রূপসা সাহার ৫টি কবিতা
১. অর্বাচীনের কয়েক কলম
নীরবতার ঠোঁটে স্মৃতির বিজ্ঞপ্তি, আমার কাছে নীরবতার মানেই তিক্ত অথচ লবণাক্ত একটা অনুভূতি।
প্রবল বৃষ্টির পর জল টুপটাপ গড়িয়ে পরে মাটিতে, কার্ণিশের প্রত্যাক্ষান সহ্য করতে না পেড়ে মাটির বুকে আশ্রয় নেয় বৃষ্টির কিছু সোহাগ কাঙ্ক্ষিত ফোঁটা।ওদের দেখলে কষ্ট হয়।
আমার ভীষণ কান্না পেলে সুন্দর করে সেজে চোখের কালি ঢাকি,নিজেকে সাজাই নিখুঁত ভাবে বাইরে থেকে যাতে কেউ টের না পায়। তারপর আবহমানের সঙ্গী বানাই দীর্ঘস্বাশকে।
ক্ষতর বুকে তাবু বেধে সংসার পাতে গজকাপর আর তুলো তারপর ওদের উদ্বাস্তুর মতো সরিয়ে নতুন চামড়া নিজের নতুন ভাবে সংসার পাতে।
ওদের দেখলেও কষ্ট হয়।
২. তখনকার কথা
তখন আলসে দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে যে ব্যবধান টুকু ছিল তখন ভাত ঘুম দিতাম, ঘুম ভাঙতো আরমোরা কেটে আবার শিহরিত হতাম,
একটা অজানা আশঙ্কা, হারানোর ভয়, আর অনিশ্চয়তা বারবার শঙ্কিত করতো,
রক্তের উৎস্রোত, হৃৎকম্পন, কপালের ভাজে অসহায়তা ফুটে উঠতো।
আমার ব্যর্থ অশ্রু জল চিনতো বিছানার বালিশ, গভীর দীর্ঘশ্বাস করতো অসহায় নালিশ।
তবে আজ আমি মুক্ত খুব কাছ থেকে অনুভব করি অনাদ্রীত প্রানের স্বাধীনতা।
আমি আজ নিকোটিনের নানা ফ্লেভারের সাথে দূঃখ গুলো ভাগ করে নি কখনো ক্লাসিক, কখনো ফ্লেক কিংবা চারমিনারের ধোয়ায় পাক খেতে দেখি দূঃখ গুলোকে হিলিয়ামে ভড়া গ্যাস বেলুনের মতো উড়ে যায়।
আজ আর হারানোর ভয় ভীত করে না, আজ আমি নির্বাক দ্রষ্টা। আজও স্মৃতিতে অবগাহন করে নিজের অজান্তেই দুঃখ উত্তোলন করি তবু আজ আমি স্বাধীন।
কে বলে দেবদাস কে বলে বাউন্ডুলে কিংবা দুঃখ বিলাসী তাতে কি এসে গেল?
আমি নিজেই নিজের ব্যর্থতার সাক্ষী, নিজেই নিজের দেহ রক্ষী তাই আজ এ ব্যর্থতাকেও উদযাপন করি আত্মশুখে কিংবা গোপন কক্ষে, সাক্ষী থাকে মদের গেলাসে সাজানো ছোট্ট পেগ।
৩. অবহেলারও ফাঁকে
এই আপশোষ মাখা দুপুর জানে জলফড়িংয়ের কান্না,
ঐ আবদারের সিড়িতে লোকানো আনন্দের জলছবি।
গোপন কথা হৃদয়ে আঁকা,প্রবাদ প্রতিম ছন্দ বাঁকা বাঁকা।
গলির মোরে চিলেকোঠাটার পাশে জুই ফোল গুলো বিছিয়ে পড়ে আছে।
আমি ছড়ানো ফুলে গন্ধ খুঁজে মৌসুমী গান মাখি।
সমাজ যাকে সামঞ্জস্য বলে আমার কাছে সে সবই কুশপুত্তলিকা।
মেহগিনী গাছ শীতলপাটি বিছিয়ে দিয়ে ডাকে,
আমি আধাঁর পেরিয়ে গলির মোরে ঘুরে আজও ছন্দ খুঁজি অবহেলারও ফাঁকে।
৪. মৌসুমী স্মৃতির দূত
শূন্যতার বুকে এক্কা দোক্কা খ্যালে শব্দ,তেপান্তরের মাঠে,কিংবা ছাতিম গাছে,কিংবা বাড়ির ছাতে কিংবা গঙ্গা ঘাটে আজও কান পাতলে শুনতে পাই কারো কান্না ভেষে আসে।
ভেষজের প্রান্তে ; ডালিম গাছের ফাঁকে,পানা পুকুরের মসৃণ সবুজে আমি আজো খুঁজি নিপুণতা।
বুক ফাটা আপশোষ দেখি রঙিন চশমা পরে যাচ্ছে প্রতিযোগিতায় যার নাম “Go as you like”
ক্লান্তি ঢেকে দেয় সোহাগের বুকে অনিবার্য একাকিত্ব,এ স্বাদ মদীরার চেয়েও পরনির্ভরশীল করে বেশি।
দূরত্ব সাবলম্বি করে তোলে রোজ,
ব্যথার বুকে,নিঃসঙ্গ তলপেটে মেদের চাদর যেমন নাড়ী ভুরিকে ঢেকে দেয় ঠিক তেমনই।
বোবা টেলিফোনটা আজ বড্ড নিঃসঙ্গতায় ভোগে আমি বুঝতে পারি ঠিকই তবুও মৌনতারাও মৌসুমী স্মৃতির দূত তাই আর কথা বলা হয় না।
৫. ইচ্ছে
একটা রোদে পোড়া দিনে ঢকঢক করে এক নিস্বাসে জল খাওয়ার চেয়েও বেশি শান্তি দিত তোমার সান্নিধ্য।
আমি রাঙ্গা পলাশের মতো টকটকে হয়ে যেতাম অভিভূত হওয়ার ভঙ্গিতে।
মনে হতো নিজেকে বিশেষ হয়তো এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষও মনে হতো নিজেকে।
মনে সবুজ মাঠের বুকে কোন ঘড় ছাড়া গরুর মতো দৌড়ে যাই,
মনে হতো ধেয়ে আসা গপ্পো গুলোর সফল নায়িকা হলাম আমি,
কিংবা শীতের দুপুরের মিষ্টি রোদ,আমার আজও মনে পড়ে উচাটন হবার মুহূর্ত গুলো।
আমার আজও ভীষণ নিঃস্ব হয়ে আবার আগের মতো ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।
ইচ্ছে করে খোঁজ নিতে।
মাথা ব্যাথা হওয়া মুহুর্তে আদা দেওয়া চায়ের চেয়েও বেশি করে অপরিহার্য ভাবতে ইচ্ছে করে।কিংবা কফি কাপের ধোয়ার মতো।
দম আটকে এলে বুক ভরে অক্সিজেন নেওয়ার চেয়েও বেশি করে ইচ্ছে করে অনুভব করতে।
পিচের পথে বৃষ্টি মাখা দুপুরে ছাতার চেয়েও বেশি প্রয়োজনীয় ভাবতে ইচ্ছে করে আজও।
সহজ কথার দিব্যি খেয়েই বলি হাতের ওপর হাত রেখেছিলাম মোটে একবার কিন্তু মনে মনে সবচেয়ে বেশি ছুয়ে ফেলেছি তোমায়।
আমার আবার ইচ্ছে করে জ্বরের ঘোরে তোমার নাম আওড়াতে,কিংবা জ্বরের দিনে প্যারাসিটিমলের ৬৫0 এর চেয়েও বেশি জড়ুরি তোমায় ভাবতে।
Leave a Reply