রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন

বেস্ট সেলার-মোশফিকুর রহমান

বেস্ট সেলার-মোশফিকুর রহমান

লগডাউনে চলাফেরা দায়,তার উপরে বইমেলার অবস্থা এবার আরও করুন! স্বভাবতই কবি মৃদুল চন্দ্র সমাদ্দার দাদার মনটা বেজায় খারাপ। তা সেদিন বাজারে দাদার সাথে হঠাৎই দেখা, তা দাদাকে দেখেই এগিয়ে গেলাম। দাদা অত্র এলাকার একজন বিখ্যাত লেখক,চারদিকে তার বেশ নামডাক। দাদার দুই দু’টো একক বই প্রকাশিত হয়েছে এবারের বইমেলায়। দাদাকে আদাব দিয়েই জিজ্ঞেস করলাম দাদা তোমার বইয়ের বাজার এবার কেমন গেলো?
-আর বলিসনা,প্রকাশক জানালো আমার মোটে চারখানা বই বিক্রি হয়েছে বইমেলায়! এ কথা শুনেই তো তোর বউদি পুরাই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে! বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে বলেছে,হয় বউ নিয়ে থাকো নয় তো তোমার এই ছাই পাশ নিয়ে! এবার বোঝ, এবারের বইমেলা নিয়ে কতটা সুখে আছি!
আমার জানামতে তুমি তো অনেক ভালো লেখক, তা তোমার বাজার এভাবে পরে গেলো কেন? কয়েক বছর আগে তো তোমার প্রচুর বই বিক্রি হতো!
-আমার আসলে বয়স হয়েছে, এদেশে বয়স্ক লেখকদের বই এখন আর তেমন চলেনা! এছাড়াও যদি আমি মহিলা লেখক হতাম আর চেহারা একটু ভালো হতো তাও না হয় একটু আধটু চলত!
কী যে আজগুবী সব কথা বলোনা তুমি?
-আজগুবী নয়রে পাগল, ফেসবুকের এই দুনিয়ায় এটাই বাস্তব! ফেসবুকে যার যতো বেশি ফলোয়ার তার বাজার ততো বেশী! তুই কী এবারের রকমারি ডট কমের বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকা দেখেছিস? সবকটা ডানাকাটা পরী! বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সবাই তাদের বই নেয়ার জন্য যেনো উপচে পড়ছে! বইমেলায় তাদের বই নিচ্ছে আর সেলফি তোলার নাম করে রূপবতী হালকা বয়সের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল পড়ুয়া নতুন নতুন লেখিকাদের সাথে ক্লোজ হয়ে ছবি তুলছে! আর ফেসবুকে আপলোড দিচ্ছে!
হুম, বিষয়টা আমিও লক্ষ্য করেছি!
-এবার তো এক নতুন সুন্দরী অষ্টাদশী লেখিকার বই মেলাতেই তৃতীয় সংস্করণও শেষ! যেখানে নামীদামি প্রকাশনীর প্রকাশকরা অনেক বিখ্যাত লেখকের বই প্রকাশ করেও মাথায় হাত দিয়েছেন!
কী আর করবা, আজ না হয় কাল করোনা কাল কেটে গেলে বইয়ের বাজার এমন থাকবেনা! তোমারও সুদিন নিশ্চয়ই ফিরে আসবে দাদা, চালিয়ে যাও!
-আমার আর চালানো! এবার মনে হয় সংসারটাই আর চালানো সম্ভব হবেনা।
কেন?
প্রকাশকরা আমার বই ছাপবেনা,বলে কিনা আপনার তো লেখা অসাধারণ,যদি বাসায় কোনো সুন্দরী মেয়ে থাকে তাহলে আপনার লেখাটা তার নামে চালিয়ে দেন দেখবেন বই বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকায় চলে আসবে! সেটা আপনার, আমার সবার জন্যই মঙ্গল। আমি কী করব, ভেবে কূল পাইনি! শেষে নিজের অর্থায়নে বই বাহির করতে চাইলে তবেই প্রকাশক রাজি হয়েছেন। প্রতি বছর এই বই বিক্রির টাকা দিয়ে সারা বছর ধরে সংসার চলতাম,তাই এবার সুদের টাকা নিয়ে বই বের করলাম! পুরা টাকাটাই জলে গেলো। এবারের বইগুলো হয় ফ্রী ফ্রী বিলাতে হবে,নয়তো ভাঙ্গারীর কোনো দোকানে কেজি দরে বিক্রি করতে হবে!
কেন, প্রকাশনী হতে তোমাকে এখন রয়্যালিটি দেয়না?
-আমি যে একজন কবি-সাহিত্যিক, সেটাই তো তারা চিন্তা করেনা, আবার রয়্যালিটি! কথা বলতে বলতে মৃদ্যুল দার চোখের কোনে দু’ফোটা অশ্রু চলে এসেছে! আমি দেখে ফেলেছি, তাই একটু লজ্জায় পরে গেলেন! তৎক্ষণাৎ হাত দিয়ে মুছে, কি এক ব্যস্তার কথা বলে দ্রুত চলে গেলেন। তার চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে,সে আভা কিছুটা তার চোখে-মুখে স্পষ্ট!

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge