অনলাইনে শাড়ি খুঁজতে গিয়ে প্রায় সব পেইজেই দেখে
প্রাইস দেয়া নাই।শাড়ি দেখতে দেখতে দামের জন্য জন্য
ইনবক্স করতে হয়। ধ্যাৎ। বলেই একটা পেজ পেলো প্রতিটা শাড়ির সাথে দাম দেয়া।পছন্দ হলো কয়েকটা শাড়ি।ম্যাসেন্জারে আরেকজনকে পাঠালো লিঙ্কটা।সেই বৌদিমনি বললেন
-আরে এই পেজ সুলেখাদির।ইনিতো সুলেখাদি । চিনিসনি? ঐ যে উনার ভাই ছিল নির্বান সান্ন্যাল। ওদের দাদার নামে একটি প্রাইমারি স্কুল ছিল।গলির মাথায় ছিল ওদের বাসা।মেয়েদের স্কুলের কর্নারে।বাসার সামনে ছিল বাগানবিলাস।
কিন্তু বৌদি বলার পর স্মৃতির দরজা খুলে যেতে লাগলো
একে একে।মনে পড়ে হাল্কা শীতে মখমলের জামা পাজামা পড়ে বাবা মায়ের সাথে ওদের বাসায় যেতো।
কাকীমার পরনে লাল পেড়ে ঢাকাই বিটির শাড়ি।মস্ত সিঁদুরের টিপ কপালে।দুহাতে শাঁখার সাথে সোনার বালা।কাঁসার পানের বাটায় পান সুপারী ।আর তামাকের গুড়া আর মৌরী ভাজা দিয়ে তৈরি মশলা সহকারে পান দিতেন।আর লেখা দিদি কর্পুর দেয়া সন্দেশ আর নারকেলের বরফী দিতো ওদের।বাবা মায়ের জন্য ধোঁয়া ওঠা চা।দিদির গান আবার ওর মায়ের খুব প্রিয়।কীর্তন স্টাইলের গান করতো দিদি। কাকাবাবু ছিলেন কাপড়ের দোকানের ম্যানেজার। ধুতি আর ফতুয়ার উপর শাল জড়িয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে দিয়ে বাবা মার সাথে গল্প করতেন।
শান্ত নিরিবিলি শহরের পাড়ার একপাশে ছিল তাদের বাসা।একভাই এক বোন।ভাইয়ের নাম নির্বান। বোন সুলেখা।বোনের তখন কলেজের বিএ ক্লাস চলছে। কুয়াশা ভাঙা ভোরে হেঁটে কলেজে যেতো। লম্বা চুলে তার বিনুনী করা ।ফর্সা সুন্দর আর খাড়া নাকের জন্য এদের
উচ্চ বংশীয় হিন্দু বা কুলীন বলতো সবাই। সান্ন্যাল তখন এ শহরে শুধু ওরাই।ওদের দাদার নামে একটি প্রাইমারি স্কুল ছিল।ভূপতি প্রাইমারি স্কুল।ওরা ভাইবোনরা সবাই ঐ স্কুলে পড়েছে।
বাবরী মসজিদ যেদিন আক্রমণ করলো সেদিন পাড়ার মন্দির আর কয়েকটা হিন্দু বাড়িতে ইট পাটকেল ছুঁড়ে মেরেছিলো। ককটেলও মেরে দিলো কারা যেন। মনে আছে? তার কিছুদিন পর বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো ওরা। প্রথমে গ্রামের বাড়ি গেলো।তারপর অনেকদিন কেউ জানেই না ওদের খবর।
ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলো শহরের এক ছেলে মলয় সাহা। তার নজর ছিল লেখাদির উপর।সে সময় ল্যান্ড ফোনের যুগ। শুধু সরকারী অফিসে আর দুএকটা ভিআইপি বাড়িতে টেলিফোন ছিল।মলয় সাহা আর সুলেখার খোঁজ পায়নি কোনদিন।
কিন্তু উনার অনলাইন পেজের নাম শাড়ি ।আর যিনি শেয়ার করেছেন উনার নাম ইন্দ্রানী গুপ্তা।কলকাতার ঠিকানা। চেনার কোন সূত্রই নাই।চলমান জীবন।অনলাইনে অর্ডার করতে গিয়ে কথা হলো।দেশের বাড়ি শুনে যেন আগ্রহী হয়ে উঠলেন। তারপর বের হয়ে এলো ছেলেবেলার গল্পের ঝাঁপি।চেনা মানে খুউব চেনা। জীবন অনেকটা নদীর মতো। কোথায় জন্ম কোথায় গিয়ে স্থিতি পায় কেউ জানে না।
Leave a Reply