শুক্রবার, ০৯ Jun ২০২৩, ০৫:৩২ অপরাহ্ন

মানুষের সফল চন্দ্রাভিযান-রেজাউল করিম মুকুল

মানুষের সফল চন্দ্রাভিযান-রেজাউল করিম মুকুল

মানুষের সফল চন্দ্রাভিযান
রেজাউল করিম মুকুল

এ্যাপোলো-১১ এর লুনার মডিউল কলম্বিয়ার পাইলট মাইকেল কলিন্স ৯০ বছর বয়সে মারা গেলেন গত পরশু বুধবার, আমেরিকার ফ্লোরিডায়। আমেরিকার এয়ার ফোর্সের একজন মেজর জেনারেল এবং একজন টেস্ট পাইলট মাইকেল কলিন্স ১৯৩০খ্রিঃ ৩১ অক্টোবর ইটালির রোমে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ক্যানসারের সাথে যুদ্ধ করেই বেচে ছিলেন এতটা সময়। নেইল ই আর্মস্ট্রং ছিলেন মিশন কমান্ডার, তিনি আগেই মারা গেছেন। এখনো বেচে আছেন বুজ এডুইন এলড্রিন, তার বয়স ৯১ বছর। কলিন্সের মৃত্যুতে তিনি শোকবার্তায় লিখেছেন, “Dear Mike, Wherever you have been or will be, you will always have the Fire to Carry us deftly to new heights and to the future. We will miss you. May you Rest In Peace.”

