রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন

এ কেমন শহর! মরা অজগরের মতো শূন্য হাইওয়ে!-জসিম মল্লিক

এ কেমন শহর! মরা অজগরের মতো শূন্য হাইওয়ে!-জসিম মল্লিক

এ কেমন শহর! মরা অজগরের মতো শূন্য হাইওয়ে!
জসিম মল্লিক


আজ ছিল রোববার। সারাদিন ঘরে থেকে থেকে ক্লান্ত লাগছিল। স্টে এট হোম অর্ডার আছে। চলছে কড়া লক ডাইন। সেই কবে থেকেই তো ঘরে আছি। ভয়ে ভয়ে কাজের জায়গায় যাই শুধু। এছাড়া আর কোথাও যাওয়া নাই। তার উপর রোজা শুরু হয়েছে। রোজা রেখে টের পেলাম কোনো ক্রিয়েটিভ কিছু করতে পারছিনা। সময় যেনো অনন্ত পাথরের মতো চেপে বসে আছে। আমি একটা কাজই পারি সেটা হচ্ছে লিখতে। এলেবেলে লেখা। প্রায় সময়ই যার কোনো মাথামুন্ড নাই। আমি কোনো পন্ডিত মানুষ না তাই ভাবনার গভীরে ডুব দিতে পারি না। অপাকৃত জগতে অবগাহন করতে পারি না। চিন্তার পরিধি সাধারণ জীবনে ঘুরপাক খায়।
পৃথিবীর এই দুঃসময়ে কোনো কিছুই গভীরভাবে ভাববার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। শুধু মনে হয় প্রকৃতি শোধ নিচ্ছে। আরো নেবে। প্রকৃতি অবশ্যই ব্যালেন্স করবে। এতো সহজে ছেড়ে দেবে না। অনেক পাপ, অনেক অন্যায় জমা হয়েছে। প্রতিদিন এতো দুঃসংবাদ যে মন বিবশ হয়ে আছে। অনুভূতিহীন হয়ে গেছে। শোকের আয়ু ক্রমেই ক্ষীণ হচ্ছে। কারো জন্য চোখের পানি ফেলার ফুরসত পাওয়া যাচ্ছে না। চোখের পানি মনে হয় শুকিয়ে গেছে। ঘরময় পায়চারি করি দিনভর। কখনো টিভি ছেড়ে বসে থাকি বা বইয়ের পাতা খুলে অথবা ফোন বা কম্পিউটার কোনোটার প্রতিই মন দিতে পারি না। ফোন হাতে নেওয়া মানেই খারাপ খবরগুলো সামনে চলে আসা।

ইফতারির পর জেসমিন আর আমি বের হয়েছিলাম আজ। অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। তবে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে না। ঢাকায় দেখলাম একজন নারী ডাক্তারের সাথে পুলিশের তুলকালাম কান্ড। এখানকার পুলিশ জনগণের সাথে খুবই ভদ্র আচরন করে, স্যার সম্বোধন করে। জনগণও আইন মেনে চলে। পুলিশে ছুঁলে উনিশ ঘা এই প্রবাদ এই দেশে প্রযোজ্য না। আবার পুলিশের কাজে বাধা প্রদান খুবই গর্হিত কাজ। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অভাব এবং আইন প্রয়োগে ত্রুটির কারণেও এমনটা ঘটতে পারে। তবে অই ঘটনায় আমি মোটেও বিস্মিত হইনি। ওই দেশে সবই সম্ভব। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে। পুলিশ নিয়ম অনুযায়ী যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। মন্ত্রী হোক, ডাক্তার হোক, সাংবাদিক হোক, আইনজীবি হোক, এমনকি প্রধানমন্ত্রী হলেও আইন অমান্য করলে পুলিশ ফাইন করতে পারে। এই দেশে আইন সবার জন্য সমান।

আমি আজ বের হয়েছিলাম অরিত্রিকে ড্রপ করার জন্য। অরিত্রি উইকেন্ড হলেই বাবা মার কাছে আসতে চায়। কাল রাতে এসেছিল। অরিত্রিকে ড্রপ করে ডিভিপি ধরে চলে গেলাম অর্কর বাসায়। অর্ক আর খাতিজা নিচে নেমে এলো। একনজর দেখার জন্যই যাওয়া আবার কিছু খাবার পৌঁছে দেয়া হলো। আমি নিজে হালিম বানিয়েছি আজ। বাবা মার মন বলে কথা। অরিত্রির বাসা ডাইনটাউন গিয়ে মনটা হুহু করে উঠল। আজকে এমনিতে রোববার তার উপর ওয়েদারও ভাল, ঠান্ডার প্রকোপ কম।
কিন্তু ডাইনটাউন টরন্টো যেনো একটা মৃতপুরি। অন্য সময় হলে মানুষ গিজ গিজ করত রাস্তায়। তরুণ তরুনীদের পদচারনায় মুখরিত থাকত। রেষ্টুরেন্ট, পাবগুলি থাকত ভরা। নানা ধরণের একশন ডাইনটাউনে। রাস্তার ডানে বা বাঁয়ে টার্ন নিতেই সময় লেগে যেতো অনেকটা। কিন্তু আজকে যেনো সেসব কিছু্ নাই। যেনো ক্লান্তিতে বা শোকে মুহ্যমান হয়ে আছে, ঘুমিয়ে আছে সদা জাগ্রত ডাইনটাউন। এ কেমন শহর! এ কেমন জীবন! হাইওয়েতেও গাড়ি নেই। ফাঁকা হাইওয়ে বিশালাকায় এক মরা অজগরের মতো পড়ে আছে। নিজেকেই অচেনা লাগছিল। নিজের গাড়িটাকেও অচেনা মনে হচ্ছে। ব্যাস্ত হাইওয়েতে আমি আর আমার মতো দু’একজন সন্তান ক্ষুধায় বের হয়েছে ঘর থেকে।

টরন্টো ১৯ এপ্রিল ২০২১

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge