রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন

মিষ্টি হাসির মিষ্টি মেয়ের চির প্রস্থান-জসিম মল্লিক

মিষ্টি হাসির মিষ্টি মেয়ের চির প্রস্থান-জসিম মল্লিক

মিষ্টি হাসির মিষ্টি মেয়ের চির প্রস্থান!
জসিম মল্লিক


নীল আকাশের নীচে এবং ময়না মতি ছবি দুটি বরিশালে একসাথে চলেছিল। কোনো এক ঈদে। আমি তখন স্কুলে পড়ি। সন তারিখ মনে নাই। তবে দুটি ছবিই ১৯৬৯ এ প্রথম মুক্তি পেয়েছিল। বরিশালে কবে চলেছে সেটা মনে করতে পারছি না। স্পষ্ট মনে আছে পুরো শহর রাজ্জাক কবরির পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গিয়েছিল। আলপনায় ভরে গিয়েছিল রাস্তা। রোজার মাস জুড়ে মাইকে মাইকে প্রচার চলছিল.. বন্ধুগন আগামী ঈদে সোনালী সিনেমা হলে মুক্তি পাবে রাজ্জাক কবরী অভিনীত নীল আকাশের নীচে। অন্য দিকে আর একজন প্রচার করছিল বিউটি সিনেমা হলে আগামী ঈদে মুক্তি পাবে রাজ্জাক কবরী অভিনীত ময়না মতি। তখন থেকেই আমার সিনেমার প্রতি একটু একটু ঝোঁক। কিন্তু সিনেমা যে দেখব পায়সা কোথায় পাব! পোষ্টারের ছবি দেখেই আমার মন উথাল পাথাল করত। রুপালী পর্দার মানুষগুলো আমার কাছে সবসময় স্বপ্নের। এর আগে একটা সিনেমাই দেখেছি। প্রথম সিনেমা সেটা। ছোট মামা নিয়ে গিয়েছিল। সিনেমাটার নাম ছিল বড় বউ। রাজ্জাক সুজাতা অভিনীত। আমি যদি রাজ্জাক কবরির এই সিনেমা দুটো না দেখতে পারি তাহলে আমার বেঁচে থেকে লাভ কি এমন মনে হয়েছিল তখন!


মা মাঝে মাঝে টিফিনের পয়সা দিত। সেই পয়সা না খেয়ে জমাতে লাগলাম। একদিন দেখলাম দুই টাকা হয়েছে। স্কুল পালিয়ে ম্যাটিনি শোতে গেলাম নীল আকাশের নীচে দেখতে। মনে আছে সেদিন মুষল ধারায় বৃষ্টি ছিল। শহর ভেসে যাচ্ছিল বৃষ্টিতে। আমার তো ছাতাও নাই। আমি করলাম কি একটা রিক্সার পিছনে ঝুলতে ঝুলতে গেলাম। রিক্সাওয়ালা চাচা টের পাচ্ছে, বকা দিচ্ছে কিন্তু আমি ঝুলে আছি। অবশেষে হার মেনেছিল। সিনেমা দেখে এসে বড় ভাইর হাতে ধরা পরলাম। আমি মিথ্যে বলতে গেলেই তোতলাই সবসময়। এখনও এই অভ্যাস আছে। গুছিয়ে মিথ্যা বলতে পারি না। এতো যে গল্প উপন্যাস লিখেছি কিন্তু বাস্তব জীবনে একদম বানিয়ে বলতে পারি না। ধরা খাই। সেবার ধরা খেলাম। বড় ভাই বিরাট পানিশমেন্ট দিয়েছিল। দুই হাত দড়িতে বেঁধে পা উঁচু করে ঝুলিয়ে রেখেছিল। কিন্তু আমার সিনেমা দেখা রোধ করতে পারেনি। ময়না মতিও দেখেছিলাম পালিয়ে। সেই থেকেই আমি কবরির ভক্ত হয়ে গেলাম। কলেজে যখন পড়ি তখন চিত্রালী পূর্বানীতে কবরির বিখ্যাত হাসি নিয়ে অসংখ্য চিঠি লিখেছি।


বরিশালে অভিরুচি সিনেমা হলের গেট কীপার ছিল ছিদ্দিক। আমি কবরির সিনেমা মুক্তি পেলেই প্রায় ডিসি ক্লাসে গিয়ে ঘুর ঘুর করতাম। পকেটে পয়সা থাকে না বলে দেখতে পারতাম না। ছিদ্দিক আমাকে চিনে ফেলেছিল। এরপর যখনই যেতাম আমাকে কিছুক্ষনের জন্য হলে ঢুকিয়ে দিত। আমি দশ পনেরো মিনিট ফ্রী সিনেমা দেখতাম। তাতেই আমি খুশী। কবরিকে দেখার পর মাথায় শুধু কবরির হাসি লেগে থাকত। চিত্রালী থেকে কবরির সাদা কালো ছবি কেটে পড়ার বইয়ের মধ্যে রেখে দিতাম এবং প্রায়ই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম। তারপর দিন যায়, মাস গড়িয়ে বছর আসে। আমি একদিন ঢাকা মুভ হলাম। আস্তে আস্তে বাংলা সিনেমার প্রতি আবেগ কমে যাচ্ছিল। ইংরেজি, হিন্দী সিনেমার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়লাম। একদিন আকস্মিক কবরির সাথে আমার দেখা হলো। কোনো প্লান করে না। সিএমএইচ হাসপাতালে দেখা হয়েছিল, ১৯৯৩ সালে। সেই একবারই। কথা হয়েছিল অনেকক্ষন। মিষ্টি হাসির মিষ্টি মেয়েটি চলে গেলো!

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge