মঙ্গলবার, ০৬ Jun ২০২৩, ০১:০৮ পূর্বাহ্ন

সিরাজীর জন্যে অপেক্ষা-লুৎফর রহমান রিটন

সিরাজীর জন্যে অপেক্ষা-লুৎফর রহমান রিটন

সিরাজীর জন্যে অপেক্ষা
লুৎফর রহমান রিটন

সকাল থেকেই মন ভালো নেই। প্রিয় সিরাজী ভাইয়ের লাইফ সাপোর্টে থাকার সংবাদটি আমার দিনটিকে কী রকম ম্লান আর বিষণ্ণ করে তুলেছে। এতো বছরের সম্পর্ক! এতো আন্তরিক আর বিবেচনাসম্পন্ন একজন কবি ও প্রশাসনিক কর্তা! বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা কর্মচারীরা আমাকে সব সময় বলেছে–আমাদের স্যার একজন ভালোমানুষ! আমাদের স্যার একজন মানবিক মানুষ।
আমি তো জানি, বাংলা একাডেমির কর্মীরা তাঁর কাছে অধীনস্ত কোনো কর্মচারী নয়, তার অধিক তাঁর ভাই! আপনজন।

সিরাজী ভাইয়ের কন্যা অর্চি আমার বিশেষ স্নেহভাজন। বিটিভিতে আশির দশকে আমার পরিচালনায় ছোটদের অনুষ্ঠানে অংশ নিতো সে। সেই পিচ্চি মেয়েটা বড় হয়েছে। স্থায়ী হয়েছে কানাডায়। ওরও একটি কন্যা সন্তান। ২০১৭ সালে সস্ত্রীক হাবীবুল্লাহ সিরাজী কন্যাদর্শনে কানাডায় এলে অর্চি ওর বাবা-মা আর নিজের কন্যাটিকে নিয়ে রিটন চাচার অটোয়ার বাড়িতে এসেছিলো। অটোয়া থেকে অর্চির শহরটা ৫/৬ ঘন্টার ড্রাইভ। মেয়েটা ওর বাবা মাকে ড্রাইভ করে নিয়ে এসেছিলো পাঁচ ছয়শো কিলোমিটার পথ! আমি খুব অবাক বিস্ময়ে অর্চিকে দেখছিলাম। তারচে অবাক বিস্ময়ে দেখছিলাম ওর মিষ্টি কন্যাটিকে। জীবনটা কতো আনন্দের কতো বিস্ময়ের! কখনো কি ভেবেছিলাম আমার অনুষ্ঠানের শিশুশিল্পী মেয়েটা বহু বছর পরে নিজের সন্তানসহ বাবা-মাকে নিয়ে বেড়াতে আসবে অন্য আরেকটি মহাদেশের অচেনা একটি শহরে ওর ছোট্টবেলার সেই রিটন চাচার বাড়িতে!

সিরাজী ভাইয়ের জন্যে মনটা ব্যাকুল ছিলো। ছটফট করছিলাম। অর্চিকে ফোন দিলাম। টেলিফোনের এই প্রান্তে আমার কণ্ঠ শুনে চাচা চাচা বলে সে কী আকুল করা কান্না মেয়েটার! আমাকেও কাঁদিয়ে ছাড়লো সে। বাবার জন্যে অশ্রুতে ভাসতে ভাসতে মেয়েটা জানালো–টিকিট কেনা হয়েছে। ফ্লাইট পাওয়া গেছে। শিগগিরই দেখা হবে বাবার সঙ্গে।

কল দিলাম জোরা ভাবীকে। জানলাম, সবে মাত্র সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে সিরাজী ভাইয়ের। কোলন ক্যান্সার বিপজ্জনকভাবে বিস্তার ঘটিয়েছিলো অবিশ্বাস্য দ্রুততায়। অপারেশন সাক্সেসফুল। তবে অবস্থা স্ট্যাবল না হওয়া পর্যন্ত থাকতে হবে ভেন্টিলেশনেই।

সিরাজী ভাই, আপনার অতি আদরের অর্চিকে বলেছিলাম–কেঁদো না চাচা, সব ঠিক হয়ে যাবে। সিরাজী ভাইয়ের কিচ্ছু হবে না দেখো। আবার তিনি সুস্থ-স্বাভাবিক আনন্দময় জীবনে ফিরে আসবেন। আবার তিনি তোমাকে দেখতে আসবেন কানাডায়। আবার তুমি তোমার বাবাকে ড্রাইভ করে নিয়ে আসবে অটোয়ায় আমাদের বাড়িতে। তারপর মহা হৈচৈ করে কাটিয়ে দেবো আমরা কয়েকটা দিন।

(শুধু একটা কথা চেপে গেছি সিরাজী ভাই, একটা সিঙ্গেলমল্ট আপনার জন্যে তুলে রেখেছি। আমি তো জানি এই সোনালি শিশিরটা কতো প্রিয় আপনার! আপনাকে ছাড়া এটা ওপেন হবে না।)

অপেক্ষায় আছি সিরাজী ভাই। ফেসবুক ভেসে যাচ্ছে আপনার প্রতি মানুষের শুভকামনার ঊর্মিমালায়।

ভালোবাসাকে উপেক্ষা করা যায় না। এতো অজস্র মানুষের ভালোবাসাকে, আমাদের সম্মিলিত শুভকামনাকে আপনি উপেক্ষা করবেন কীভাবে?

ঘুরে দাঁড়ান সিরাজী ভাই। আপনাকে জয় করতে হবে আইসিইউর নিবিড় পর্যবেক্ষণ। সকল প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হেসে উঠতে হবে ফের চিরচেনা পুরনো ভংগিতে।

আমরা অপেক্ষায় আছি।
বাংলা একাডেমি আপনার অপেক্ষায়।
বাংলা কবিতা আপনার অপেক্ষায়।
প্রিয় বাংলাদেশ আপনার অপেক্ষায়…

অটোয়া ২৭ এপ্রিল ২০২১

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge