চারিদিকে ভোটের দামামা বেজে উঠেছে। তাই পথে অটোরিকশা, টমটম থেকে শুরু করে কোনো ধরনের যানবাহনই খুব একটা চোখে পড়ছে না। হুস হাস করে ছুটে চলছে যে সকল গাড়ি ওদের সামনে সেঁটে দেওয়া কাগজে লেখা ‘ ON ELECTION DUTY’ । ভোটকর্মীদের নিয়ে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার সাথে ওরা চলছে নির্ধারিত পোলিং সেন্টারে। নির্বাচনের প্রাকচিত্র এমনই হয়। অগত্যা হেঁটে কর্মস্থলে যাওয়া ছাড়া আজ আর কোনো উপায় নেই। মনকে প্রবোধ দিয়ে বললাম সকাল সকাল প্রাতঃভ্রমণ শরীরের পক্ষে হিতকর। আজ মনে হয় কোনো গাড়ি পাওয়া যাবে না। চলো এভাবেই হাঁটা শুরু করি। পথে পরিচিত দু-একজন ডেকে নানা কথা বললেন। কেউ বললেন, “কি ব্যাপার , ইলেকশন ডিউটিতে পড়েছো নাকি? এতো হন্তদন্ত হয়ে ছুটছো কেন?” বললাম , ” আজ অটো আসবে না, ওর মা খুব অসুস্থ। টুকটুকও পাচ্ছি না। আমি নিজের কর্মস্থলেই যাচ্ছি।” এখন তো সকাল সকাল ডিউটি। বাকি পথটাও হয়তো আজ হেঁটেই যেতে হবে। ভাবছি আর হাঁটছি। হঠাৎ পরিচিত ডাকে সাড়া দিয়ে বললাম কর্মস্থলে যাচ্ছি। এমন সময় উনি বললেন,”আজ তোমার অটো কোথায়?” বললাম,”উনার মা অসুস্থ। আজ আর হাঁটা ছাড়া…” বলতে বলতেই একটা সাদা গাড়ি আমার সামনে এসে ব্রেক কষল।
পাশের পরিচিত মনা ড্রাইভারবাবু ভারি অমায়িক সুরে বললেন,”দাঁড়াও দিদি, এই গাড়ি করে যেতে পারবে।” সাদা গাড়ির ড্রাইভার ভাইও ভীষণ অমায়িক সুরে বললেন,”ম্যাডাম, উঠে আসুন, আমি এই পথেই যাবো।” তারপর ভদ্রলোকের সাথে নানা আলাপচারিতায় পনেরো মিনিট সময় হুট করে কেটে গেল। বললাম,” এই তিন মাথার মোড়ে নামিয়ে দিন, বাকিটা আমি হেঁটেই যেতে পারবো।” উনি বললেন, ” আপনি যেখানে যাবেন তার পাশের ইটভাটার পাশে আমার পরিচিত কিছু লোকের সাথে দেখা করতে যাবো।” বললাম,”তবে চলুন দাদা।” উনি আমাকে স্কুলের পাশে নামিয়ে দিলেন। ভাড়া নিতে চান নি। জোর করে ভাড়া মিটিয়ে স্কুলে প্রবেশ করলাম।
উনাকে ধন্যবাদ দিয়ে এটাই ভাবছি যে চেনা নেই জানা নেই তবুও মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব আজও বেঁচে আছে। এখনও সমাজে ভালো মানুষগুলো আছে বলেই নারীরা সসম্মানে চলাফেরা করতে পারছি নির্ভয়ে। এখনও পথ চলতে অনেক ড্রাইভার ভাইদের দেখি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষকদের দেখলে গাড়ি, অটো থামিয়ে কখনো লিফট, কখনও এমনি পৌঁছে দেন। এটা উনাদের মহত্বের পরিচয়। যথাসময়ে যথাস্থানে একজনকে পৌঁছে দেওয়াতে উনারা যে তৃপ্তি পান তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ সমস্ত মানুষদের মুখেও নানা সময় শুনি টাকার অভাবে কিংবা পারিবারিক কারণে স্কুলের কিংবা কলেজের গন্ডী পেরোতে না পারার যন্ত্রণার কথা। তাই হয়তো সমাজের এই শ্রেণীর মানুষগুলো উচ্চশিক্ষিত ডিগ্রীধারী না হয়েও অনেক তথাকথিত শিক্ষিতদের থেকে মহান । তাদের এই একটু একটু সাহায্যে কত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীরা যে যথাসময়ে কর্মস্থলে পৌঁছোতে পারেন এটাই তো মনুষ্যত্বের এক বিরল উদাহরণ। এই সমস্ত হিতাকাঙ্খী ভাইদের আমার শতকোটি নমন।
Leave a Reply