প্রতিশোধ নয়, ক্ষমা একটি মহৎ গুণ
রেজাউল করিম মুকুল
নিজের বাবার প্রকৃত ঘাতক (খুনি) জেনেও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী’ ১৮ই অক্টোবর ২০০৮খ্রিঃ নলিনী’র সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন জেলে। নলিনী ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যা ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে একমাত্র ধৃত এবং জীবিত আসামী। নলিনী গর্ভবতী হওয়ায় সোনিয়া গান্ধী লিখিতভাবে নলিনী’র ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আবেদন জানিয়েছিলেন।
নলিনী স্বপ্নেও ভাবেননি তার সঙ্গে রাজীব গান্ধীর পরিবারের কেউ সাক্ষাত করতে পারেন। তার খোঁজ-খবর নিতে পারেন। প্রিয়াঙ্কা নলিনীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন আমার বাবা খুব সাদা মনের মানুষ ছিলেন, তিনি কারোই কোন ক্ষতি করতেন না। আমাকে একদিন না দেখলে ছটফট করতেন। যার বাবা নেই তার কষ্ট অন্যেরা বুঝবে না। প্রিয়াঙ্কার চোখে অশ্রুধারা, নলিনীও অঝোর নয়নে কেঁদেই চলেছে। এরই নাম বুঝি অনুশোচনার কান্না। এই কান্নার জলধারা যুগে যুগে মানুষের মনে পুষে রাখা ক্ষোভ, হিংসা ও প্রতিশোধ পরায়নতার বরফ গলা পানির স্রোতের মতো। গান্ধী পরিবার সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন,নলিনীকে মুক্ত করে দিলেও তাদের কোনো আপত্তি নেই। ক্ষমা পৃথিবীর সর্বোত্তম মহৎ কাজ। কেবলমাত্র বড় মনের মহান মানুষই পারেন ক্ষমা করে দিতে।
আমাদের জেলখানাগুলোতে কয়েদীদের শোয়ার জায়গা নেই। অমানবিক পশুর জীবন যাপন করতে হয় বিশেষ করে শীতের সময়টাতে। অপরাধ যেমনই হোক, শাস্তির মেয়াদ বিবেচনা করে অসুস্হ, ডায়াবেটিক, কিডনিসহ জঠিল রোগাক্রান্ত ষাটোর্ধ বৃদ্ধ বয়সের কয়েদীদের রাষ্ট্র নিজেও ক্ষমা করে দিতে পারেন অনায়াসে। রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত সত্ত্বা, তাই কাজটি রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত সর্বোচ্চ কতৃপক্ষই শুরুটা করতে পারেন সোনিয়া গান্ধী কিংবা প্রিয়াংকা গান্ধীর মতো মহানুভবতার পথ ধরে। কারণ প্রতিশোধ নয়, ক্ষমাই একটি মহৎ গুণ।
Leave a Reply