রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০১:১৪ অপরাহ্ন

আমার দেখা একজন নির্ভেজাল দেশপ্রেমিক-জোবাইদুল ইসলাম

আমার দেখা একজন নির্ভেজাল দেশপ্রেমিক-জোবাইদুল ইসলাম

আমার দেখা একজন নির্ভেজাল দেশপ্রেমিক
জোবাইদুল ইসলাম

মাঠের তুখোড় খেলোয়াড়, দক্ষ সংগঠক, মঞ্চ বেতারের নাট্যশিল্পী, কোমল মনের সজ্জ্বন মানুষ সব ছেড়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে গিয়েছেন। নিজের জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করে নিজে বীরের বেশে ফিরে এলেও নিজের আপন ভাতিজা মোবারককে সাথে আনতে পারেননি। মোবারক স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে তিনি আবার ফিরে গেছেন মাঠে। ফুটবলের নান্দনিক স্ট্রাইকার ছিলেন। খেলেছেন দাপটের সাথে। তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে হকি খেলেছেন। ছিলেন জাতীয় পর্যায়ের এথেলেট। রংপুরের অনেক ক্লাব পাঠাগার গড়েছেন। দীর্ঘদিন ছিলেন রংপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। হকি ও ফুটবল ফেডারেশনের জাতীয় পর্যায়ের নেত্রীত্ব দিয়েছেন। যুবকদের স্বাবলম্বী করতে গঠিত যুব সংস্থার জাতীয় নেত্রীত্ব দিয়েছেন সততা নিষ্ঠা আর দক্ষতার সাথে। তিনি ব্যবসায়ীদের সংগঠন চেম্বারেরও নেত্রীত্ব দিয়েছেন। তিনি লেদ মালিকদের একটি সংগঠন সারাদেশে গড়ে তুলেছেন। রংপুর কৈলাশ রঞ্জন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে স্কুলের যুগান্তকারী উন্নয়ন করেছেন। স্কুলের আয়ের উৎস বাড়িয়ে তহবিলে প্রচুর অর্থ জমা করেছেন। স্কুলের উন্নয়নের স্বার্থে একটি বিরাট মার্কেট তৈরি করেছেন। সেই মানুষটি ছিলেন আমাদের সবার প্রিয় মোজাফফর হোসেন।
মোজাফফর হোসেন ছিলেন সৎ, নির্ভীক স্বাধীনতা প্রিয় শান্তিতে বিশ্বাসী একজন পরিশ্রমী পরিচ্ছন্ন মানুষ। দেশের প্রয়োজনে যেকোনো ঝুঁকি তিনি নিয়েছেন এবং নিতে প্রস্তুত থাকতেন। স্বাধীনতার পর রক্ষীবাহিনী কোনো কারণ ছাড়া একাধিকবার ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেছে শহীদ পরিবারের এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। তিনি সৎ সাহস বুকে লালন করতেন বলে কখনো পালিয়ে থাকেননি। তিনি বলতেন” আমি অন্যায় করিনি পালাবো কেন?” তাঁকে ২০১৭ সালে শুধু রাজনৈতিক বিদ্বেষের কারণে গুম করার লক্ষ্যে সাদা পোষাকধারিরা রাতের গভীরে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। সাথেসাথেই রংপুরের সমগ্র মুক্তিযোদ্ধারা গর্জে উঠেছিলো। ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন রংপুরবাসি। যার ফলশ্রুতিতে সরকার তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। কিন্তু ছেড়ে দিলেও ক্লিন ইমেজের এই মানুষটিকে লালমনিরহাটে একটি মিথ্যা মাদক মামলা দিয়ে থানায় কৌশলে তাঁকে উদ্ধার দেখান।
মোজাফফর হোসেন ছিলেন দুর্নীতিমুক্ত সহজসরল একজন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতা। তিনি ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কুটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক ও রংপুর মহানগরের সভাপতি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন জননেতা। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাস করতেন। হটকারিতার বিরুদ্ধে ছিলো তাঁর শক্ত অবস্থান। নজরুলসঙ্গীত গাইতেন।
রংপুরের প্রতিটি সংগ্রামে, মানুষের কল্যাণে, দাবী আদায়ে তাঁকে আমরা পাশে পেয়েছি। তার মৃত্যুতে রংপুরের মানুষ একজন যোগ্য নেতা হারিয়েছেন। হারিয়েছেন প্রিয় বন্ধু, দক্ষ খেলোয়াড়, অভিজ্ঞ সৎ সংগঠক, নির্লোভ হৃদয়বান একজন মানুষ। দেশ হারিয়েছে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দক্ষ একজন ক্রীড়াবিদকে। আমরা হারিয়েছি একজন দ্বায়িত্ববান অভিভাবক।
তাঁর জীবনের দুঃখ শুধু রাজনৈতিক বিদ্বেষের কারণে মুক্তিযুদ্ধের কোঠায় চাকুরির যোগ্যতা অর্জন করার পরও তাঁর মেধাবী মেয়ের চাকুরি হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে পাশ করেও বাবার রাজনৈতিক পরিচয় তাঁর মেধাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
১ সেপ্টেম্বর তাঁর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতি করবেন ইনশাআল্লাহ। ভালো থাকুক ওপারে জনপ্রিয় এই মানুষটি।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge