আজ কবি ও ছড়াকার হাই হাফিজ জন্মদিন
পাতা প্রকাশ প্রতিবেদক
আজ কবি ও ছড়াকার হাই হাফিজ জন্মদিন। ১৯৭২ সালের ২৯ আগষ্ট লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর-দোলাপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন তিনি। বর্তমানে রংপুর মহানগরীর মুলাটোল -এ স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি। তার জন্মদিনে পাতা প্রকাশ পরিবারের পক্ষথেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
হাই হাফিজ এর জীবনি:
১৯৭২ সালের ২৯ আগষ্ট লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর-দোলাপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন তিনি। তার পিতা মরহুম কুদরত উল্লাহ এবং মাতা মরহুম যোবেদা খাতুন দুজনেই ১০৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর বুকে বেঁচেছিলেন। হাই হাফিজ এর পুরো নাম হাফিজুল ইসলাম হাফিজ। ৪ ভাই ৪ বোনের সবাই শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী। শিক্ষিত, পরপোকারী ও সম্ভ্রান্ত ফ্যামিলি হিসেবে এলাকায় বেশ সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে।
আদিতমারী গিরিজা শংকর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, লালমনিরহাট থেকে ১৯৮৮ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশের পর উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ, রংপুর থেকে ১৯৯০ সালে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাশ করেন। পরে উক্ত কারমাইকেল কলেজ থেকেই ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে অনার্স ও মাষ্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।
স্কুলজীবন থেকেই তার লেখালেখি শুরু। স্থানীয় দৈনিক যুগের আলো ও বায়ান্নর আলোসহ জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠ, যুগান্তর, কালেরকণ্ঠ, ভোরের কাগজ, ইত্তেফাক, সংগ্রাম, ইনকিলাব, মানবজমিন ইত্যাদি পত্রিকা এবং সারাদেশের বিভিন্ন সাহিত্য ম্যাগাজিনে কবিতা, ছড়া, জীবনী, ছোটগল্প, সমসাময়িক লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বই ০৮ টি। ১.প্রথম দিনের সূর্য (কাব্য) ২.ঝাল মিষ্টি টক (ছড়া) ৩. আবারো বসন্ত (কাব্য) ৪. যে চোখে স্বপ্ন ছিলো (কাব্য) ৫. ছড়ার দেশে বেড়াই হেসে (ছড়া) ৬. সোনালী সুখের ভ্রূণ (কাব্য) ৭. মুক্তিযুদ্ধের কবিতা(সম্পাদিত) ৮. অস্তিত্বে মানবতার চাষাবাদ (কাব্য)। তার লেখায় দেশপ্রেম, প্রকৃতি, মনুষ্যত্ববোধ, দ্রোহ, ক্ষোভ, মানবজীবন, দুঃখ-কষ্ট, অনাচার, শোষণ-জুলুম, অনৈতিকতা ইত্যাদি বিষয় ফুটে উঠেছে। মানসম্পন্ন লেখা-লেখির কারণে সারাদেশে তার বেশ সুনাম ও পরিচিতি রয়েছে।
ছাত্রজীবন থেকে লেখালেখির পাশাপাশি বাংলাদেশ বেতার রংপুরে নিয়মিত অনুষ্ঠান ঘোষক হিসেবে দীর্ঘদিন (১৯৯৩-২০১১ সাল পর্যন্ত) দায়িত্ব পালন করেন। ক্যান্টঃপাবলিক স্কুল ও কলেজ, রংপুরে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে চাকুরি জীবনের শুরু হলেও পরে ১৯৯৮ সালে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে ব্যাংকে যোগদান করেন। বর্তমান একটি সরকারী ব্যাংকে এজিএম পদে কর্মরত। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লিখনি চালিয়ে যেতে চান কবি ও ছড়াকার হাই হাফিজ।
হাই হাফিজ এর কবিতা
১. সোনালী সুখের ভ্রূণ
এক একটা সন্ধ্যা এসে দিনকে ঢেকে দেয়,
নিকষ কালোর বুকে ভর করে জোনাকি।
এক একটা রাত কাটে দুঃস্বপ্ন যাতনায়,
সোনালী সুখের ভ্রূণ কারো হাতে গোনা কি?
নিঝুম নিস্তব্ধ রাত, দু’চোখে গভীর ঘুম,
জেগে থাকে নক্ষত্র-চাঁদ, দীপজ্বালা প্রহরী।
নিশাচর পাখিদের তবু নীড়ে ফেরা ধুম,
পবনের ঘুড়ি যেন, দল বাঁধা রাঙা পরী।
রাতের আঁধার শেষে সোনালী আলোর ভোর,
শুরু হয় পুনরায় ব্যস্ততা, পৃথিবীর!
আলোয় আলোয় হাসে বাঁধনের প্রীতিডোর,
সকাল, দুপুর, সাঁঝ নিয়মিত, সুস্থির।
এক একটা মুহূর্ত যেনো এক একটা অধ্যায়।
হতাশা অথৈ তবু, দু’চোখ আলোকময়!
২. আবার এসো হে মুজিব!
যদি আবার একটি যুদ্ধ শুরু হয় –
আঠারো কোটি বাঙালির ঘরে ঘরে
মানবতা, সভ্যতা, সত্তা হননের যুদ্ধ,
অসভ্যতা আর মনুষ্যত্বহীনতায় ছেয়ে যায় দেশ,
যদি অসহায় শান্তিপ্রিয় বাঙালি খুঁজে ফেরে
একজন বলিষ্ঠ সফল সেনানায়ক,
তুমি আবার এসো হে মুজিব!
যদি আবার একটি যুদ্ধ হয় –
ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, আলো-আঁধারির যুদ্ধ,
দিশেহারা প্রতিবাদী বাঙালি পথ ভুলে
ধাবিত হয় নিকষকালো অন্ধকারের পথে,
যদি হতাশার কালমেঘে আবৃত হয় মনের আকাশ,
তাদের সুপথে ফেরাতে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে
তুমি আবার এসো হে মুজিব!
যদি আবার একটি যুদ্ধ হয় –
জুলুম, নিপীড়ন, অনাচার, অবিচার,
সীমাহীন অন্যায় রুখে দাঁড়ানোর যুদ্ধ,
যদি এজলাসেই গুমরে কাঁদে বিচারের নীতিকথা,
আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয় মজলুমের দীর্ঘশ্বাস,
ক্ষোভে অনুতাপে বিস্ফোরিত হয় অশান্তির বুলেট,
শান্তির সুপেয় পেয়ালা হাতে
ইতিহাসের অদ্বিতীয় নেতৃত্ব হয়ে
তুমি আবার এসো হে মুজিব!
যদি আবার একটি যুদ্ধ বাঁধে –
সবুজ সতেজ সুন্দর প্রকৃতিকে আঁকড়ে ধরে
এক মুঠো নির্মল বাতাসে জীবন বাঁচার যুদ্ধ,
যদি বিষাক্ত পরিবেশের ভয়াবহ গ্রাস হতে
নিষ্কৃতি পেতে ডাক পরে
একজন সদাহাস্য সাহসী মানুষের,
তুমি আবার এসো হে মুজিব!
৩. আবার হেসে উঠবে পৃথিবী
দেখো,
একদিন পৃথিবী ঠিক শান্ত হয়ে যাবে,
আকাশের নীলে মিশে হাসবে খেলবে,
আনন্দ উল্লাস করবে আবার এ পৃথিবী।
মন খারাপ করে থাকবে না বেশি দিন।
এ পৃথিবীর মানুষগুলো
আবার মানুষ হয়ে উঠবে,
স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল হবে মনুষ্যত্ববোধ।
জয় হবে মানবতার, মানব সভ্যতার।
থাকবে না কোনো অমানবিকতা,
অনাচার, অনিয়ম, অসভ্যতা।
থাকবে না কোনো
সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির দেয়াল।
সাগর-মহাসাগরে
নাচবে খেলবে উত্তাল নির্মল ঢেউ।
সবুজে সবুজে আবার হেসে উঠবে প্রকৃতি।
চঞ্চল ঝর্ণাধারার ছন্দোময় নৃত্যের তালে
নাচবে সুউচ্চ পাহাড়, গাইবে পাখ-পাখালি।
সুন্দর এ পৃথিবী দেখে আনন্দে খুশিতে
আড়ালে মুচকি হাসবে বিধাতা।
শক্তি পরাশক্তি থাকবে না কোনো দম্ভ।
দেশ মহাদেশ থাকবে না কোনো বিভাজন।
থাকবে শুধু মানুষ, থাকবে মনুষ্যত্ববোধ,
শুধুই একপৃথিবী মানবতা।
৪. হৃৎপিন্ড
তোমার বুকের বামদিকে
ঠিক ঐ জায়গাটায় যখন চিনচিন করে,
কিংবা ধরো কেউ আঘাত হানে সজোরে!
শুনে টালমাটাল আমি, বেসামাল হয়ে যাই!
যদিও জানি, কোনো অসুখ তোমার নাই।
তবুও জ্বলি ধিকে ধিকে!
ওখানটাতেই জলজ্যান্ত আমি,
প্রাণচঞ্চল, হাসি-খেলি দিবসযামী।
নরম মাংসপিন্ডের ঠিক আড়ালে,
মর্মচোখে খুঁজে পাবে কখনো হারালে,
সুরক্ষিত, বুকের পাঁজরে সারাক্ষণ,
লোহিত কণিকাদের অহর্নিশ বিচরণ।
হ্যাঁ, আমিই তো
হৃৎপিন্ড তোমার বুকে।
একবার তাকাও সমুখে,
সুস্থতা বড় দামীই তো!
৫. আশার শুক্রাণু
কষ্টটা আমারি থাক,
আনন্দ ঝর্ণাগুলো তোমার একান্ত হয়ে
ঘুমে আর জাগরণে শিয়রে ছড়াক।
দুঃখগুলো থাকুক আমার,
সুখের পায়রাগুলো ডানা মেলে চারদিক
শান্তি ছড়িয়ে দিক জীবনে তোমার।
যন্ত্রণার সবটুকু আমিই নিলাম,
প্রশান্তির ঢেউগুলো নেচে গেয়ে হেসে খেলে
জীবন ভরিয়ে দিক, আশীষ দিলাম।
ব্যর্থতা, অযোগ্যতা আমারি সাথী,
সফল সার্থক হয়ে ইহলোকে ধন্য হও,
নাইবা হলাম কারো স্বপ্ন-সারথি।
তবু কেন হতাশা অন্তরে ?
নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে আমি বিন্দুও হতাশ নই,
আশার শুক্রাণুগুলো পুষি যত্ন করে।
৬. হে মহান, হে সর্বশক্তিমান
কিছু নেই, কেউ নেই তুমি ছাড়া হে মহান,
হে প্রভু, সারাক্ষণ সবখানে তুমিই সর্বশক্তিমান।
আদি অন্ত সবি তুমি, সবার ঠিকানা,
অন্ধকারে আলো তুমি, তুমিই প্রেরণা।
বিপদের আশা তুমি,
সবার ভরসা তুমি,
রোদ বৃষ্টি আলো ছায়া তোমারি তো দান।
হে মহান।
কাঁদে হিয়া কাঁদে আঁখি, আতঙ্ক অজানা,
সময়ের সিঁড়ি কাঁপে, কাঁপছে সীমানা!
আকাশে জমিনে তুমি,
সাগর ও মরুভূমি
বিরাজিত সবখানে, তুমি শক্তি, তুমি প্রাণ।
হে মহান।
যে বলে- ‘সকল ক্ষমতার উৎস মানুষ’
জ্ঞানপাপী! নরাধম! সে তো স্বার্থান্ধ, বেহুঁস!
সে ও আজ বুঝে গেছে,
কী ক্ষমতা কার আছে!
মহাবিশ্ব চরাচরে তুমি চির মহীয়ান।
হে মহান।
কঠিন দুর্দিনে প্রভু তোমারি দরবারে,
করজোরে ফরিয়াদ, দাও ক্ষমা করে।
অগণিত অপরাধ!
তবুও বাঁচার সাধ।
দয়ার সাগর তুমি, রাহীম রাহমান।
হে মহান।
৭. ‘করোনা’কে ভয় নয়
‘করোনা’কে ভয় করো না
ভয়ভীতি নাও জয় করে।
জন্ম নিলেই মৃত্যু আছে,
লাভ কী তবে ভয় করে?
এই পৃথিবীর মালিক যিনি
আল্লাহ তায়ালা মহান তিনি।
তার ইশারায় সুরুজ হাসে
রাতের আঁধার ক্ষয় করে।
পূর্ণিমা চাঁদ জোছনা ঝরায়
নিকষ-কালো জয় করে।
রোগ-জীবাণু আপদ-বালা
সবই খোদার সৃষ্টি যে!
ন্যায়বিচারক উদার তিনি
সবার উপর দৃষ্টি যে।
মানলে প্রভুর নিয়মনীতি
আর হবে না কারুর ক্ষতি।
যেতেই হবে জগৎ ছেড়ে
প্রেম মমতা জয় করে।
সাহস নিয়ে যাও এগিয়ে,
বীর কি কভু ভয় করে?
Leave a Reply