বুধবার, ০৭ Jun ২০২৩, ০৯:৪২ অপরাহ্ন

গল্প#মেহেদীর রঙ-নিলুফার জাহান রুবাইয়া

গল্প#মেহেদীর রঙ-নিলুফার জাহান রুবাইয়া

আপু, আপনি মেহেদী দেবেন না?
– না, আপু। আমি মেহেদী দেই না।
– আপনি এতো সুন্দর করে সবার হাত রাঙিয়ে তোলেন অথচ আপনার নিজের হাত স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে থাকবে!
– আমার জীবনটাই স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে যেখানে। সেখানে হাত রাঙ্গিয়ে তুলে আমি কি করবো!
– যদি কিছু মনে না করেন আপনি আমাকে বলতে পারেন কী কারণে আপনার জীবন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে।
– কিছু জিনিস না মনে করাই ভালো। আমার কথা বাদ দেন। আপু আপনি হাতে কারো নাম লিখবেন?
– জি আপু। ❝মশিউর❞ এই নামটা লিখে দিয়েন।
– আপু এটা কি আপনার হাজবেন্ডের নাম!
– না আপু।
– গত ৩ বছরে আমি আপনার হাতে যতবারই মেহেদী দিয়ে দিয়েছে ততোবারই আপনি আপনার হাতে এই নামটি লিখে নিয়েছেন। আমি কি জানতে পারি যে কে এই ❝মশিউর❞!
– উনি আমার বাবা।
কথাটা শুনে মেহেদি আর্টিস্ট মিম আঁতকে উঠল। আমি লক্ষ করলাম আপুর চোখ ছল ছল করছে।
– আপু আপনি আমার কোনো কথায় কষ্ট পেয়েছেন?
– না তো।
– তাহলে আপনার চোখে পানি কেন?
– ওহ! এটা তেমন কিছু না মাঝে মাঝে এমন হয়।
– আপু আপনি একটু রেস্ট নেন। একটানা দিতে গিয়ে আপনার চোখে চাপ পড়ে যাচ্ছে।
– লাগবে না। বেশি দেরি হলে বাড়ি যেতে রাত হবে।
মিম বলতে থাকে আপু আপনি শুনবেন আমার জীবনে কেন রঙ হারিয়ে গেছে কেন আমি মেহেদী পড়িনা !
– হ্যাঁ আপু।
– গত তিন বছর আগে আমি আমার বাবার কাছে চাঁদ রাতে জেদ ধরি মেহেদী আনার জন্য। বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়াই বাবা মেহেদী আনতে যায়। কিন্তু আর বাবা বাড়িতে ফিরে না। তারপর থেকে আমি আর কখনো মেহেদী পড়িনি। যে মেহেদীর জন্য আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি সেই মেহেদী আমি কি করে পড়তে পারি! বাবা চলে যাওয়াতে আমাদের আর্থিক অবস্থা অনেকটা অসচ্ছল হয়ে যায়। যার কারনে আমি এই সবাইকে মেহেদী দিয়ে বেড়াই।বাবা আমার হাতের মেহেদী খুব পছন্দ করতেন সব সময় প্রশংসা করতেন। বছরের বেশিরভাগ সময় আমার হাতে মেহেদী থাকতো। বাবা চলে যাওয়ার পরে আমি আর মেহেদী পড়িনি। যাই হোক আপু, দেখুন তো সব ঠিক আছে কি না!
– জ্বী! একটা কথা বলবো আপু।
– আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটে তার যেমন খারাপ দিক আছে তেমন ভাল দিকও আছে। আপনি একবার ভাবুনতো আজ আপনার বাবা পৃথিবীতে থাকলে আপনার হাত কি এভাবে খালি হতে দিত! অবশ্যই আপনার হাতের মেহেদি থাকতো। আপনার বাবা যেখানেই থাকুক সেখান থেকেই দেখছেন আপনাকে। আপনার বাবা যখন দেখবে আপনার হাতে মেহেদী নেই এবং তার জন্য আপনি মেহেদী পড়ছেন না। তখন তিনি আরও বেশী কষ্ট পাবেন। তাই আপনার উচিত আপনার বাবার কথা ভেবেও মেহেদী পড়া।৷ জীবনে পজেটিভ জিনিসগুলোকে আকঁড়ে ধরে বাঁচতে হয় আপু।
– আজকে আমি যাই আপু। আপনাকে অগ্রীম ইদ মোবারক।
মিম বাড়িতে ফিরে আসে…
মিমের মা : মা সবাইকে তো মেহেদী দিয়ে দিলি তুই দিবি না।
মিম : মা, তুমি তো জানোই আমি মেহেদী পড়ি না।
মিমের মা : এভাবে নিজেকে কতদিন কষ্ট দিবি?
মিম : আক্ষেপ ও কষ্ট নিয়ে অনেক জিনিস আমরা আমাদের জীবন থেকে ত্যাগ করে ফেলি। যেগুলো আমরা কোনদিনই ত্যাগ করতে চাই না।
মিমের মা : তোকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে তোর বাবাও ওপারে কষ্ট পাচ্ছেন।
মিম তার মাকে জড়িয়ে ধরে আজকের সব কথা বলে। সাথে আরো বলে, ❝কতটা ক্লান্ত হয়ে গেছি জানো মা, যতটা ক্লান্ত হলে মানুষ বাঁচার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলে। যতটা ক্লান্ত হয়ে গেলে নিজেকে নিজে হারিয়ে ফেলে। আমি ততটাই ক্লান্ত হয়ে গেছি। ভিতরে ভিতরে একদম শেষ হয়ে যাচ্ছি মা। কাউকে কিছু বলতে পারছি না, চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কান্না করতে পারছি না, কাউকে বোঝাতে পারছিনা কেমন আছি, কি করছি, কিভাবে কাটছে আমার দিন! শুধু এটা জানি আমি ভালো নেই। সত্যিই আমি ভালো নেই। আমার কিছু ভালো লাগে না, মা। ❞
মিমের মা : মেয়েটা তো ঠিকই বলছে। তোর বাবা থাকলে তোর হাত কি কখনো ফাঁকা থাকতো ? আয় তো আজ আমি তোর হাতে মেহেদী পড়িয়ে দিবো। মেহেদীর রঙ যেমন হাতকে রাঙিয়ে তোলে৷ ঠিক তেমনি তোর জীবনকেও রাঙিয়ে তুলবে।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge