সাব্বির রেজার দুটি কবিতা
১. জর্জ ফ্লয়েড
প্রিয় ফ্লয়েড,
তুমি যখন ঈশ্বর ঈশ্বর বলে চিৎকার করছিলে;
ঈশ্বর তখন দু’কানে খিল দিয়ে,
দুই চোখে কালো রঙের ঠুঁলি পড়ে,
নির্বিকার দাঁড়িয়ে ছিলো -সাদা পশুদের কলো রঙের গাড়িটার –
লুকিং গ্লাসের আড়ালে –!
শওভিন নামের সাদা রঙের হিংস্র পশুটা যখন,
রোমশ হাঁটু দিয়ে, তোমার শ্বাসনালীটা খুব জোরে
চেপে ধরেছিলো, নির্মম- নিষ্ঠুর বর্বরতায়!
তখনো তোমার কালো রঙের দু’হাত,
আটকানো ছিলো, দাসত্বের শৃংখল নামের,
ইস্পাতের তৈরি দাসত্বের হাত কড়া -!
যে হাতে তুমি, পরম মমতায় ;
আদর করতে প্রিয় আত্মজা, জিয়ানার তুলতুলে -গাল
প্রিয়তমা রক্সীর -কুন্তল অরণ্যে —
তুমি যখন অসহ্য মৃত্য যন্ত্রণায় ;
হেল্প- হেল্প বলে, গগণ বিদারী আর্তনাদ করছিলে
মা ন ব তা তখন ;
ডেরেক শওভিন নামের হিংস্র জানোয়ারটার-!
চকচকে বুটের তলায় নি:শব্দে চুপচাপ -লুকিয়ে ছিলো!
তোমার কালো ঠোঁটের কার্ণিশ গড়িয়ে গড়িয়ে যখন,
রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছিল–
পিচঢালা কালো রাস্তার বুকের উপর দিয়ে–
বয়ে যা চ্ছি ল -সে রক্তের রঙও ছিলো,
টকটকে লাল বর্ণের —-!
আহা! কী নির্মম নিষ্ঠুরতা –!
নর পশুটা যখন তীব্র জোড়ে শ্বাসনালীটা-চেপে ধরছিলো —
তখনো দয়াবান ঈশ্বর মৌন ভঙিমায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো -!
তোমার শিয়রের খু উ ব কাছা কাছি–!
তোমার মৃত্যুময় আর্তচিৎকারে যখন –
বিদীর্ণ হচ্ছিল দিকবিদিক, তখনো কয়েকজন সাদা রঙের সুবেশ নরপশু -!
কোমড়ে রিভালবার ঝুলিয়ে, পায়েচারি করছিলো
কালো রঙের মাথার খুব কাছাকাছি –!
মৃত্যুর কাছে নিজেকে সর্মপণ করে দেবার ঠিক আগ মুহূর্তে কি?
দু’চোখের ভিতর ভেসে উঠেছিলো
জিয়ানা আর রক্সীর প্রিয় মু খো চ্ছ বি -?
প্রিয় ফ্লয়ড,
তুমি আর কোন দিনই জিয়ানার তুলতুলে হাত ধরে
হাঁটবেনা,
বিকেলের প্রসন্ন আলোর ভিতর –
উইলো গাছের নরম ছায়ায় ছায়ায় -ছা য়া য় –!
হে ঈশ্বর, এ তুমি কেমন ঈশ্বর?
শ্বেত পশুগুলো যখন -ফ্লয়েডের নিথর মৃতদেহ
চ্যংদোালা করে গাড়িতে তুলে -হাসপাতালের নামে —
মর্গে নিয়ে যাচ্ছিলো-
ঠিক তখনই তুমি -পেছন ফিরে নি:শব্দে হেঁটে চলে গেলে –!
ফ্লয়েডের লাশের উলটো দিকে —–!
পৃথিবীর আয়ু দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে —
মানবতার চুল-দাড়ি সাদা হয়ে গেলো ;
তবু এখনো পৃথিবীতে রয়ে গেলো, বর্ণবাদের মতো
অ-মানবিক কুৎসিত প্রথা –!
প্রিয় ফ্লয়েড,
তোমার নির্মম -নিষ্ঠুর মৃত্যু, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো –
এখনো মানুষ নামের মুখোশ পড়া –
মানুষেরা -কতটা জঘণ্য !
নিষ্ঠুর! অ-মা ন বি ক- অ মা নু ষ –?
সভ্যতা তোমাকে ধিক! শত সহস্র ধিক–!
এ কেমন ঈশ্বর তুমি?
ঈশ্বর কি শুধু, সাদাদের? ধনীদের -রাজাদের?
তাহলে -কা লো দে র -ঈ শ্ব র কে –?
২. অদ্ভূত ডানার কালো বিড়াল
একটা অদ্ভূত ডানার কালো বেড়াল
অহর্নিশ পায়ে পায়ে ঘুরছে!
অদৃশ্য বিড়াল ;
সামনে পেছনে -ডাইনে বায়ে ওৎ পেতে আছে –!
কুৎসিত শিকারী বেড়াল ;
বসে আছে সিঁড়ি ঘরে, পাপোশে ভয়ঙ্কর চোখ মেলে
কখন যে মটকাবে ঘাড়!
বুকের ওপর চুপচাপ বসে, রোমশ দু’হাতে
নি:শব্দে বসাবে নির্মম থাবা –!
অনুমতির তোয়াক্কা না করেই ;
ডোরবেল না বাজিয়েই, কখন যে ঢুকে পরবে
আটকুঠুরী- নয় দরোজা ওয়ালা ;
খিল দেওয়া ঘরে –!
কুৎসিত চোখের অদ্ভূত বিড়াল ;
নি:শব্দ পায়ে পায়ে, সারাক্ষণ চারপাশে হাঁটে
ভয়ঙ্কর চোখ মেলে চায় –
বিড়ালকে স্পষ্ট দেখছি -অথচ দেখছিনা –!
কালো বেড়াল অহর্নিশ চোখে চোখে রাখে ;
কড়ানাড়ার শব্দ শুনি, আর্তনাদের শব্দ –!
স্পষ্ট শুনছি, অথচ শুনছিনা —!
কার যেন কুৎসিত অট্টোহাসি, জাগিয়ে রাখে
নির্ঘুম সারারাত –!
একে যে কী নামে ডাকি, আতঙ্ক না মৃত্যু ভয় —?
রোজ সকালে নতুন ভোর অভয় দিয়ে কয় –
কেটে যাবে নৈরাশ্য -পালিয়ে যাবে ভয় —
Leave a Reply