মঙ্গলবার, ০৬ Jun ২০২৩, ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন

তন্ময়ের অষ্টপ্রহর পর্ব : ২-মো. রোকনুজ্জামান

তন্ময়ের অষ্টপ্রহর পর্ব : ২-মো. রোকনুজ্জামান

একটু পরেই সন্ধ্যা নেমে এলো। বাইরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। ট্রেন ছুটে চলছে গন্তব্যের দিকে, ট্রেনের ভিতরে লাল লাইটের হালকা আলো। সবাইকে সুস্পষ্ট না দেখা গেলেও হালকা আলোয় সবার চেহারা নির্দিষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে। তনু নীল রঙ এর একটা পাঞ্জাবি পরে জানালার কাছে বসে আছে, পাশেই প্রবীর। নীল রং তনুর ভীষণ পছন্দ। তনু দেখতে অনেকটা উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের। তার উচ্চতা ও দৈহিক গড়ন নজর কারা মত। সব সময় হাস্যজ্জ্বল থাকে সে। কি যেন এক অপরূপ মায়া তার মধ্যে বিরাজমান। তন্ময়ের একটা বিশেষ দিক হলো সে যে কাউকেই তার মায়ায় ফেলতে পারে এবং সেটা খুব সহজেই। মাঝে মধ্যেই সে একটা চশমা পড়ে, অবশ্য চোখের সমস্যার জন্য নয়। এটা মূলত ফ্যাশন বা শখের বসেই।
এদিকে ট্রেনের ভিতরে সবাই নিশ্চুপ! রাতও বেড়ে যাচ্ছে। কেউবা ঘুমাচ্ছে কেউবা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে আছে। তবে তনু তখনও মাঝে মাঝে মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছিলো। মেয়েটার আচরণে বোঝা যাচ্ছিলো, সেও তনুর তাকানোকে বেশ উপভোগ করছে। হঠাৎ করেই পাশের সিট থেকে একজন মহিলা বলে উঠলো, রাইসা তোর যদি খুব শীত করে তাহলে সোয়েইটার টা পরে নিস। তনু নিশ্চিত হলো, মেয়েটার নাম রাইসা। রাত বেড়ে যাচ্ছে ট্রেন ছুটে চলছে কুমিল্লার দিকে। তনুরা মূলতঃ তার বাবার বন্ধুর বাসায় উঠবে। এবং সেখানে মাস খানেক থাকবে। ময়নামতী শালবন বিহারের কাছেই তার বাবার বন্ধুর বাসা। রাত তিনটায় একবার যাত্রা বিরতির পর সকাল দশ টায় তারা ময়নামতী পৌঁছালো।
ট্রেন থেকে নামার সাথে সাথেই প্রবীর দেখতে পেল বিশ কিংবা একুশ বছরের একটা ছেলে প্লে কার্ড হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সেখানে লেখা আছে (তনু ভাই)। ছেলেটার কাছে যেতেই সে আগ্রহ ভরা কন্ঠে বলে উঠলো, আপনি তনু ভাই নাকি? রংপুর থেকে এসেছেন! তন্ময় উত্তর দিলো, হ্যাঁ আমি তনু। রংপুর থেকে এসেছি।
ছেলেটি তনুদের দেখে খুশীতে আত্মহারা! আসলে সে কি বলবে সে নিজেই বুঝতে পারছে না। একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে। প্রবীর তার সাথে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে।
একটু পরেই তারা পৌছে গেল। তনুর বাবার বন্ধুর নাম সমরেশ আলী। তিনি একজন অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য। তনুদের দেখে তিনি খুবেই খুশি হলেন। সমরেশ আলী বলতে লাগলেন, বাবা তোমরা এসেছ আমি খুবেই খুশি হয়েছি। আমি আর তোমার আন্টি 2 দিন থেকে তোমাদের আসার অপেক্ষায় আছি। তোমার বাবা ছিলেন, আমার সব থেকে কাছের বন্ধু। আর তোমাদের আসার খবর শুনে আমি কতটা খুশি হয়েছি সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। আচ্ছা বাবা তোমরা ফ্রেস হয়ে বিশ্রাম নাও। পরে তোমাদের সাথে বিস্তারিত কথা হবে।