এ্যাপোলো-১১ মিশনটি সফল করে তুলতে ৪ লক্ষ বিভিন্ন রকমের কর্মচারি বিজ্ঞানী কাজ করেছেন, তাতে ব্যয় হোয়েছে সে সময় ২৫ বিলিয়ন ডলার। আর টিভির পর্দায় এ্যাপোলো-১১ এর অবতরণ দেখেছেন সারা পৃথিবীর ৬৫০ মিলিয়ন মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের নভোযান এ্যাপলো-১১ এর লুনার মডিউল ১৯৬৯খ্রিঃ ২০ জুলাই ২০.১৭ টায় শেষ পর্যন্ত চাঁদের মাটিতে অবতরণ করে। এ্যাপোলোর-১১ এর কমান্ডার নেইল আর্মষ্ট্রং ছিলেন পৃথিবীর প্রথম মানব যিনি সমগ্র মানব জাতির পক্ষে চাঁদের মাটিতে পা রাখেন। এ সময় সারা পৃথিবীর ৬৫০ মিলিয়ন মানুষ টিভির পর্দায় এ্যপোলো-১১’র চাঁদের মাটিতে অবতরণ দৃশ্য দেখেছে। এর ৬ ঘন্টা ৩৯ মিনিট পরে ২১ জুলাই চাঁদের মাটিতে পা রেখে আর্মষ্ট্রং বলেছেন, “one small step for man, one giant leap for mankind.” আর আমেরিকার President John F. Kennedy: বললেন “before this decade is out, of landing a man on the Moon and returning him safely to the Earth Apollo 11 effectively ended the Space Race .
তারও ১৯ মিনিট পরে কমান্ড মডিউল থেকে বেরিয়ে এসে তার সঙ্গে যোগ দেন মডিউল পাইলট এডউন এলড্রিন। তারা দুইজন এক সঙ্গে চাঁদের মাটিতে হেটে বেড়ান, ছোঁয়া ছুঁয়ি করেন, চাঁদের পাথরের টুকরা ছুড়ে মারার খেলাটি খেলেন, শেষে চাঁদের পিঠ থেকে সাড়ে একুশ কেজি পাথর নুড়ি, মাঠি সংগ্রহ করেন এবং সোয়া দুই ঘন্টা পরে চাঁদের মাটিতে ষ্টান্ড করা কমান্ড মডিউলে ঢুকে অপেক্ষা করতে থাকেন। ২১ ঘন্টা ৩১ মিনিটের অপেক্ষা, অজানা কত কল্পণা, ভয়, সংশয়, মিশ্রিত অপেক্ষার পরে পাইলট মাইকেল কলিন্সের লুনার মডিউল কলম্বিয়া চাঁদকে এক পাক ঘুরে এসে কমান্ড মডিউলের সাথে যুক্ত হলেন। শুনশান এই ২১ মিনিট ৩১ সেকেন্ড অনন্ত অসীম মহাকাশে চাঁদের মাটিতে জেগে থাকে পৃথিবীর দুটি প্রাণ, এই সময়টিকে এলড্রিন বলেছেন স্বর্গীয় নিস্তব্ধতা যা পৃথিবীর কোন কিছুরই সাথে তূল্য নয়। এ্যাপোলো-১১ ১৬ জুলাই ১৩.৩২ ঘন্টায় আমেরিকার ফ্লোরিডা রাজ্যের মেরিট দ্বীপের কেনেডি মহাকাশ কেন্দ্র থেকে যাত্রা শুরু করেন এবং চাঁদের মাটি থেকে মাহাকাশচারী নেইল আর্মষ্ট্রং ও এলড্রিনকে তুলে নিয়ে আবার চাঁদের কক্ষপথে এসে চাঁদকে ৩০টি পাক দিতে দিতে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অতিক্রম করে ঢুকে যান আমাদের প্রাণপ্রিয় গ্রহ পৃথিবীর আকর্ষণ বলয়ে। পৃথিবীর টানে চলে আসেন এবং আট দিনেরও বেশী সময় পরে ২৪ জুলাই নভোচারিরা প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরন করেন। এ্যাপোলোর রকেট অংশ Saturn V rocket লুনার মডিউলকে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাইরে ঠেলে চাঁদের অধিক্ষেত্রে কক্ষপথে স্হাপন করে দুইজন পাইলট সহ ফিরে আসেন সেদিনই। অর্থাৎ এ্যাপোলো-১১’র নভোচারীর সংখ্যা ছিলো মোট পাঁচ। এ্যাপোলোর তিনটি অংশ তিনজনের আরাম করে ঘুমানোর মতো একটি কেবিনসহ command module (CM), বিদ্যুত, পানি, অক্সিজেনসহ একটি service module (SM), এবং lunar module (LM) যা ড্রাইভ করে মাইকেল কলিন্স প্রথমে যাত্রীদের চাঁদে নামিয়ে দেন এবং চাঁদকে এক পাক ঘুরে এসে ঠিকঠাক মতো সিএমকে তুলে নেন। নাসা বলেছে চাঁদের পিঠে এই descent stage এবং ascent stage ছিলো সুচারুভাবে টাইমিং করা যার এক সেকেন্ড ব্যাতিক্রম হলে চাঁদে নেমে যাওয়া দুজনকে হয়তো আজও ওখানেই থেকে যেতে হতো। আর এই মহা গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেন মাইকেল কলিন্স।
সে সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডি রাশিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন মানুষের চন্দ্র বিজয় হোয়েছে, এটাই বড় কথা। এটি প্রতিযোগিতার বিষয় নয়।মহাকাশের রহস্যভেআেমেরিকা যক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সবার আগে প্রতিযোগিতায় নামে। চাঁে মানষ প্ররেণ েেক শুরু করে কক্ষপে ঘাটি স্হাাপন, স্টেশন র্নিমান, মহাকাশের অন্যসব বস্তুর চলাফেরা র্পযবেক্ষণ এসব করতে গিয়ে বুঝতে পারে মানুষের অক্ষমতার বিষয়গুলো নয়িে ঐ সময় প্রশ্ন নয়িে আসে কোন শক্তিধর রাষ্ট্র কি মহাকাশের কোন বস্তু খল করে নিতে পারবে? যেমন চাঁদকে কোন রাষ্ট তার নিজস্ব সম্পত্তি ভাবতে পারবে ক?ি খলারিত্ব রক্ষায় সেখানে সমারিক স্হাপনা নর্মিাণ বা র্সাবভৌমত্ব ¡ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে ক?ি এসব প্রশ্ন্ন যখন বড় হয়ে খো িিচ্ছলো ঠিক তখনই জাতিসঙ্ঘের সাধারন পরিষ ১৯৬১ সালের ২০ ডিসেম্বর সর্বসম্মতিক্রমে একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের মাধ্যমে দুটি মুলনীতি করে [Resolution No. 1721(xviii)]
১।জাতিসঙ্ঘের সনদসহ আন্তর্জাতিক সকল আইন মহাকাশ ও নভোমন্ডলের ক্ষেত্রেও সমান প্রযোজ্য হবে। মহাকাশ ও নভোমন্ডলের
২।সকল বস্তু (Outer Space and Celestial Bodies) সকল রাষ্ট্রের অনুসন্ধান গবেষনার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং কোন রাষ্ট্রের জাতীয় মালিকানা থাকবে না।
এরও ৫০ বছর পরে ২০১৯খ্রিঃ ভারতের নভোযান যথাযথভাবে চাঁদে অবতরন করতে পারে নাই, ভারতের নভোযান সফল হলে সেটি মানব জাতির কোন কৌতুহল কিংবা কল্যান বয়ে আনতো না। এ রকম শত শত অভিযান ব্যর্থ হয়েছে এবং শেষে যুক্তরাষ্ট্রের এ্যাপোলো-১১ সর্বপ্রথম সফল হোয়েছে এটি ছিলো সমগ্র মানব জাতির জন্যে একটি সফলতার খবর মাত্র।

লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge