আজ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কবি ও ছড়াকার, লিটলম্যাগ রসমালাই সম্পাদক অমলকান্তি চন্দের শুভ জন্মদিন। তার জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
আসুন, তার জন্মদিনে পাঠ করি, তার কবিতা ও ছড়া-
অমলকান্তি চন্দের ৫টি কবিতা
১. তুমি সরে যাচ্ছ
তুমি সরে যাচ্ছ
ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছ তুমি, স্বপ্নের ভেতর
পাখীদের কথা ভাবতে ভাবতে, ভোর হয়ে গেছে
জেগে উঠছে গাছ
শিয়রে বাতাস
নাভি জন্ম ছড়িয়ে পড়ছে, শেকড়ে ।
গভীর উপলব্ধির ভেতর
তোমার মগজ পুনঃ বিন্ন্যাস হচ্ছে, কেবল সরল হচ্ছে, অন্ধ প্রতিধ্বনি ।
মেঘের অন্দরে সারি সারি বর্ণমালায়, রামধনুর ভেতর, জেগে উঠছে পৃথিবী
কঠিন বরফের ভেতর, তুমুল অভিলাষী হয়ে উঠছ বলে
স্ফটিক দানাগুলো ঝরতে দেখেছি, তোমার দুচোখে ।
এখন নদী বুক পৃথক উঠোনের ভেতর
চোরা স্রোতের ভেতর
লাফিয়ে চলছে, সকালের খণ্ড আকাশ ।
২. আন্দোলন
বন্দুক তাক করে আছো আমার দিকে
নিশানায় অবিচল বলে,আমি একদম নড়ছি না
আমার চোখের মণিগুলো তীক্ষ্ণ নজর রাখছে
তোমার হাতে ধরা বন্দুকের নল ছুঁয়ে ছুঁয়ে
তোমার চোখ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
কেবল হাতের দিকে নামতে নামতে
চট করে মগজে, প্রচ্ছন্ন বিস্ফোরণ
টলতে টলতে সেতুটি শুয়ে পড়ে, মাঝ নদীতে।
এখন তোমাকে আর দেখা যাচ্ছে না
চারিদিকে ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশার ভেতর
কেবল ছায়ার মত
অবিকল গাছেদের মত
কেমন ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছ, বুকের চিরন্তন উঠানামায় ।
সময় টপকাবে বলে জোড়া পায়ে লাফিয়ে চলছ
নদীর শরীর বেয়ে
পাহাড়ের শরীর বেয়ে
আমার শরীর বেয়ে, ঘুসঘুসে জ্বরের ভেতর
নয়া প্রকল্পের ভেতর
আন্দোলন, কেবল আন্দোলন।
৩. থাকবে কদিন আমায় ভুলে
উড়াল ডানায় আকাশ কেমন হাসছে দেখো
হাসছে দেখো ঠোঁট খুলে ,বুলবুলিটা জবার ডালে
তখন থেকে গান গেয়ে যায়, তোমার সুরে
বলছে কি সব? কান পেতে তাই শুনতে থাকি
তোমার কথা পড়ছে মনে, সারাটা দিন এপাশ ওপাশ
বন্ধ ঘরে ঘুম আসে না, ঘুম আসে না, বুলবুলিটা আমায় জানে।
হাওয়ায় দুটো ফড়িং উড়ে
ঘাটলা পুকুর, তালের সারি, চাপার ডালে ঝুলছে তারা
রাতের বেলা জামের তলে
তোমার চোখে আঁধার গলে
জোনাকগুলো ছবির মতো , ঘাপটি মেরে আছে বসে
অনেক কথা বলবে বলে
দিনগুলো সব কাটছে কেমন? জানতে কিছু সুখের খবর , ডুগডুগিটা লাউয়ের খোলে
সোহাগ করে ডাকছে প্রিয় , থাকবে ক’ দিন আমায় ভুলে ?
আর পারি না থাকতে একা, জানালা খুলে দূরের পথে
তাকিয়ে থাকি দুচোখ মেলে , আসতে তুমি এই পথে কি?
চুলগুলো সব পেঁচার শরীর
আমায় কেবল জাপটে ধরে ,রাতটা যখন ঘনিয়ে এল ঘুমের দেশে পালকি চড়ে
কলিংবেলে আঙুল রাখি
শব্দেরা আজ যায় না কানে, ঘুমের ভেতর তুমি কেবল, তুমিই কেবল ঘুমিয়ে আছো ।
৪. কেবল তুমি ডিলিট করো
মুণ্ডু জুড়ে সর্ষ, পটল
ঠোঁট,মুখেতে ধূর্ত পিয়াস
আগাগোড়া মানুষ তুমি? সেতো আমি আর ভাবি না ।
সর্ষ টাকে উদোম হাওয়া
সরস্বতী কণ্ঠমূলে
অনেক সময় মাইক্রো ফোনে
আকাশটাকে ভরদুপুরে, আদর করো যখন খুশি ।
রোদ চড়লে রাগের মাথা
সর্ষ, পটল হল্লা করে ,তুমি কেবল ডিলিট করো
একতারা চাঁদ আমার হাতে
আগুন তুমি তফাৎ সরো, আমায় ধরো হাতের মুঠো
দূর আকাশে ছুড়ছি দেখো
আমার থুথু ছেবের মত, তাই বলে কি রাগ করলে?
আমার পাড়ায় শুয়োর খামার
মেকুর ছুটে পাশের বাড়ি, সারাটা রাত তোমার সাথে
সবাই মিলে আড্ডা মারি,
ভুলে গেছ সেসব কথা, উড়ছে ধোঁয়া ইটের কলে
একটা দু’টা কথার খেলাপ
বলতে তুমি পারতে আমায়,
পথটা একই তোমার আমার,
উদাল গাছের নীরব ছায়ায়,
কাকটা সেসব বলছে ঠোঁটে,
গোল্লা ছুটের শেষের বেলা
খানিক বাদেই সকাল আসে ।
৫. পদ্মপুরান
একরাতে নিরধন নমঃ আস্ত পদ্মপুরান গিলে খেয়েছেন
ডট কলমের মাথায়
পদ্মার সংসার,কুপিবাতির আলোয়
সাপদের ছায়া শরীর,কাটা জিহ্বায় বিগলিত হাসি…
নিরধন নমঃ সারারাত ধরে লিখছেন
বুড়ো আঙুলের ডগায় বিস্তর ফণা,বেহুলার বাসর ঘরের দিকে উঁকি দেয়।
ঘর জানে
পদ্মার ঠোঁট ছুঁয়ে গেলে সাগরও উদরবতী হয় কোনদিন…
কলার ভেলা ভাসে, সকালের রোদ কিংবা চাঁদ সওদাগরের বজরা….
নিরধন নমঃ বুকদোয়ারে চুপি দেন, চোখের মণি ঘুরতে থাকে
চেঙমুড়ী পায়চারি করেন আড়ালে…..
অমলকান্তি চন্দের ৫টি ছড়া
১. ভূতের ছড়া
গাড়ির সিটে মামদো ভায়া
আগরতলা যাবে,
নাতনি দুটো দু হাত তুলে
বাদাম ভাজা খাবে।
গোঁফের ভীড়ে মুখের হাসি
সরু দাঁতের চাল,
ঝাল মুড়িতে জিভের জলে
পুড়ল বুঝি গাল।
ছুটছে গাড়ি রাতের বেলা
সঙ্গে ভূতের নাতি,
শুঁড় নাড়িয়ে বলছে দাঁড়া
উদোম গায়ে হাতি।
২. আমার রবি
আমার রবি সকালবেলা ভাঙ্গিয়ে দিল ঘুম,
পাহাড় চূড়া উঠছি বেয়ে কাটতে যাব জুম।
রবির ছবি আকাশ জুড়ে চোখের কোণে আলো,
কখন থেকে বলতে শুনি কেমন আছ, ভালো?
বাবার হাতে রোদ ছুঁয়েছে রবির ঠোঁটে ছড়া,
গাছের ডালে গিলছে টিয়ে আমড়া সাথে বড়া।
পাতার বাঁশী বানিয়ে নিয়ে জুমের পথে পথে,
রবির গানে সুর দিয়েছি আপন হতে হতে।
গাছের পাতা উঠলো নেচে গানের তালে তালে,
রবি আমার আঙুল ধরে চুমোয় ভরে গালে।
সবুজ ছুঁয়ে মনটা চুপি রবির কাছে ছুটে,
জুমের ঢালে বন ফুলেরা আকাশ হয়ে ফুটে।
৩. রঙ দুপুরে
রঙের ভোরে পাখনা জুড়ে
রাংতা মোড়া খুশির ছোঁয়া,
আবির রাঙ্গা সূর্য্যি মামা
দিচ্ছে উঁকি, মুড়ির মোয়া।
রঙ মেখেছে শিমুল, পলাশ
রঙ্গন জুড়ে আবির লাল,
পিচকারিতে খেলছে হোলি
সাজছে রঙে টুসির গাল।
রামধনুতে রঙের খেলা
আঁকার খাতা, ছবির দেশ,
বসন্তেরই রঙ দুপুরে
কে রাঙ্গাল তোদের কেশ?
মাছরাঙ্গাটা চুপটি করে
রঙ দুপুরে মেলল ডানা,
বুলবুলিটা আলতা পায়ে
রঙের ঘোরে আকাশখানা।
৪. ঐ মাছিটার একটা পা নাই
ভীড়ের মাঝে দিচ্ছে উঁকি কলাছড়ির কালু কামার,
দাঁড়িয়ে ছিল দশটি গাভী তিনটি ছিল জগা মামার।
গাভীর ল্যাজে ধাক্কা খেয়ে একটি মাছি ঠ্যাঙ উঁচিয়ে,
মামার কাছে বলছে কি সব একেক করে সব গুছিয়ে।
নালিশ শুনে চড়ল মাথা ছিলেন যারা সব দোকানি,
আঙুল নেড়ে বলল মামা ঐ গাভীরা সব বোকা নি ?
এমন করে কাণ্ডখানা ঘটিয়ে দিল হাট বাজারে …
আসল ধেয়ে ঘোড়ার গাড়ি সঙ্গে নিয়ে সেই রাজারে।
মামার পাশে দাঁড়িয়ে রাজা বলল আমি শুনছি কি সব,
ডট কলমে রাজার কথা টুকছে বসে লম্বা বিশপ।
ভীড়ের মাঝে সুর চড়িয়ে বগল থেকে ডাকল কানাই,
তাকিয়ে দেখি সত্যিতো তাই ঐ মাছিটার একটা পা নাই।
৫. ঝিঙ্গেঁ ফুলের দুল কি
কিনবে তুমি নতুন জামা লাল টুকটুক আলতা,
খেলনা গাড়ি হলুদ শাড়ি চারটে মাটির চালতা।
একটা দেব রামবানুকে তিনটে নেবেই নদাই,
চাইযে আরো আনতে পারো বলল হাবুল, গদাই।
পূজোর ভীড়ে বসল মেলা নানান রকম গয়না,
সুর ধরেযে গান ধরল তিনটে মাটির ময়না।
বলল সেযে আয় না পাচু গাইব ছড়ার ছন্দে,
কাশ ফুলেরা মেলল ডানা শিউলি ফুলের গন্ধে।
চরকি দুটো নাগরদোলা রঙ চকচক দোলনা,
ভয় পেলেকি লক্ষীসোনা চোখ দুটো তুই খোল না।
দেখনা চেয়ে আকাশ হাসে হাজার আলোর ফুলকি,
তোর কানে কে পরিয়ে দিল ঝিঙে ফুলের দুল কি?
Leave a Reply