শুক্রবার, ০৯ Jun ২০২৩, ০৪:৫৮ অপরাহ্ন

অবশেষে বৃহন্নলা-প্রমথ রায়

অবশেষে বৃহন্নলা-প্রমথ রায়

অবশেষে বৃহন্নলা
প্রমথ রায়

অনেক সময় অনেক ভালো সম্পর্কও ভালোভাবে ভেঙে যায়। যেমন গিয়েছে রুদ্রনীল ও রাফিয়ার সম্পর্ক। ঠিক সম্পর্ক নয়; সম্পর্কের মতো সম্পর্ক ছায়া।রাফিয়া কবির একজন কবি।নিউইয়র্কে থাকেন।রুদ্রনীল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে পড়াশুনা শেষ করে পৈতৃক সম্পত্তি দেখাশুনা করেন।কবিতার পাঠক।কবিতা পড়তে পড়তে হয়তোবা রাফিয়ার সাথে রুদ্রনীলের গল্প হয়।গল্প মাত্রা পেতে পেতে তাঁদের ব্যক্তিজীবনে ঢুকে পড়ে।কখনো কখনো কবিতাগুলো হয়ে যায় তাঁদের জীবন।তারপরও কিছু কথা ব্যক্তিগতই থেকে যায়।কেউ কারো কাছে বলতে পারে না।এই গোপনীয়তাই তাঁদেরকে আরও কাছে ডাকতে চায়।আবার এই গোপনীয়তাই তাঁদের কাছে যেতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। শুরু অন্তঃদ্বন্দ্ব।অন্তঃদ্বন্দ্ব বহিঃদ্বন্দ্বে পৌঁছতে পৌঁছতে শোনা যায় সম্পর্ক ভাঙার এক বীভৎস আওয়াজ। ভাঙনটাও ঠিক সেরকম নয়।গল্প করতে করতে যেমন শুরু।গল্প থেমে গিয়েই শেষ।রাফিয়া রুদ্রনীলকে ব্লক করে দেয়।প্রসঙ্গক্রমে তাঁদের মধ্যে কোনো পারস্পরিক অন্য যোগাযোগ ছিলো না।হয়তোবা এই সীমাবদ্ধতাই তাঁদের সম্পর্ককে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে।

কিছু সম্পর্ককে শেষ করতে চাইলেও শেষ করা যায় না।কুড়ি বছর পরের ঘটনা।রুদ্রনীল এখনও অবসর কাটায় কবিতা পড়ে।রাফিয়ার কবিতা নয়।রাফিয়াকে তার আর মনে নেই।সবকিছু ভুলে সে এখন সাংসারিক। বছর দুয়েক আগে স্ট্রোক করায় সে সংসার হতেও অব্যহতি নিয়েছেন।যাহোক একটি ফোন কল আবার রুদ্রনীলকে সত্যিই নীলাভ করে দেয়।মোহিনী হাসান।নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের শিক্ষক।সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছেন।রুদ্রনীলের সাথে দেখা করতে চান।
পরের দিনই তাঁদের দেখা।মোহিনী রুদ্রকে একটি প্যাকেট দিলো।প্যাকেটে ছিলো একটি কবিতার বই।’রুদ্রনীলের হাত’।প্রথম পৃষ্ঠায় উৎসর্গপত্র ‘রুদ্রনীল হাসান, আমার কবিতার দায়িত্বশীল পাঠক।হয়তোবা তারও অধিক কিছু।সাথে ছোট এক টুকরো চিঠি।’রুদ্র, তুমি যখন এ লেখা পড়ছো, তখন হয়তোবা আমি নেই।আমার কবিতাকে বাঁচিয়ে রেখো।আর তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।
রুদ্রনীল ভেজা চোখে মোহিনীর দিকে তাকায়।মোহিনীর চোখও ভেজা।সে বলে, সত্যিই মা আপনাকে ভীষণ ভালোবাসতো।কিন্তু তিনি তৃতীয় লিঙ্গের ছিলেন।তাই আপনার সাথে আর যোগাযোগ করেননি।আমি তাঁর পোষ্য।তিনি বার বার চেয়েছিলেন আপনি এ সত্যটি জানুন।তিনি গত মাসে মারা গেছেন।
চিঠিটি রুদ্রর হাতে থেকে পড়ে যায়।একটু পর তাঁর নিথর দেহটিও কাত হয়ে যায়।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge