১ম বিপর্যয়
মেদিনীপুর লোকাল…
এগ্রাতে পৌঁছানোর পর…
কবি বন্ধু সুজিত পাত্র , অগ্রজ কবি মনোতোষ আচার্য এবং আমি সেই বিকেলে ঘুরতে বেরোনোর কথা মোহময়ী নগরীতে। উদ্দেশ্য ছিল মোগলমারীর ইতিহাস সংক্রান্ত কিছু বইপত্র খোঁজ করা।
আসলে উড়িষ্যা বর্ডার থেকে দীর্ঘ বাস জার্নির পর অপেক্ষা করছিলাম তার সাথে সাক্ষাতের জন্যই। সে ফিরছিল বাঁকুড়া থেকে। তখন জুন মাসের ত্বক ঝলসানো ভ্যাপসা গরমের বাড়াবাড়ি চারিদিকে। আমিও যেন সোডিয়ামে ভিজে একেবারে সিক্ত। হঠাৎ দেখি দোকানে দোকানে ছাল ছাড়ানো মুরগিগুলো ঝুলছে বাঁকানো কোটায় । একটু ব্যতিক্রমী মনে হোলো এখানের মাংসের দোকানগুলি।
এবার খাদ্য অন্বেষণ শুরু…
মধ্যাহ্নে খাবার জুটলো রসনা নাম্নী হোটেলে। মাছে ভাতে বাঙালি বলে কথা। সেখানে একটি নতুন মাছ দেখতে পেলাম। কৌতূহলী হয়ে নিজেকে চেপে রাখলাম খানিক সময়। বড় ডালায় বাটিতে বাটিতে নানা ধরণের মাছের পদ ও সবজি সাজিয়ে একগাল হাসি মুখে হাজির হলেন নাড়ু গোপালের মত দেখতে এক কর্মচারী। আঙুল দিয়ে ইশারা করে দেখাতে শুরু করলেন ডাল, মুড়িঘন্ট, উচ্ছে ভাজা, আলু চিপস, মোরোলা, ইলিশ, চিংড়ি, রুই, কাতলা কালিয়া, পাবদা ,সমুদ্র বাউল, ভেটকির ঝাল, লোটে মাছ কষা এবং পাঁপড়- দই।
তিনি হাসিমুখে বললেন- বলুন বাবু কি কি নেবেন? বলুন!
সমুদ্র বাউল নামটি শুনতেই চমকে গেলাম। মাছের নাম আবার সমুদ্র বাউল! সে কি!বেশ! তবে সেটিই খাওয়া যাক…। রসনা তৃপ্তি বলে কথা!
বেশ বেশ… একদম যাকে বলে কব্জি ডুবিয়ে বাঙালির মধ্যাহ্নভোজ।
বেরোনোর সময় মৌরি মুখে দিতেই মুঠোফোনে সংযোগ ঘটলো পাত্র মহাশয়ের সাথে।
অবশেষে সাক্ষাৎ পেলাম তার। একটু নস্ট্যালজিক হয়ে পড়লাম।
আমাদের দেখা হচ্ছে প্রায় পাঁচ বছর পর। তাই আনন্দ, আবেগ, ভালোলাগা উচ্চ সীমায় পৌঁছে গেলো।
আলাপ হোলো আরও এক হৃদয় প্রসারী মানুষ কবি মনোতোষ আচার্যের সাথে। অদ্ভুত পান্ডিত্য তার। তিনি গভীর শোকার্ত মুহূর্তেও দেখা করতে এলেন। কবিতা শুনলাম তার। সংযুক্তি ঘটালেন মোগলমারীর ইতিহাসের টুকরো টুকরো তথ্য দিয়ে। ঋদ্ধ হোলাম। তারপর পরিচয় আর আত্মীয়তায় আর এক বন্ধুজন কাছে এলেন, তিনি ইংরাজি সাহিত্যের শিক্ষক শ্রী কল্যাণ মান্না মহাশয় । সদা হাস্যময় মানুষটি সঙ্গ দিলেন নিবিড়ভাবে। সকালে মুড়ি ঘুগনি আর চপ এখানের চলতি খাবার। মান্না বাবু ঘুরতে নিয়ে গেলেন তার যন্ত্রচালিত দ্বিচক্রযানে। চোখে ভাসছে সেই স্মৃতি দৃশ্যগুলি।
আমার পরবর্তী গন্তব্য উড়িষ্যার বারিপাদা। ব্যোমকেশ সেখানে অপেক্ষা করছে… জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। হঠাৎ একটি অজানা নম্বরের ফোন এলো! একদম নতুন কণ্ঠ… জানিনা কি হবে… জানিনা কি ঘটতে চলেছে…!
তবে এগরা থাকার সময় সীমিত হয়ে এসেছে। আবার নতুন পথচলা…
সুজিতের রান্না করা সর্ষে ইলিশ আজও মনে পড়ছে। আমরা তো ইলিশ আর চিংড়ির লড়াই সাঙ্গ করে সাবাড় করে দিয়েছিলাম ছুটির দিনে। যেন রবিবারের দুপুরেই হোলো ঘটি আর বাঙালের তীব্র মিলন ,রসনা তৃপ্তিতে। সঙ্গে আনারসের চাটনি।
মনে পড়ে…
২০১২ সালের বইমেলা থেকে ফিরতে ফিরতে কত ঘটনা, কত প্রিয় স্মৃতি। ডাউন মেমোরি লেন। স্মৃতিময় সেই সকল দিন জাবর কাটছে অন্তরমহল। সেবছর বইমেলায় বন্ধু, কবি তপোন দাশের কাব্যসন্তান মিমিক্রি’র গন্ধ নিতে নিতে চায়ে চুমুক। আহা..! আর সুজিতের বন্দরের কথাগুলি নিয়ে কত ভাবাবেগ…! সুতরাং প্রকাশনা থেকে সেই বছরই প্রকাশিত হয়েছিল পুস্তিকাটি। ওই বছর প্রকাশ পেয়েছিল শূন্য দশকের অন্যতম কবি চন্দন বাঙ্গাল এর কাব্যগ্রন্থটিও, সতেরো মিনিটের স্মিতা মণ্ডল। আরও সংযোজন হয়েছিল কবিতা স্বজন সুবন্তময় ডাকুয়ার ‘প্রবাল দেশের হাততালি’ সুবন্ত, চন্দন, সুজিত, আমি, এগরা, অথবা টিকিয়া পাড়া, প: মেদিনীপুরে ছাত্রীনিবাসের পিছনের হোটেল, ক্ষুদিরাম বসু’র বসতবাটি, কবিতাপাঠ, গান আর সুজিতের লিরিক এবং নীল রংয়ের গিটার যেন এখনো কানে কানে ঝংকার তোলে…তুলছে… এবং তুলছেই…
আজ ছবির এলবাম খুঁজতে গিয়ে এই ছবিটি বেরিয়ে পড়লো। ভ্রমণের ৯নং ডায়রিতে আরও একটি পাতা সংযোজিত হোলো। আবার অপেক্ষা…
*(ক্রমশ)
Leave a Reply