শুক্রবার, ০৯ Jun ২০২৩, ০৬:২৬ অপরাহ্ন

প্রেমটা হয়েছিল পুণ্ড্র নগরে-রানা মাসুদ

প্রেমটা হয়েছিল পুণ্ড্র নগরে-রানা মাসুদ

প্রেমটা হয়েছিল পুণ্ড্র নগরে
রানা মাসুদ

তোমার সাথে প্রেমটা আমার হয়েছিল পুণ্ড্রনগরে–
আমাদের প্রেমটাও প্রাচীন নগরীর মতো সুপ্রাচীন
ওইযে স্মৃতিময় বটগাছটা আদি থেকে দিচ্ছে ছায়া
আলপথ কী মেঠোপথ ধরে একদিন হেঁটেছিলাম,
এসেছিলো মানুষ, পাখ-পাখালি, বৌদ্ধ-সেন-মুসলিম
বটের ছায়ায় দু’দণ্ড বিশ্রাম নিয়েছিল বর্ণিল ইতিহাস;
গাছটা বৃদ্ধ হয়ে গেছে, বৌদ্ধ-সেনরা নেই,নেই বাঁধাটাও!
তোমার সাথে প্রেমটা আমার হয়েছিল পুণ্ড্রনগরে–
সহস্রাব্দকাল আগে,শত বছর আগে,এইতো কিছুদিন আগে,
সময় কোনও বন্ধন নয়, আমাদের সীমান্ত নয় কোনও চেয়ে দেখো তুমি ওই করতোয়া নদীর শুকনো বুক
পাশের শিমুল গাছটাও কতকাল একাকী উন্মুখ হয়ে আছে
সেদিন নদীটা ছিল জলে ভরা নদীর ছিলোনা দুঃখ কোন
সেদিন গাছের পাতা হাসছিল সদ্যস্নাত রমণীর মোহনীয়তায়
বৃষ্টি ঝরছিলো করতোয়ার বুক জুড়ে যেন ভরতনাট্যম
তুমি আমি বসে বৃদ্ধ নদীর তীরে যেন সহস্রাব্দকাল ধরে।
তোমার সাথে প্রেমটা আমার হয়েছিল পুণ্ড্রনগরে–
তখন তো প্রেমে পড়াছিল বারণ অন্তরজুড়ে জেলখানার গরাদ
মুক্তি চাও পুণ্ড্রের পোড়া ইটের দেয়ালে চিৎকার ধ্বনিত হয়
বৃষ্টির জলের সাথে বোবা কান্নার জল বয়ে যায় করতোয়ায়
আমি তখন হঠাৎ বীর পুরুষ ছুঁয়ে দেই তোমার হাত;
আহ্ নরম পেলব সে হাত হারিয়ে যায় এক পুরুষের হাতে
আমি চেপে ধরি যেন ধমনীর উষ্ণতা ছোঁয় মন অলিন্দে
করতোয়ার জল কল্লোল ছাপিয়ে ঘুঘুর হাহাকার ছাপিয়ে
ডাহুক-ডাহুকির মিলন ইচ্ছার দুর্বিনীত ডাক ছাপিয়ে
পত্র পল্লবে বৃষ্টি ফোটার নাচানাচি ছাপিয়ে
অদূরে গড়ের পাহারাদারদের পরাধীন টহল ছাপিয়ে
প্রাচীর বেষ্টিত নগরীর প্রেমহীন দুরাত্মার পায়চারি ছাপিয়ে
প্রিয়তমা তোমার হৃদয়ের কম্পনটা ঠিক শুনতে পাচ্ছিলাম।
তোমার সাথে প্রেমটা আমার হয়েছিল পুণ্ড্রনগরে–
হাতের উষ্ণতায় যা বলার বোঝার বুঝে নিলে তুমি
আমার কাঁধে রাখলে মাথা চুলের কামগন্ধ দিয়ে ছড়িয়ে
ঠিক তখুনি ঝোপের ধারে সাপ বেজির মরন যুদ্ধ হলো শুরু
তোমার কানপাশাটা ছুঁয়ে তোমার স্ফীত নাকের ঘাম ছুঁয়ে
কন্ঠার অনবরত ওঠানামার ভাঁজ ছুঁয়ে অনাবৃত গ্রীবা ছুঁয়ে
চিৎকার করি আমি তোমাকে চাই আজন্ম সাথী করে।
থরথর বুক ভয় ভয় মুখ তাকাও তুমি গড়ের দিকে
ভীত দুই চোখে অস্ফূট কন্ঠস্বরে হাহাকার করে ওঠো
-“রাখাল আমি অন্য কারও বন্দিনী, প্রাসাদের শোভাবর্ধক”।
তোমার সাথে প্রেমটা আমার হয়েছিল পুণ্ড্রনগরে–
তারপর দিনের পেটে দুঃখ রাতের পেটে কষ্ট
বছর ঘুরে যুগ যুগের পথে হাত ধরে শত বছর
আমি অপেক্ষায় আছি বন্দিনী তোমার করতোয়ার দিকে চেয়ে;
তাকিয়ে দেখো ক্ষয়ে গেছে পুণ্ড্র নগরের ইট টুটে গেছে শৃঙ্খল,
পানি শুকিয়ে নদী লোকালয় হয়ে গেছে জিঞ্জির নেই কোন
তুমিও মুক্ত বিহঙ্গিনী তবুও আগলে রেখেছো প্রাসাদের চিহ্ন
তুমি মুক্ত মায়াবতী তবুও বন্দি রেখেছো মায়ায় কায়ায় নিজেকে।
তোমার সাথে প্রেমটা আমার হয়েছিল পুণ্ড্রনগরে–
রাজনারী দেখো চেয়ে এক রাখাল বসে আছে করতোয়ার তীরে।

প্রচ্ছদের ছবি কবির তোলা

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge