! (তবে লোকটা এদিকেই আসতে ধরছিল।)
(সবাই তাকায়। মাহফুজের চোখ পড়তেই লোকটা নিজেকে আড়াল করতে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে)
আলফ্রেড : মাহফুজ, সুবর্ণা সাহা, চল না ওকে ধরে ফেলি।
সুবর্ণা : হা আলফ্রেড চল চল…
তিনজনে যেয়ে ফিরে আসে না পেয়ে
মাহফুজ: নাই পালিয়েছে, বেটা টোকাই। লোকটাকে বলে, কাকা, ওরা নেশাখোর। রক্ত বেচে নেশা কিনে খায়।
সুবর্ণা: চাচা, ওদের রক্ত নিতে নাই।
আলফ্রেড: রক্ত সব সময় চেনাজানা আর ভালো উৎস থেকে নিতে হয়।
মাহফুজ: কাকা, সুন্দরগঞ্জের অনেক পড়ুয়া ছেলে মেয়ে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, রক্ত দেওয়া, এসব নিয়ে কাজ করে। সবাই ভালো ছেলে মেয়ে।
লোক: হ বাবা, তোমার ঘরক দেখিয়াই তো বুজনো। তোমার ঘরক না পাইলে যে কি হইলো হয় বাবা!
আলফ্রড: যা হোক কাকা সমস্যাটা আপাতত মিটে গেল তো। শোনেন, মাহফুজ হোসেন আর সুবর্ণা সাহা আজ রক্ত দিল। পরেরবার যে এক ব্যাগ লাগবে আমার ছোট ভাই দেবে। ওর গ্রুপের সাথে মিল আছে।
লোক: ঠিক আছে বাবারে। কি যে উপকার করনেন! তোমার ঘরে ভালো হউক বাবা।
মাহফুজের দিকে দেখে, বাবা, তোমরা এ্যাটে কি করেন?
মাহফুজ: আমরা তিনজনেই ভার্সিটিতে পড়ি। এদিকে একটা কাজে এসেছিলাম।
লোক: খুব ভালো বাবা, খুব ভালো। বাবারে, যে বেটাক দেখলেন( সাথের সন্তানকে দেখিয়ে), ওই শুদ্ধায় সুন্দরগঞ্জত তোমার ক্লাবত যায়া নাম দেমো বাবা। ওই য্যান তোমার গুলার কাম দেখি তোমার মত হয়।
তিন জনে যেতে যেতে বলে, আসি চাচা। ফোন নাম্বার তো থাকলো, যোগাযোগ হবে।
লোকটি যেতে যেতে বলে: দুনিয়াত কি খেলা গো! কাইয়ো রক্ত নিয়া ব্যবসা করে, কাইও জেবন বাঁচাবার জন্যি দেয়…

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge