বুধবার, ০৭ Jun ২০২৩, ০৯:৪৮ অপরাহ্ন

দেওপলি-দিব্যেন্দু নাথ

দেওপলি-দিব্যেন্দু নাথ

দেওপলি
দিব্যেন্দু নাথ

পূর্ব প্রকাশের পর…

(তিন)
শিক লাগানো জানালা দিয়ে ফনফন করে বাইরের বাতাস ঢুকছে। ভীড় কম থাকায় সহজেই জানালার পাশের আসন পেয়ে যায় বদাচগী। প্রথম ট্রেন যাত্রায় মনে একটা ভয় থাকলেও দুর্বৃত্তদের কব্জায় থাকার চেয়ে কম।
কখনও কখনও বাড়ি ফেরার উল্লাস তার বেদনা ভরা হৃদয়ের আয়নায় পারিতোষিক হয়ে দাড়ায়। মনে পড়ে অপহৃত সঙ্গীদের কথা। কোন এক শিমুল তলায় তাদেরকে বলি দিয়ে ছিল দুর্বৃত্ত কুকিরা। সে খবর কি ছেঙির মানুষ পেয়েছে? তাকে কেন বাঁচিয়ে রেখেছিল সর্দার। শুধু কি দেহ ভোগ করার জন্য?
প্রতিরাতে তার নাদুসনুদুস শরীরের মতো নরম মনটাকেও ক্ষতবিক্ষত করেছে কুকি সর্দার। দিনে হাত পা বেঁধে ফেলে দিত বন্দিশালায়। সেখানেও প্রহরীদের কুনজরের সঙ্গে জ্বলতে হয়েছে তাদের লালসার আগুনে।
কাল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তার রূপ যৌবন। মেদযুক্ত তলপেট, কামোত্তেজক নিতম্ব, সটান বুকের দুর্বিনীত চাহনি। এসব তার তৈরি নয়! ঈশ্বর প্রদত্ত। এ জন্য সে দায়ী হতে যাবে কেন?
ক্ষতবিক্ষত দেহের সঙ্গে তার মন মানসিকতা একই বিভীষিকায় গাঁথা। জীবনের তো সাধ-ই ভুলে গেছিল। সর্দার রমণীদের মানবিক ব্যবহার, এ জনমে শোধ হবে না। চালায় চড়েও সম্পুর্ণরূপে আশ্বাম্বিত হতে পারেনি, আদৌও কি বাঁচবে সে! সমশেরনগরের বাঙালি ভাইয়েরা যা করল, তাও তার জীবনে ভুলবার নয়। ভগবান কত রকমের মানুষ পাঠিয়েছে পৃথিবীতে। মনে মনে – হা বুদ্ধ বলে, দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বদাচগী। এই অবাঞ্ছিত ঘটনা, জীবনে কত শিক্ষা দিয়ে গেল, বদাচগীকে। শঙ্কা একখনও আছে। আদৌও কি সে বাড়িতে পৌঁছতে পারবে? ট্রেনে কোনও বিপদ হবে না তো? স্টেশনে নেমে একা যেতে পারবে তো – ছেঙি? সেখানে কোন নতুন অভিজ্ঞতা দাঁড়িয়ে আছে তার জন্য? জানে না বদাচগী।
ফেলে আসা দিনগুলো রোমন্থনে আবিষ্ট সে। কখনও যে ট্রেন গতি কমিয়ে আসছে, খেয়াল নেই তার। আচমকা ঝাকুঁনি মেরে দাঁড়াতেই বুঝতে পারে, স্টেশন। নাম কি, জানে না বদাচগী। পাশের লোকটাকে জিঞ্জেস। করে জানতে পারে, আখাউড়া স্টেশন। এখান থেকে ত্রিপুরার রাজধানী খুব নিকটে।
মনে মনে আশ্বস্ত, চট্টগ্রাম আর বেশি দূরে নয়। অজান্তেই বাড়ি ফেরার উল্লাস বুকে বাজে। উচাটন দৃষ্টিতে গবাক্ষের দিকে তাকায়। একদল ফুটবল খেলোয়াড়। উৎকণ্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত মুখাবয়ব আর আলাপচারিতায় বুঝা যাচ্ছে, চাকমা।
তখনই নজর এল, ছেঙির মনোরঞ্জন। বদাচগী জানে, সে রাঙ্গামাটি দলের অধিনায়ক। তার খ্যাতি শুধু ছেঙি বা রাঙামাটিতে নয়, অনেক আগেই দেশবিদেশে ছড়িয়ে গেছে। সমবয়েসি হলেও সম্পর্কে বদাচগীর নানু (দাদু)।
-সুনানু? অভিপ্রায়ের ডাক শুনে জানালায় তাকায় মনোরঞ্জন।
-বদাচগী। তুই-ই! বলে আতঁকে উঠে। ইংরেজ মেয়েটার সঙ্গে ছেঙির কিছু মেয়ে উদ্ধার হলেও বদাচগী যে উদ্ধার হয়নি, জানে মনোরঞ্জন। তখনই যেন ট্রেন নড়ে উঠল। ধাপাধাপি করে সবাই উঠে এই বগিতে।
অনেক কথাবার্তার মধ্যে সংক্ষিপ্ত আকারে অভিশপ্ত দিনগুলির বর্ণনা করল বদাচগী। শুনে কামরার সবাই। কিছুক্ষণের জন্য হলেও রুদ্ধশ্বাসে থমকে গেল কামরা।
আদৌও কি এই দগদগে দাগ, কোনওদিন ভুলতে পারবে বদাচগী? বারবার পরিবর্তিত হচ্ছে মুখাবয়ব। বাষ্প ইঞ্জিনের ফুৎ ফুৎ শব্দে যেন তা আরও করুণ রূপ নিয়েছে। মনোরঞ্জনের দৃষ্টিতে তা স্পষ্ট। ইঞ্জিনের যান্ত্রিক শব্দ আর চাকার ধাতব আওয়াজ এসময় বড় বেমানান মনে হচ্ছে। মনোরঞ্জনের মনে হল, বদাচগীর জীবনে যা হবার তো হয়ে গেছে, এ ভাবে দম আটকে থাকলে চলবে না। রেলযাত্রার আনন্দ দিয়ে বিমর্ষ বদাচগীকে পুনর্জীবিত রাখতে হবে। কয়েকজন অমানুষের সংস্পর্শে কিছুদিন থাকলে জীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে না। মানব জীবন যে অমূল্য, চাইলে বারবার পাওয়া যায় না। শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও হার মেনে আশা ছাড়তে নেই। সময়ের কাছে সব ছেড়ে দিয়ে মনকে প্রাসঙ্গিক রাখতে বারবার প্রসঙ্গ বদলাতে হয়। এতক্ষণ নীরবে আলোচনা শুনে, হঠাৎ বদচগী বলল,
-সুনানু?
-বল নাতিন?
-কোথায় গেছিলে?
-ত্রিপুরায়।
-টুর্নামেন্ট ছিল?
-হুম। মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্যের সৌজন্যে।
-জিতে এসেছো বুঝি।
-জিত বো না মানে? এই বলে দলের গোলকিপারকে বলেন, ব্যাগ খুলে নাতিনকে শীল্ডটা দেখা। বদাচগীর মুখে একটা হাসির ঝিলিক খেলে গেল। – এও তো কম নয়। মনে মনে খুশি মনোরঞ্জন। প্রসন্ন সুরে বললেন,
-জানিস্ নাতিন! আমাদের সুনাম এখন ঢাকা কলিকাতায়ও সমান চলছে। ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে আবার একটা ঝাকুঁনি মেরে থেমে গেল ট্রেন।
স্টেশনে নেমে খেলোয়াড়রা যার যার গন্তব্যে রওনা হল। বদাচগীকে সঙ্গে নিয়ে দেওয়ান বাড়ি হয়ে বাড়ি ফিরবে মনোরঞ্জন। ট্রেন যদি সময়ে পৌঁছাত চৈত্রের শেষ দণ্ডের আলো পেত তারা। কিন্তু আজ দুঘন্টা লেট। সন্ধে মিলিয়ে নেমেছে অন্ধকার।
বাঁশের চোঙে মাটিতেল ঢেলে মশাল জ্বালিয়ে রওনা হল দুজন। কেরোসিনের কালো ধোঁয়ায় ভরা লাল আলো, রাত আধাঁরের গোপন সম্পর্কটাকে তেমন ম্লান করতে পারছে না। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
এতদিন পর বদাচগী উদ্ধার হবে, গ্রামে কল্পনাতীত হয়ে গেছে। মেরিস্টার উদ্ধারের পর ইংরেজরা বেইমানি করলেও দেওয়ান বুদ্ধমণি বোন ফিরে আশা ছাড়েননি। তাঁর বিশ্বাস, বোন এখনও জীবিত। একদিন ফিরে আসবেই।
বদাচগী হারিয়ে যাওয়ার কথা দিনে দিনে অনেকটা চাপা পড়ে গেছে ছেঙিতে। বর্তমানে ছেঙির মুখ্য বিষয় খুন হয়ে যাওয়া বৃটিশ ফরেস্টার।
বৃটিশের পদভারে বস্তুত থরথরে ছেঙি। খুনী এখনও ধরা পড়েনি। নিশ্ছিদ্র পাহারায় চারদিকে জাল বিছানো পুলিশের। খুনী চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু ধরা যাচ্ছে না। রাতদিন প্রতিটি গ্রামে পুলিশি তাণ্ডব। সন্দেহমূলক কিছু আসামী ধরে আনছে। লক-আপে থ্রাড ডিগ্রী প্রয়োগ করে কাউকে ছেড়ে দিচ্ছে আবার কাউকে আটকে রাখছে। যা খুশি তাই করছে পুলিশ। কিছুতেই মূল আসামীর হদিস পাচ্ছে না। আদৌ কি আসামী ছেঙিতে আছে? নাকি পালিয়ে গেছে। তার কোনও সুরাহা পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রেমবিষে নীল হয়ে যাওয়া যুবতীর হৃৎপিণ্ডের মতো উঠানামা করে ছেঙির রাস্তা টিলার পেটে পেটে চলে গেছে। পাহাড়ের অগণিত গাছগাছালির ফাঁকে-ফাঁকে তারার হাসি কেড়ে, জোনাকিরা ঝোপে-ঝোপে হাসছে। এই ছলচাতুরি দেখে, মাঝে মাঝে ছন্দ দিচ্ছে রাতজাগা পাখি। হঠাৎ পাশ দিয়ে কিছু একটা পালিয়ে যাওয়ায়, দ্রুত জঙ্গল সড় সড় করে নড়ে উঠল। ধচমচিয়ে উঠল বদাচগী।
-সুনানু?
-ও কিছু নয়। টলা বা মেকুর-খাঁঙ হবে। খানিকটা আশ্বস্ত হয়ে বুকে হাত দিয়ে থু থু ছিটায় চার পাশে। আবার তারা চলতে শুরু করল। এতক্ষণ আগেপিছে ছিল, এখন পাশাপাশি দুজন।
সারারাত হাঁটতে হবে। রাস্তায় কোনো বিপদ না হলে তারা সকাল সকাল পৌছে যাবে দেওয়ান বাড়ি। বর্তমানে বুদ্ধমণি দেওয়ানের রাজপাট নেই। মহারাণী কালিন্দীর রাজপাট শেষ হতেই এই লবির অধিকাংশ দেওয়ান পদ হারিয়েছেন। কিন্তু তখনকার সময়ের নামীদামী দেওয়ান ছিলেন তিনি। এখনও সেই নামডাক আছে। ইদানিং কালে ছেঙিতে চোর ডাকাতের প্রাদুর্ভাব খুব। কিন্তু বুদ্ধমণি দেওয়ানকে এখনও ভয় পায় তারা।
আজকের এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে চোর-ডাকাত থেকে নিশ্চিন্ত মনোরঞ্জন চাকমা। সঙ্গে দেওয়ান ভগ্নি। পুলিশের হয়রানির ভয় না থাকলেও ভয়াবহ জংলী পথে, দেওয়ান ভগ্নির সুরক্ষার কথা চিন্তা করে রাতে যেতে দেবে না পুলিশ। থানায় রাত কাটিয়ে ভোর বেলা যেতে হবে।
কথাটা একেবারে ফেলে দেওয়ার নয়, বন্যেরা তো সবাই জঙ্গলের রাজা। কেউ কারো অনুশাসন মেনে চলে না। সবাই স্বাধীন। আমাদের মতো ভিতু হয়ে ইংরেজের পরাধীনতা মানে না। এছাড়াও পুলিশ এখনও জানে, বদাচগী অপহৃত। তা নিয়েও সমস্যা হতে পারে।
সময়ের সাথে সাথে বাড়তে লাগল রাতের গভীরতা। তৈরি হতে লাগল নানা নিশাচরের ‘কুখাক্ষি’ বিকট শব্দ জঞ্জাল। বুকে দুরদুর কাঁপুনি। সাথে পাহাড়ের লালিত পোকামাকড়ের সুমধুর ধ্বনিতে শব্দ জঞ্জাল নতুন মাত্রা পেল।
সমবয়েসি সুনানুর পায়ে তাল মিলিয়ে চলছে বদাচগী। নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার উন্মাদনা বদাচগীর অজান্তেই মনে পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এত দিনের এত এত ক্লান্তি প্রায় নিমিষেই ভুলে গেছে। কিন্তু নির্জন জঙ্গলে এক যুবকের সঙ্গে এক যুবতি চলার অনুভূতির সুড়সুড়ি হৃদয়কে সঙ্কোচবোধে রেখেছে। যদিও বা কিছু একটা হয়ে যায়, সে তো আর কুকিদের মতো ভয়ংকর হবে না। এছাড়া তো, মনোরঞ্জন ছেঙির ভরসার পাত্র।
দূরে দূরে কিছু জঙ্গলবাসীর গর্জন শোনা যাচ্ছে। এলাকা দখল নাকি জমানো ঝগড়ার তাণ্ডব। আসলে তো সব প্রাণীই স্বাধীনচেতা, কেউ পরাধীন থাকতে চায় না। বদাচগী ভয় পেলেও মনোরঞ্জন নির্বিকার, তার কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। চলছেই চলছে।
বদাচগীকে সাহস জুগিয়ে সারারাত হেঁটে তারা দেওয়ান বাড়ির সামনে। সূর্য কালাঝাড়ের চূড়া ছুঁতেই আকাশের সব তারা মিলিয়ে গেছে। ক্ষণে-ক্ষণে ভেঙ্গে গেছে রাত আঁধারের গোপন সম্পর্ক। পূবাকাশ রাঙিয়ে টিলায় টিলায় সোনালী আস্তরণ। মনে হচ্ছে এতদিন পর বদাচগীকে দেখে কালাঝারি পাহাড় সহস্র আলোক ঝলকানিতে হাসছে। পাখিরা গাইতে শুরু করে দিয়েছে ডালে ডালে। চড়ুই বাবুই দলে দলে বেরিয়ে যাচ্ছে দেওয়ান বাড়ির ঘরের খাপ আর গাছগাছালির মধ্য থেকে। ঝুলে রয়েছে উলুছনে গড়া বাসা। কোনো কোনো বাবুই আবার ফিরে আসতেই শোনা যাচ্ছে, ছানাদের কিচিরমিচির। খাবারের সন্ধানে, সবাই মিলে উড়াউড়ি করে ঝগড়া আর কাকলিতে ভরিয়ে দিয়েছে ছেঙির মাঠ।
সকাল সকাল ফুলের নীরবতা ভেঙ্গে দিয়েছে মধু লোভী অলি ঝাঁক। বারবার ডেকে উঠছে পালিত ও বনের বিহঙ্গ। চারিদিকে কেমন একটা বুনোট গন্ধ, আনন্দ ছড়িয়ে দিচ্ছে।
দাদার টং দেখে বদাচগী শিউরে উঠল না পুলকিত হল, বুঝা গেল না। বাড়ি যেমন ছিল, তেমনই প্রশস্ত আছে। এতদিনের তার ক্লান্ত শরীর আরাম চাইছে; স্বজনদের পাশে আসতেই। প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার দুর্বীনিত মন। বাড়ি এত নীরব কেন! কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। সবাই হয়তো ঘুমে, কিন্তু কুষাণি?
বদাচগী কাঁদবে না হাসবে, বুঝে উঠতে পারছে না। কাকে ডাকবে। মাকে? সে তো শোনবে না। মনোরঞ্জন আগে জানিয়ে দিয়েছিল, কন্যাশোকে চবাশালে (শ্মশান) চড়ে গেছেন তিনি। তাহলে, দাদাকে নাকি বুজিকে(বৌদি) ডাকবে?
স্থির করতে পারছে না তার অস্থির মন। ঠায় দাঁড়িয়ে রইল বাড়ির কৃষ্ণচূড়া গাছে হেলান দিয়ে।
-কুষাণি পর্যন্ত একবার আসছে না! সে ও কি ধরে নিয়েছে, আমি মরে গেছি? মানুষের মতো তো তারা নয়, ভবিষ্যৎ বলতে পারে। নাকি কাচলংএর পার থেকে সে ফিরে আসেনি? তাকেও কি…। চোখ দুটি বুজে নেয় বদাচগী। সঙ্গে সঙ্গে কয়েক ফোঁটা মুক্তো ঝরে গেল, আরক্ত সুন্দর গাল বেয়ে। তখনই একটি ক্ষীণ আওয়াজ কানে ভেসে এল। চোখ মেলে দেখে, কপাট খুলে সানসি (সিঁড়ি) বেয়ে উঠোনের মাটিতে কেউ একজন নেমে এলেন। ঘুমকাতুর শরীর টানা-হ্যাঁচড়া করে ছোট চোখে দাঁড়িয়ে। পাছরা-রিয়ায় সুসজ্জিত লাস্যময়ী দেহ। হাতে অলংকার। ঝনঝন হাতে চোখ রগড়াতে গিয়ে এদিকে তাকাচ্ছেন। হয়তো সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারছেন না। একটু এগিয়ে এলেন। চোখ টেনে, ভালো করে দেখে, গলা কাঁপিয়ে বললেন,
-ব-দা-চ-গী। কোনও উত্তর নেই। কিন্তু সজল নয়নে ভেসে উঠল কুকিদের নির্মম অত্যাচার।
-ভগবান বুদ্ধ! একি তোর অবস্থা রে বদা? এত জরাজীর্ণ হয়ে গেলি।
সবসময় দেখে আসা প্রসাধনীর মতো ফুটফুটে ননদি আজ ময়লা কাপড়ের মোড়া এক কাঠপুতলি মাত্র। কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ভাগ্যলক্ষ্মী। কাতরে বিভোর হয়ে টেনে নিলেন বুকে।
জড়িয়ে রইলেন অনেকক্ষণ। মনে হল ননদ-বৌদির কান্নায় বানভাসি ছেঙির পাহাড়।
সময়ের আবর্তনে কান্নার তীব্রতা বেড়েই চলল। এক সময় তা থেমে গেল। ননদ-বৌদির মিলনাবেগে মনোরঞ্জনের চোখও খালি নয়। বাড়ির বাগানে দাঁড়িয়ে থাকা ফুলগুলি নির্বিকার, গাছগাছালি এমনকি দেওয়ানের প্রশস্ত টংঘরও যেন কেঁদে আকুল। তখন কে যেন একজন, হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এলেন। পরিধানে হাঁটুঢাকা সাদাধূতি। প্রশস্ত বুক ঢাকা হাতল গেঞ্জিতে। তাঁতের রঙিন গামছা কাঁধে।
এক নিমিষে চিনে নিলেন মায়ের পেটের বোনকে। যুগের হলাহল পানকারী স্থিরধীর দেওয়ানও চোখের জল আটকে রাখতে পারলেন না। বুকের শক্ত পাঁজর ভাঙতে লাগল পাটকাঠির মতো মট-মট করে। এতদিন বিয়োগ শোকে আটকে থাকা দুই নারীর মিলন অশ্রু নিয়ে পা বাড়ালেন প্রাচীন টংএ, নতুন খুশির সন্ধানে…..।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge