রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৬:০১ পূর্বাহ্ন

প্রবাস মৃত্যু-মোঃ রোকনুজ্জামান

প্রবাস মৃত্যু-মোঃ রোকনুজ্জামান

প্রবাস মৃত্যু
মোঃ রোকনুজ্জামান

সেদিন গ্রীষ্মের দুপুরে,
দারিদ্র্যের করাঘাত নাড়তে নাড়তে মাকে বলেছিলাম।
একদিন আমাদেরও অনেক টাকা হবে মা।
সেদিন তোমাকে আর এসব,
ছেঁড়া- ময়লা শাড়ি পড়তেই দিব না।
মা ছলো ছলো চোখে মোনাজাত ধরেছিলো।
ছেলে যেন মোর, থাকে দুধে ভাতে।

কোন এক ভাদ্র মাসের শেষে খবর এলো
আমি বিদেশ যাচ্ছি, হ্যাঁ সত্যি যাচ্ছি।
সেদিন চোখ বুঝে বাবাকে দেখেছিলাম।
তার মুখে কি এক সৃষ্টি সুখের হাসি।
সকল যাতনা, অবসাদের প্রশান্তি।

বিদায় বেলায় মা ডুকরে-ডুকরে কেঁদেছিলো।
এ যেন কেবলি, পুত্র বিয়োগের আকুতি।
তাঁর সমস্ত মিনতি জুড়ে একটাই ধ্বনি,
বাবা! তুই কবে ফিরবি বাড়ি?

সকল মায়ার বাধঁন ছিন্ন করে,
প্রবাসে কেটে গেলো আজ দুইটা বছর।
এখন দারিদ্র্যের করাঘাত আমাকে হানা দেয় না।
হানা দেয় না সকাল সন্ধ্যার নিত্য নতুন আধাঁর।
কেবল অশ্রুসিক্ত চোখে আমি অনুভব করি,
শূণ্যতা, হাহাকার, প্রিয়জনদের না পাওয়ার বেদনা।
শত হাহাকারের রণাজারিতে আমি আবৃত।
তবুও এ বুকে পাথর চেপে আমি শপথ নেই,
আমি পারবো, আমাকে পারতেই হবে।
আমার দিকে চেয়ে আছে,
আমার মা, আমার পরিবার, আমার সমাজ, আমার রাষ্ট্র।

এই তো সেদিন,
প্রিয়তমার মন খারাপের দিনে,
কথা দিলাম তাকে।
এবার বসন্তে, আসবো ফিরে দেশে।

মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার,
শুরু হয়ে গেলো প্রচণ্ড মাথা ব্যথা।
বুকের বাম পাশটা ব্যথা করছিলো অসহ্য ধরণের।
আমি কেবল প্রচন্ড দেহ তাপে উত্তপ্ত।

সকাল হতেই ছেয়ে গেলাম অনলাইন জুড়ে।
সহযোদ্ধার মৃত্যুতে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত।
এখন আমি ২৪৪ (টু ফোর ফোর) কফিনে বন্দি।

আমি ভাবতেই পারিনি,
আমার স্বপ্ন-সাধনা, আশা ভরসার সমাপ্তি
এখানেই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
আমি ভাবতেই পারিনি,
স্বপ্নে দেখা হাজারো বাসনা গুলো অপূর্ণই থেকে যাবে।
আমি, আমি ভাবতেই পারিনি,
সাদা কাপনে আমার লাশ পরে থাকবে।

আমি লাল সবুজের পতাকা চাই না।
চাই না, রাষ্ট্রীয় সম্মান।
শুধু প্রবাস বন্ধুদের কাছে নিবেদন জানাই
এই নিথর দেহটা আমার মাকে দিয়ো ভাই।
তাঁর শেষ চুম্বনে যেন একটু শান্তি পাই।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge