শুক্রবার, ০৯ Jun ২০২৩, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন

আয়না-কামরুজ্জামান দিশারি

আয়না-কামরুজ্জামান দিশারি

কাঠের সিঁড়ির দোতলা বাসাটা অনেক পুরনো। লোকালয় থেকে দুরে সুন্দরবনের গাছ-পালা বেষ্টিত নিভৃত বাড়িটায় থাকি আমরা। বাবার বন বিভাগের চাকরি সূত্রে এই বাসাটাতেই ঠাঁই হয়েছে। বাইরে থেকে দেখলে গা ছমছম করা হরর গল্পের বাড়ির মতই লাগে।

আমাকে একা রেখে বাবা-মা শহরে গেছেন। সন্ধ্যার আগেই তাদের ফেরার কথা থাকলেও তারা ফিরছেনা। না ফিরলেও সমস্যা নেই। আমি ভয়-টয় তেমন করিনা। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় আমার সংগে তারা কোন যোগাযোগও করতে পারেনি।

সবেমাত্র বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। হঠাৎ করে বিদ্যুত চলে গেলে অনেকটা ঘাবড়ে গেলাম। ক্ষুধা লেগেছে, ফ্রিজ খুলে দুপুরের অবশিষ্ট খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর দোতলার একটা রুমে শুয়ে শুয়ে চার্জারের আলোয় বই পড়ছিলাম।

কখন ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাইনি। হঠাৎ করেই কানের মধ্যে একটা বিদঘুঁটে শব্দ ভেসে এলো। সেই সংগে বোটকা একটা গন্ধও অনুভব করলাম। চার্জারের হালকা আলোয় কিছু দেখতে না পেলেও একটা ভয় আমাকে তাড়া করলো।

এমন পরিস্থিতিতে দাদীমার মুখে শোনা একটি গল্পের সাথে ওই শব্দ ও গন্ধের মিল খুঁজে পেলাম। গল্পটা নরপিশাচের-“রক্তচোষা নরপিশাচ রাতের অন্ধকারে নির্জন এলাকা চষে বেড়ায়। তার টার্গেট কম বয়সের শিশু ও কিশোররা। সুযোগ পেলেই ঘাড় মটকে বুক চিড়ে রক্ত ও কলিজা খেয়ে হাড়গোড় ফেলে রেখে চলে যায়।”

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করেই ঘরের বাইরে কারো উপস্থিতি টের পেলাম। আবছা আলোয় মানুষের মতই কাউকে দেখতে পেলাম। দেখেই পিলে চমকে গেল-মানুষের মত দেখতে হলেও সে মানুষটা বিকৃত। চোখের মনি সাদা ও বাইরে বের হওয়া। মাঝখানে চেরা লাল লকলকে লম্বা জিহ্বাটা ছুরির ফলার মত। ওপরের পাটির দাঁত দুটো অনেকটা নেকড়ের শ্বদাঁতের মত। হাতের নখগুলো বড়শির তীক্ষ লম্বা ফলার মত বাঁকানো। বড় বড় ঘন কালো লোমে সারা শরীর ঢাকা।

আমি ভয়ে জড়সড় হয়ে গেলাম। নিজেকে কিভাবে রক্ষা করে পালিয়ে যাবো সেটাই ভাবছি। দাদীমা তার বলা গল্পের শেষ অংশে বলেছেন-” যদি কেউ নরপিশাচকে কোন ভাবে আয়না দেখাতে পারে, তবে সে তার বিকৃত চেহারা দেখে ক্ষোভে, অপমানে কাঁপতে কাঁপতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। কখনো কখনো মারাও যায়।”

যত সাহস ছিলো সব জড়ো করে পেন্সিল কাটার চাকু হাতে নিলাম। সাবধানে নিচতলায় এসে ড্রেসিং টেবিলটার পিছনে লুকিয়ে পড়লাম। রুমের দরজায় তার উপস্থিতি টের পেয়ে ড্রেসিং গ্লাসের পর্দাটা সরিয়ে দিয়ে খাটের নিচে ঢুকে পড়লাম। আবছা আলোয় আমাকে খুঁজতে গিয়ে নরপিশাচটা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়ানো মাত্রই বিদ্যুৎ চলে এলো। ঘরের বাতিটাও জ্বলে উঠলো সাথে সাথে। গ্লাসের দিকে তাকিয়েই গগণবিদারি চিৎকার করে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেল নরপিশাচটা।

আমিও দ্রুতই খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে দরোজার সিটকিনিটা খুলে চিৎকার দিয়ে দিলাম দৌড়। এরপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম, আমি মায়ের কোলে, আর বাবা মাথায় পানি ঢালছেন।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge