জোবায়েদ সুমন এর ৭টি কবিতা
১. গল্পের আঙিনায়
চাঁদের সাথে জেগে থাকা রাত
ঘুমোতে দেয়নি ক্লান্তিগুলোকে
বড় অকারণ এই নিদ্রাহীন তন্দ্রায়
একা একা লাগছে ভীষণ
যে দেয়নি মন – দিতে চেয়েও
তার নামে কোনো অভিযোগ নেই
কোনো অভিমান কাঁদাতে পারেনি
বলেই হয়তো, জোছনা ফুটলে নদীর কাছে যাই
হিসেবের জীবনে স্বপ্ন’রা বেহিসেবী
তাই বলে অধরাকে ভালোবেসে
ফুরিয়ে তো যেতে পারি না
বরাবর এই ভাবনায় খুঁজে পাই উচ্ছ্বাস
চাঁদের সাথে মাতোয়ারা বৈশাখী রাত
রাতের কোলে পুলকিত চন্দ্রিমা
তিস্তার পাড়ে শীতল বাতাসে
অাজও অামি হারিয়ে যাবো, একা…
২. শিরোনামে কোনো নাম নেই
চেয়েছি অসম্ভবের কাছে
লাজ-লজ্জা ভুলে
মান -সম্মানের পরোয়া না করে
অামার সে চাওয়া
অামাকেই ফিরিয়ে দিয়েছে, অপবাদ
অসম্ভবের হাতে রেখেছিলাম এই হাত
অসম্ভবের চোখে এই চোখ দেখেছে
বিরাণ শূন্যতা। নিষ্ঠুর দহন। অন্তর বেদনা।
অসম্ভবের পায়ে পায়ে
পাশাপাশি হেঁটে গিয়েছি পথ
ফিরে এসে দেখি-
নির্বাক দাঁড়িয়ে অাছে সময়, কিংকর্তব্যবিমূঢ়
স্বভাবটাই অামার কেমন যেন
শুধু অসম্ভবের কাছেই ফিরে ফিরে যাই…
৩. বিলাপ
অবশ্যই মনে অাছে তার
অামার উচাটন মন নিয়ে
কতটা ভালোবেসেছি তাকে
অবশ্যই সব তার মনে অাছে
কেমন করে যেন হারানো সে
নিয়তির কাছে অামাকে পরাজিত করে
তাকে অারও মর্যাদায় রেখেছে
অারও বাড়িয়ে নিয়েছে- অভিমানের অাগুন
অামি যে তার কী ছিলাম
অবশ্যই সে ভুলতে পারেনি
পরিপাটি তার অাবাসভূমে
কেবল অামার-ই অবাক অভাব
অবশ্য, অামারও ভোলা হয়নি তাকে
দিনরাত কেবল চোখে ভাসে
তার মুখ
তার চোখ
এবং তাকে…
৪. প্রিয় প্রতিক্ষার পর
আবার এলো বসন্ত
ফুটেছে ফুল
গাইছে পাখি
নদীর বাতাস বইছে অাপনমনে
বৃক্ষ- লতায় জড়ানো সতেজ অানন্দ….
অাহা বসন্ত
দিকে দিকে সেজেছে অবাক পৃথিবী
নড়েচড়ে ওঠা মাটিও
অাকাশ ভালোবাসে……
এসেছে শিমুল পলাশের দিন
কোকিলের গানে মন ভোলানো ক্ষণে
অব্যক্ত কথাগুলো চেয়ে অাছে পথ
ঝড়ো বৃষ্টি নিয়ে কেউ একজন অাসবে…..
এ বসন্তেও নতুন একটি গান লিখেছি
তাকে শোনাবো বলে…
৫. বসন্ত এসেছিলো
ভালো হতো
যদি কথায় কথায়
রাতটা অারও বড় হয়ে যেতো
ভালো হতো – তোমাকে
অারও একটু বুঝে নিতে পারতাম
বহুদিন পর, এসেছিলে
অনেক রোদ বৃষ্টি শেষে
তোমার সাথে এলো ফাল্গুনি বাতাস
বাতাসে শরীর জুড়ালো
মন কিন্তু পুড়লো – অাগুনে
ভালো হতো, যদি অাগুনে
পুড়তে পুড়তে ফুরিয়ে যেতাম
খুব ভালো হতো
যদি তোমার সাথে হারিয়ে যেতে পারতাম
কবিতার মতো মুখস্ত করে তোমাকে
অাবৃত্তি করতাম সারা দিনমান…
৬. পরিবার বিষয়ক
কবুতর অামার ভীষণ প্রিয়
অার কিছু না থাক
বাক বাকুম কিংবা বাকুম বাকুম ডাক
বাড়িটিকে সরব রাখে রোজ
কবুতরগুলো খাবার পেতে একটু দেরী হলে
কী যে কান্ডে অামাকে অস্থির করে তোলে
বেশ ভালো লাগে তখন
সন্তানের চেয়েও ওদের অাবদারে জোর বেশি
রাতে বাড়ি ফিরে অাসি যখন
ওদের বেশি অর্ধেক ঘুম হয়ে যায়
তবুও জেগে ওঠে এক এক করে
তারপর অামাকে শোনাতে থাকে নানান কথা
শুনতে শুনতে রাত অারও গভীর হয়
অারও জেগে থাকি অামি, গল্প-কথায়
অামি ওদের এত ভালোবাসি কেনো জানেন
অনেক অনেক মানুষের চেয়ে
কবুতরের ভালোবাসায় মুগ্ধ অামি
খুব ভালোর দরকার নেই
স্বাভাবিক ভালো থাকাটাই, জরুরী…
৭. শান্তিনীড়
হৃদয়ের দুয়ার থেকে দাঁড়িয়ে
দুটি হাত বাড়িয়েছি – ফিরে এসো
ফিরে এসে ঘিরে থাকো নীড়ের অাঙিনায়….
তুমি নেই, শূন্যতা অনেক
তুমি নেই, অামি দিশাহীন
তুমি ছিলে, অামি পেয়েছি সুখের দিন
তুমি থাকলে, সব-ই সুন্দর……
জানি না, অার ফিরে অাসবে কিনা
তবু অামি – পথ চেয়ে চেয়ে
শুধু অবুঝের মতো
অশান্তি নিয়ে থেকে যাবো
শান্তিনীড়ে…
Leave a Reply