অদৃশ্য শক্তির কি অসাধারণ ক্ষমতা! যে শক্তি মানুষে মানুষে যুদ্ধের সূচনা করে দেয়, যে শক্তি প্রতিবেশীর থেকে প্রতিবেশী, বন্ধু থেকে বন্ধুর, আত্মীয় থেকে আত্মীয়ের, সন্তান থেকে বাবা- মা’র, ভাইবোন থেকে ভাইবোনকে আলাদা করে দেয় সেই জঘন্য অপশক্তির প্রতি,- অদেখা ভয়ার্ত সত্ত্বার প্রতি আছে আমার রাগ, দুখ, ক্ষোভ, ঘৃনা!
একজন মানুষ সে যতই সৎ, বিবেকবান, বিজ্ঞানমনষ্ক, স্বশিক্ষিত, নীতিবান, সত্যবাদী, পরোপকারীই হোক না কেনো, কোনো এক অজানা শক্তি নিয়ে তার ভেতর কোনো প্রকার প্রশ্নের উদ্রেক হলেই তার সমস্ত দুধে চ্যানা পড়ে দুধ কেটে যায়, সবার দৃষ্টিতে তাঁর পরিচয় হয় মোনাফেক -কাফের-পাপী বান্দা হিসেবে। তাঁর ভালো- ভালো কর্মকাণ্ড তখন সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারায়। তাঁর দিকে তখন বেশির্ভাগ লোকের তির্যক দৃষ্টি গুলো এলোপাথাড়ি ভাবে পড়তে থাকে। এ অসহায়ত্ব নিয়ে একা হয়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকেনা শেষমেশ।
ব্যক্তিগত বিষয় গুলো ব্যক্তিগত অবস্থায় থাক। এ নিয়ে কারো কোনো বুকজ্বালা থাকা উচিৎ নয়। কিন্তু ব্যক্তিগত বিষয় গুলো ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে বেড়িয়ে তা যখন গোটা সমাজ এবং রাষ্ট্রের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন কিছু সচেতন লোক
নিজেকে উতসর্গ করতে প্রস্তুত হয়ে যায়, সে উতসর্গ বা কোরবানি স্বপ্ন থেকে পাওয়া নয়,
পাওয়া নয় ঐশীশক্তির মাধ্যমে বরং তা শুধু মানবিক, যুক্তি এবং নৈতিকতার প্রয়োজনে।
আমার কাছে সুসম্পর্ক সব কিছুর উর্দ্ধে। জন্মের পড়ে ধীরেধীরে বেড়ে ওঠার সময়ে যে সম্পর্কগুলোর সাথে পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা পর্যায়ক্রমে নিবিড় থেকে নিবিড়তর হয়েছে
তাকে অস্বীকার বা জবাই করে ফেলা সত্যি খুব অসম্ভব ব্যাপার!
বর্তমানে আমার একটি বিড়াল এবং তিনটি কুকুর আছে। কিন্তু আমার বিশ্বস্ততা নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে এবং বিশ্বস্ততার পরিচয় পেতে কোনো অদৃশ্য শক্তি যদি আমায় আদেশ করে আমার এই পোষা প্রিয় প্রাণীদের জবাই করে বিশ্বস্ততা প্রমাণ করার জন্য তাহলে তা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া খুবই অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
রক্তে রাঙা দিন ফিরে এলেই মনে পড়ে যায় এমনি এক করুন স্মৃতিকথা। মনে পড়ে যায় আমার প্রিয় খালাতো বোন নাহিদের কথা। নাহিদ আমার ছোটবোন। ওর মাঝে অসাধারণ মেধা, উচ্চশিক্ষা, জ্ঞান, বুদ্ধি- যা আমাকে অবাক করতো তাই তুলনামূলক ভাবে নাহিদ ছিলো আমার অতি প্রিয়, স্নেহের ও আদরের। কিন্তু ৬ বছর আগে এই রক্তপাত নিয়ে ফেইজবুকে দেওয়া আমার একটি যযাতির কারণে এই প্রিয় বোন আমায় তাতক্ষণিক ভাবে কোরবানি করে দেয়। শুধু এই কারণকে কেন্দ্র করে আমার সাথে নাহিদ সমপর্কের অবসান ঘটিয়ে ফেলে। আমার উপর তাঁর অত্যাধিক ক্রোধ বাড়তে থাকে আর আমিও ক্রমশ মানসিক কষ্টে ভুগতে থাকি। এভাবে অনেক দিন যায়
কিন্তু সেই ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে বছর খানেক আগে।
একদিন আমার এই প্রিয় বোন অনেক রাতে আমায় ফোন করে যখন দুখ প্রকাশ করেছিলো সেই মুহূর্তে আমার সকল প্রশান্তি, সকল আনন্দ ফিরে এসেছিলো। এ কোনো ত্যাগের মহিমায় নয় বরং শেষ পর্যন্ত সম্পর্ককে ত্যাগ করতে না পারার মহিমায়। নাহিদ আজ মুক্ত। সকল শংকট আর সংকোচের আশংকা থেকে আমরা মুক্ত। মুক্তি থাকে আলোয় আলোয়। নাহিদ বোন, তোমাকে অনেক ভালোবাসি, অনেক।
আমরা যখন আমাদের চোখে বাঁধা পট্টি বা বাঁধন খুলে দিতে সক্ষম হই তখন তৃতীয় নয়ন আর তৃতীয় মাত্রা আমাদের কাছে খুলে যায় আর তখন সকল যাত্রাপথে সাথে থাকে নিজের জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনা, মানবতা আর ভয়হীন মুক্তির আনন্দ।
Leave a Reply