২০০৪ খ্রিঃ ২১ আগষ্ট প্রকাশ্য দিনের বেলা গ্রেনেড হামলা করে তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা করেছে স্বয়ং রাষ্ট্র। হত্যাচেষ্টা সফল হোলে আজকের ইতিহাস অন্যভাবে লিখতে হতো। সেদিন খোদ রাষ্ট্র তার মৃত্যু কামনা করেছিলো। ১৯৭৫খ্রিঃ ১৫ আগষ্ট তিনি ৩২ নম্বরের পিত্রালয়ে থাকলে তাকেও সেদিন হত্যা করা হতো। তিনি বেচে গেছেন তাই ২১ আগষ্টের প্রয়োজন হয়েছিলো। পরিকল্পনাকারীরা বঙ্গবন্ধুর আট বছরের শিশুপুত্র রাসেলকেও দয়া করেনি একই কারণে। রাষ্ট্র নিজেই ২১ আগষ্ট হত্যাচেষ্টা ধামাচাপা দিতে চেয়েছে। যে কেউ প্রশ্ন করতে পারেন কেন এই হত্যা চেষ্টা? কারণটা অল্প এবং খুবই সহজঃ-
১৭ মে ১৯৮১খ্রিঃ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যদি দেশে ফিরে না আসতেন-
১। অন্য কেউই বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার করতে পারতো না। ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ ও সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার বন্ধ করে রাখা হোয়েছিলো। আদালত বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার করতে বিব্রতবোধ এবং অপারগতা প্রকাশ করেন।
২।একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করা অন্য কারো পক্ষেই সম্ভব ছিলো না। ১৯৮৬ খ্রিঃ আওয়ামীলীগ জোড়াতালি দিয়ে যে সরকার গঠন করেন যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার মতো ক্ষমতা তাদের ছিলো না। তবে সে সরকার একটা শুরু করতে পেরেছিলো।
৩। জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ নির্মূল হওয়াটা ছিলো অসম্ভব। যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতা বিরোধীরা ছিলো সরকারের অংশ্। মৃত্যু তাকে তাড়া করে ফিরছে। খালেদা জিয়াকে কেউ একটা ঢিলও মারে নাই।
৪। বাংলাদেশের জনগণকে দুই ভাগে ভাগ করা হোয়েছিলো-মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং বিপক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে এবং বিপক্ষে, আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং বিপক্ষে- এটা ছিলো ওপেন সিক্রেট।
৫। করোনাভাইরাস অতিমারীর পরেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পৃথিবীর সবগুলো সূচকে শুধু চলছেই না দৌড়াচ্ছে। ৬৬টি উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্হান নবম, সৌদি আরব অষ্টম, চিন দশম, ভারত ১৮, পাকিস্হান ৪৩, শিলংকা ৬১তম এবং বতসোয়ানা প্রথম।
৬।চুড়ান্ত বিচারে রোহিঙ্গা সমস্যায় বাংলাদেশের কুটনৈতিক বিজয় হোয়েছে। এটাও ছিলো একটা পরিক্ষা।
আজ তার ৪১তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তণ দিবস। ঘাতকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই তিনি দেশে ফিরেছিলেন। সেটি তৎকালিন মিলিটারী সরকারের পছন্দ ছিলো না।
করোনার প্রাদূর্ভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খুব বেশী প্রভাব ফেলতে পারে নাই। আইএমএফ ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের আশাবাদ বাংলাদেশ কোভিড-১৯ পেনডেমিক মোকাবেলা করেও তার রফতানি বানিজ্য সচল রাখতে সক্ষম হোয়েছে, ফলে পার ক্যাপিটা জিডিপি এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হোতে যাচ্ছে। ২০২০খ্রিঃ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৪% বৃদ্ধি পেয়ে হোয়েছে ১,৮৮৮ ডলার আর ভারতের বিগত ৪ চার বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে ১০.৫% কমে হোয়েছে ১.৮৭৭। চলতি বছর ২০২১খ্রিঃ বাংলাদেশের ৫.৪% হারে বৃদ্ধি পেলেও হোতে পারে ১,৯৯০ ডলার। আইএমএফসহ সংশ্লিষ্ট মহলের ধারনা ২০৩০খ্রিঃ মধ্যে বাংলাদেশের মতো ছোট্ট একটি দেশ পৃথিবীর ২৬তম অর্থনেতিক সমৃদ্ধ একটি দেশে পরিনত হবে। ২০১৯খ্রিঃ ১৬ কোটি মানুষের দেশ এই বাংলাদেশ ৪৫.৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য জাহাজে তুলে দিয়েছে যা ২০১৫খ্রিঃ এর চেয়ে ৪৪% বেশী আর মাথাপিছু বৃদ্ধি ২৭৫ ডলার।২০১৫খ্রিঃ পরে বাংলাদেশের বৃদ্ধি ৯.১% বর্তমানে বাংলাদেশের গড় সঞ্চয় হার ৩০.১%।
যে যেভাবেই দেখুক চিন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও পরিক্ষীত ব্যবসায়িক পার্টনার। এ বছর চিনের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা হোয়েছে ১৫ বিলিয়ন ডলারের পক্ষান্তরে ভারতের সাথে এক তৃতিয়াংশ ০৫ বিলিয়নেরও কিছুটা বেশী।
ভারতের জনপ্রিয় দৈনিক ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ এর প্রবীণ সাংবাদিক করণ থাপার একটি রিপোর্ট ছাপা হোয়েছে ঐ ইংরেজী দৈনিকে, সেটি নিম্নরুপ-
*জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভারত শতকরা ৫ শতাংশ অথচ বাংলাদেশ ৮ শতাংশ হারে এগিয়ে যাচ্ছে।
*ভারতের অর্থমন্ত্রী সীতারাম ১৫ শতাংশ হারে করপোরেট ট্যাক্স নির্ধারণ করেও চীনা বিনিয়োগ পাচ্ছে না। অথচ চীন সপ্রনোদিত হোয়ে স্মরণাতীত কালের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ বাংলাদেশেই করছে।
*ইউরোপের ছোট-বড় শহর বন্দর নগর যখন বাংলাদেশে তৈরি পোশাকে ভরে গেছে, তখন লুধিয়ানা ও ত্রিপুরায় বানানো সামান্য কাপড়ের ছোট্ট একটা অংশ জায়গা পেয়েছে। পোষাক রপ্তানীতে বাংলাদেশ চিনকেও পিছনে ফেলে প্রথম স্হান দখলের পথে।
*বাংলাদেশ যেখানে রফতানি দ্বিগুণ করেছে, সেখানে ভারতের রফতানি কমেছে দ্বিগুণেরও বেশী হারে।
*বাংলাদেশের পুরুষ ও নারীদের গড় আয়ু যথাক্রমে ৭১ ও ৭৪ বছর; ভারতে তা যথাক্রমে ৬৭ ও ৭০ বছর।
*ভারতে নবজাতকের মৃত্যুর হার প্রতি ১ হাজার জনে ২২ দশমিক ৭৩, বাংলাদেশে সে হার ১৭ দশমিক ১২। প্রতিনিয়তই কমছে।
*ভারতে শিশু মৃত্যুর হার ২৯ দশমিক ৯৪, বাংলাদেশে ২৫ দশমিক ১৪।
*৫ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার বাংলাদেশে ৩০ দশমিক ১৬ শতাংশ, যা ভারতে ৩৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
*বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী ৭১ ভাগ নারীই স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন, ভারতে এ হার ৬৬ শতাংশ।
*বাংলাদেশে ৩০ শতাংশের বেশি নারী শ্রমে যোগ দিচ্ছেন ; ভারতে এ হার মাত্র ২৩ শতাংশ। একযুগে তা ৮ শতাংশ কমেছে।
*ছেলে-মেয়েদের উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির হারে ০ দশমিক ১৯ শতাংশ হারে এগিয়ে ভারত, সেখানে বাংলাদেশ ১ দশমিক ১৪ শতাংশ হারে এগিয়ে থাকছে।
*বাংলাদেশের অবস্থা আমাদের দেশের চেয়ে শুধু ভালোই নয়, বরং তা আরও দ্রুত ভালোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পক্ষান্তরে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।
*কিছু ভারতীয় অর্থনৈতিক কারণে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে, কথাটা উল্লিখিত বাস্তবতার নিরিখে সঠিক। ভালো বেতনের কারণে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক ভারতীয় এখন বাংলাদেশে চাকুরি করেন এবং গত বছর প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে ভারতে। করোনার কারনে ভারতের ডাক্তার পাড়াগুলো খাঁ খাঁ করছে, বাংলাদেশের রোগী না আসতে পারায়।
মানুষ খুব স্বাভাবিকভাবেই উন্নত জীবনযাপনের জন্য ভালো জায়গায় পাড়ি দেয়। যদি আমেরিকা আজ ঘোষণা করে যে তারা নাগরিকত্ব দেবে, তাহলে আজই অর্ধেক ভারত খালি হয়ে যাবে। বলতে গেলে এর চেয়েই বেশি খালি হবে। লক্ষ্য করুন আমেরিকার দরজা এখন বন্ধ থাকলেও আমাদের থামানো যাচ্ছে না।’ আমরা কিন্তু ছুটছি সেই বাংলাদেশেও। নানা জরিপ ও তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশ এখন অনেক দিক থেকে ভারতীয় নাগরিকত্বের চাইতে অনেকগুণ বেশি আকর্ষণীয় ও নিরাপদ।
১৭ মে, ২০২১খ্রিঃ।
Leave a Reply