ভারত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম নারী শহিদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার স্মরণে
রেজাউল করিম মুকুল
“Waddadar, whose photographs are published above. Photograph No 1 was taken 2 years ago when Miss Prithi was a student of the Dacca Eden Intermediate College and photograph No. 2 (sitting postures), which is a more recent one, was found at the time of search of one Apurba Sen alias Bhola (since deceased), in connection with Dhalghat shooting affray at Chittagong.
A Special “look-out” should be kept for her and when traced, the I.B., C.I.D., Bengal, Calcutta, should be informed by wire. A close, though unobtrusive, surveillance should at the same time be kept on her movements.
Description—Miss Prithi Waddadar, daughter of Jagabandhu Waddadar (Baidya by caste), of Dhalghat, Patiya and Jamalkhana, Chittagong town: age 20/21 (looks younger than her age); dark; medium build; short; ugly in appearance.”
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রথম নারী সন্মুখ যোদ্ধা ও শহীদ ছিলেন ঢাকা ইডেন কলেজের এক মেধাবী ছাত্রী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তিনি ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে একটি সশস্ত্র গেড়িলা যুদ্ধে সফল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আজ ৫ মে তার জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামের দুরন্ত দস্যি মেয়ে প্রীতিলতা চট্টগ্রাম শহরের বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করে ঢাকায় ইডেন কলেজ-এ ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় ছাত্রীদের মধ্যে প্রথম এবং ছাত্রীছাত্রদের মধ্যে ৪র্থ স্থান দখল করেন। এরপর তিনি কোলকাতায় গিয়ে বেথুন কলেজে বিএ-তে ভর্তিহন।
সেই সময়ে চট্টগ্রাম বিদ্রোহের অন্যতম বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাস মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে কোলকাতার আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসির প্রতিক্ষায় ছিলেন। প্রীতিলতা জেলগেটে গিয়ে নিজেকে রামকৃষ্ণের বোন পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। প্রীতিলতা বিএ পাস করে চট্টগ্রাম শহরের নন্দনকানন বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষয়িত্রীর পদ যোগ দেন এবং মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে সংযোগ স্থাপন করেন।
১৯৩২ সালের ১৩ জুন মাস্টারদা সূর্যসেন ধলঘাট গ্রামের একটি আত্মগোপন কেন্দ্রে প্রীতিলতাকে ডেকে নেন। সেদিন রাতেই সেই বাড়িটি পুলিশ ও ফৌজের ঘিরে ফেলে। সেখানে বন্দুকযুদ্ধে চট্টগ্রামের বিপ্লবী নেতা নির্মল সেন এবং অপূর্ব সেন এবং ব্রিটিশ ফৌজের একজন ক্যাপ্টেন নিহত হয়। মাস্টারদা প্রীতিলতাকে নিয়ে বেষ্টনী ভেদ করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসতে সক্ষম হন।
১৮ এপ্রিল ১৯৩০খ্রিঃ সূর্যেসেন প্রথম চট্টগ্রাম ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা নিলেও পরিকল্পনা ফাঁস হোয়ে গেলে বিপ্লবীরা পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। কয়েকবার ব্যর্থ হোলেও সূর্যসেন ওই ইউরোপীয়ান ক্লাবটি আক্রমণ করার দায়িত্ব দেন সাহসী নারী প্রীতিলতাকে।
এই উদ্দেশ্য নিয়ে মাস্টারদা পাহাড়তলী ক্লাব আক্রমণের কিছুদিন পূর্বে একবার দক্ষিণ কাট্টলী গ্রামে আসেন। প্রীতিলতাও নিরাপদে কয়েকদিনের মধ্যে সেখানকার গোপন কেন্দ্রে আসেন। মাস্টারদা তাঁকে জানিয়ে দেন যে, তাঁরই নেতেৃত্বে ২৩ সেপ্টেম্বর (১৯৩২) পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ করা হবে।
প্রীতিলতা খুবই আনন্দিত হন এবং কাট্টলী সমুদ্র সৈকতে গিয়ে বোমা ছোড়া ও গুলিতে লক্ষ্য স্থির করার শিক্ষাগ্রহণ করতে শুরু করেন। আগে থেকে ক্লাবের বাবুর্চি মনসুর আহমদের কাছ থেকে পূর্ণ তথ্য বিপ্লবীরা জোগাড় করেছিলেন। যথা সময়ে প্রীতিলতা বিপ্লবীদের নিয়ে ক্লাবের কাছাকাছি ঝোপের মতো একটি জায়গায় আত্মগোপন করে থাকেন। এ সময় ক্লাবে নাচ-গান, হৈহুল্লর চলছিলো। মুসলিম বাবুর্চি মনসুরের টর্চের আলোর সংকেত পেয়ে প্রীতিলতা দৌড়ে সামনের দরজায় গিয়ে বোমা নিক্ষেপ করেন। অন্য দুদিক থেকেও বিপ্লবীরা আক্রমণ শুরু করে। আর্তনাদ, হাহাকার, ধোঁয়া সবকিছু মিলে এক ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয়। টেবিলের তলা থেকে এক ইংরেজ হঠাৎ প্রীতিকে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলি প্রীতিলতার হাতে লেগে বুকের পাশ দিয়ে চলে যায়। প্রীতিও সঙ্গে সঙ্গে ওই ইংরেজকে গুলি করে হত্যা করে। প্রীতিলতার ক্ষতস্থান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
রাত ১২টা ২৪ সেপ্টেম্বরে গুলিবিদ্ধ প্রীতিলতা পটাসিয়াম সায়েনাইড মুখে ঢেলে দেন। ঘটণাস্হলে পরে থাকা প্রীতিলতার মৃতদেহ পরীক্ষা করতে গিয়ে পাগড়ীর ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে লম্বা কালো চুলের মাত্র একুশ বছর বয়সের শ্যামলা রঙের এক যুবতী নারীর নিথর দেহ। পকেটে পাওয়া গেলো উপরের সেই নোটিশটি। পুলিশ নিশ্চিত হলো এক বাঙালি বীরকন্যা প্রীতিলতার পরিচয় পেয়ে। আর তাঁর বীরত্ব ও আত্মাহুতির এমন দৃষ্টান্ত অবাক করে দিয়েছিলো গোটা ইংরেজ শাসকদের- এটাই ছিলো এক নারী জাগরণের প্রথম দৃষ্টান্ত। আজ ৫ মেয়ে সেই ঢাকা ইডেনের সেই মেধাবী ছাত্রী, বীর নারী প্রীতিলতার জন্মদিন। আসুন সবাই মিলে এই দিনটিকে স্মরনে রাখি। বীরত্বের প্রতিক এই নারী আমাদের গর্ব, বাংলাদেশের অহংকার।
৫ মে ২০২১খ্রিঃ।
Leave a Reply