স্মৃতি ও অন্যান্য-২
উমর ফারুক
আমাদের আদিবাড়ি ছিলো হিন্দু পাড়ায়। ওরা ছিলো আমাদের প্রতিবেশী। আপদ-বিপদে ওরাই নাকি সবার আগে ছুটে আসতো। গল্পটা আমার জন্মের আগের। লোকমুখে শোনা। আমার দাদা তখন ধুতি পরতেন। ধুতি ছাড়া তখন কিছু পাওয়াও যেতো না। আমি দাদাকে দেখি নি। শুনেছি। তবে বাবাকে দেখেছিলাম। বাবা, ছোটবেলায় রামায়ণ ও মহাভারত মহাকাব্য থেকে ইতিহাস তুলে এনে শোনাতেন। অতো ভালো বুঝতাম না। হয়তো বাবা পড়েছিলেন তার ছোটবেলায়; অথবা গল্প শুনেছিলেন তার বাবার কাছে। বাবা এখন বেঁচে নেই। সুস্থ অবস্থায় বাবা হজ্জ ব্রত পালন করেছিলেন। স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসার জন্য অনেকটা নিবেদিত ছিলেন। কঠোর পরিশ্রম করতেন, কিন্তু জীবদ্দশায় কখনো কাউকে ঠকিয়েছিলেন বলে আমার মনে পড়ে না।
আজ, পত্রিকার পাতায়, ৭০-এর দশকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের পোশাক দেখে অবাক হই না। ডুবজাহাজ ডুবে গেলে অবাক হই না। ভারত কাঠের সংকটে পড়লে অবাক হই না। সৌদি যুবরাজের শিক্ষাসম্পর্কিত অভিপ্রায়ে অবাক হই না। মৃত্যুস্রোতের গায়ে ‘গজব’ শব্দটি জুড়ে দিলে অবাক হই না। প্রবহমান টিকাবাহাচেও অবাক হই না।
কতটা বদলে গেছে আমাদের সময়! কতটা বদলে গেছে আমাদের চারপাশ! কতটা বদলে গেছে আমাদের সমাজ, আমাদের সংস্কার।
‘টাকা কখনো খাওয়া যায় না।’-আফ্রিকার একটি জনপ্রিয় প্রবাদ। প্রবাদটি টানলে প্রশস্ত হয়। আনবিকবোমা ও মারণাস্ত্র কখনো খাওয়া যায় না, দামি ব্রান্ডের গাড়ি ও আইফোন কখনো খাওয়া যায় না, ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড কখনো খাওয়া যায় না। খেতে হয় ভাত, খেতে হয় রুটি, খেতে হয় অক্সিজেন।
কে জানতো কোটি কোটি টাকার চেয়ে পৃথিবীতে আজ এক ঢোক অক্সিজেন বড় অমৃত হয়ে উঠবে! কে জানতো মানুষ অক্সিজেন না বানিয়ে, রুটি না বানিয়ে, মারণাস্ত্র বানাতেই বেশি মনযোগী হয়ে উঠবে!
ছবিটা ক-দিন আগে তোলা। অক্সিজেন গিলতে গিয়েছিলাম। ধান ক্ষেতে। তখনও বাতাসে অল্প-অল্প শুভ্রশ্বাস নেয়া যেতো। এখনও যায়। কিন্তু আগামীকাল যাবে কিনা জানা নেই! হয়তো যাবে, নয়তো না।
Leave a Reply