চলন্ত পথ এটি। চলতে চলতে পেয়ে গেলাম একটি আসন। আমি ভীষণ আসনলোভী। কেননা এই আসন পেলে জমাই টাকা কাড়ি কাড়ি। দেশ, বিদেশে বানাই আলিসান বাড়ি। তাই অমনি গেড়ে বসলাম অন্যতম টাকার খনি নামক আসনে।
চতুর্দিক দেখি সবুজের সমারোহ। ঐ আকাশে সফেদ মেঘ। যাচ্ছি মনে হয় ভেসে মেঘের ভেলায়। ভুলে গেলাম কে আমি? কোথা হতে আসলাম? আর কোথায় বা যাবো? কীইবা আমার কর্তব্য?
‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও’ থিউরি নিয়ে সুখের সাগরে যেন ভাসছি। ভাসছি স্বাধীনতার একক দম্ভে। নেই কেউ এই রাজ্যে। জবাবদিহি সেতো আদৌ সম্ভব নয়। বয়সের হিশেব কষি নি। বিশেষ চাহিদা পুনঃজাগরূক। এভাবেই কাটবে আমার জীবন। আমি স্থায়ী এ আসনে।
মড়াৎ করে গ্যালো ভেঙে আসন। সবুজের সমারোহ সব গ্যালো দূরে সরে। সফেদ মেঘ হয়ে গ্যালো কিম্ভুতকিমাকার কালো। গর্জে উঠলো বিদ্যুৎ। তুমুল বর্ষণ। ভিজে জবুথবু। বয়ঃবৃদ্ধ বলে দেহাবয়ব দুর্বল। বিশেষ চাহিদা আর জাগে না। নিতে পারছি না শ্বাস। কাঁপুনি দিয়ে উঠলো জ্বর।
এখন পাচ্ছি না খুঁজে পথ। নেই কোনো আশ্রয়। সংজ্ঞাহীন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বাইরে ন্যাওয়ার জন্য সবার মধ্যে কত্ত পেরেশানি! দৌড়াদৌড়ি করে জুটে নি পাশ।
মালেকুলমউত আসলো। জীবন নিয়ে চলে গ্যালো। দেশ জুড়ে পড়ার কথা শোকের চাদর। ওমা! দ্যাখি সবাই ফেসবুকে স্ট্যাটাসে হা হা রিয়্যাক্ট দ্যায়। অনেকে বিতরণ করলো মণ্ডা। আমার গত হওয়া বোধহয় ছিলো মহা হাসির সৃষ্টি। আসলো না গুটিকয়েক লোক জানাজায়। ভয়। যদি তাদেরও হয়।
হায় যদি সুখের সাগরে না ভেসে; সবুজের সমারোহে না ভুলে; একক স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন না করে; বিশেষ চাহিদা পূরণে ব্যস্ত না হয়ে; ভবিষ্যৎ ভেবে করতাম কাজ! অন্যের জন্যও যদি দিতাম মৌলিক অধিকারের সাজ!
তবে ডুবে যেতে হতো না আজ।
ওরাও পেতো সুখ। আমিও পেতাম আজ এ কঠিনদশা থেকে আশ্রয়।
Leave a Reply