যে ছেলেটা তনুদের ইস্টিশনে রিসিভ করতে গিয়েছিলো তার নাম মিজবাহ। সে একে একে বাসার সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। কিন্তু ততক্ষণে তনুর চোখ কপালে উঠে গেল। এ কি দেখছি, এটা তো সেই মেয়ে যার সাথে ট্রেনে এসেছি। মেয়েটাও অনেকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। একটু আড়াল গিয়ে তনু মিজবাহ কে বললো এই মেয়ে কে? মিজবাহ তখন সব খুলে বললো। যে এনারা দিনাজপুর থেকে এসেছে, ঐ যে মহিলাটাকে দেখছেন উনি সমরেশ চাচার শালিকা (বউয়ের বোন) আর মেয়েটা হলো ওনার মেয়ে।
তনুরা আর কথা না বাড়িয়ে সোজা রুমে চলে গেল। অনেক দূরের পথ জার্নিতে ক্লান্ত হয়েছে, বিশ্রাম নিতে হবে। সকাল গড়িয়ে বিকাল হয়েছে। প্রবীর তনুকে বললো, চলো বাহির থেকে একটু ঘুরে আসি। বাইরে বের হতেই দেখলো সমরেশ আলী উঠানে বসে। তিনি বললেন, বাইরে ঘুরতে যাবা নাকি? জ্বী আংকেল একটু ঘুরে আসি। একাই যেতে পারবা তো? এই রাস্তাগুলো কিন্তু অনেকটা পাহাড়ি অঞ্চলের মত আকাঁবাকাঁ পথ, অনেকটা জঙ্গল। সব মিলিয়ে অসুবিধায় পড়তে পারো। আচ্ছা দাঁড়াও আমি বানুমতী আর রাইসাকে তোমাদের সাথে পাঠাচ্ছি। আচ্ছা তার আগে পরিচয় করিয়ে দেই, বানুমতী আমার মেয়ে ও কলেজে পড়ে (দ্বাদশ শ্রেণি) আর রাইসা আমার শালিকার মেয়ে ও অনার্স ২য় বর্ষে পড়াশুনা করে। বানুমতী আর রাইসা তোমাদের ঘুরতে নিয়ে যাবে। ঘুরে আসো। রাতে তোমাদের সাথে কুমিল্লা ও তোমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত কথা হবে।
সবাই হাঁটতে শুরু করলো। তবে প্রবীর একটু আনমনা স্বভাবের। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলে না। বানুমতী চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে, যেকোন কথা যেকোন পরিস্থিতিতে মুখের উপর বলাই তার স্বভাব। তনু বানুমতীকে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা বানুমতী আমরা কোন দিকে যাবো? উত্তর দিকে একটা দ্বীপের মত পাহাড় আছে। আমরা স্থানীয় ভাষায় সেটাকে লালমাই দ্বীপ বলি। মূলত পুরো পাহাড় টাই লাল মাটির, সেজন্য এর নাম লালমাই দ্বীপ। আচ্ছা চলো তাহলে লালমাই দ্বীপেই দেখতে যাই।
রাইসা তখনও চুপ করে আছে। তার দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা নত জানুর মত। সে শুধু সবার কথা শুনে যাচ্ছে। এদিকে তনু ট্রেনে ভালো করে রাইসাকে দেখতে না পারলেও এবার তার সাথে পথ চলার সৌভাগ্য হয়েছে। অনেকটা মিষ্টি প্রকৃতির মেয়েটা। নরম কন্ঠে মধু মিশিয়ে কথা বলতে জানে। তার চাহনি যেকোন পুরুষের হিমালয়কেও চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে পারে নিমিষেই। তাহার আনত দৃষ্টি যেকোন পুরুষকেই খুন করার জন্য যথেষ্ট। দৈহিক গড়নে সে যেন বিধাতার এক বিশেষ নেয়ামত। তনু এবার রাইসাকে উদ্দেশ্য করে বললো, আচ্ছা আপনি সেই মেয়েটা না? যাদের সাথে আমরা ট্রেনে একসাথে এসেছি। রাইসা একটু হেসে বললো হ্যাঁ আমি ঐ মেয়েটাই যার দিকে আপনি বার বার তাকাচ্ছিলেন। এ কথা শুনে অনেকটা লজ্জায় পড়ে গেল তনু। এ যেন মুখের উপর খাড়ার ঘা। এদিকে সবাই (বানু, প্রবীর, রাইসা) অট্ট হাসিতে ফেটে পড়লো। তনু লজ্জায় মাথে নিচু করে বলতে লাগলো, এ যে অপদার্থের তীর্থযাত্রা।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge