মজনুর রহমান এর ৬টি কবিতা
১. আমি
তোমরা ভাবছ আমি নাই
কিন্তু আমি আছি
পালিয়ে আছি-
লুকিয়ে আছি, যতটুকু থাকা যায় গুটিশুটি মেরে।
কেউ ডাকলে সাড়া দিচ্ছি না
না ডাকলে চিঁচিঁ স্বরে ডাকছি-
ওগো, আমাকে ডাকো, আমার কাছে থাকো
আমার নড়বড়ে শরীর না নাড়িয়ে আমাকে পার হয়ে যাও।
তোমরা ভাবছ আমি কথা বলি না
অথচ আমি চিৎকার করি নিজস্ব মাঠের ভিতরে একা
ওগো, আমাকে বকা দিও না-
এই চিৎকার ভেঙে ভেঙে খোদা তোমাদের কথা বানিয়েছে।
২. পড়া বোঝানোর সন্ধ্যা
পড়া বোঝানোর জন্যে
আরও সন্ধ্যা চাচ্ছি মা,
সকল পড়া ভুলেছি
তাই মানুষ বুঝি না।
মানুষ বড় কঠিন পড়া মা
তারা আমার মুখস্থ হয় না।
৩. পোশাক
কখনও কখনও ভালো পোশাক পরে গুরুত্ব পেতে হয়। যেমন, অফিসের মিটিং, ক্লাস ইত্যাদি।
কখনও কখনও সাধারণ পোশাক পরে গুরুত্ব পেতে হয়। যেমন, বন্ধুদের আড্ডায়, বন্ধুদের সাথে ঘোরা বা খেলা, সাঁতার- এগুলোতে খুব জাঁকালো পোশাকে গেলে গুরুত্ব পাওয়া যাবে না।
আরও খুলে বলা যায়, এমন সময়ও তো আছে যখন গায়ে কোন পোশাক থাকলেই বরং আপনি গুরুত্বহীন হয়ে যাবেন!
পোশাকের গুরুত্ব নেই- বললেই তো হবে না। গুরুত্ব বিভিন্নভাবে আছে। থাকা এবং না থাকা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ সময়বিশেষে।
৪. লোকটা-১
লোকটা বাতাসের গায়ে ঘুসি মেরে দেখে, পৃথিবী উল্টে পড়ে কি না। যদিও উল্টে পড়ে, ফের চিমটি কেটে দেখে পৃথিবীটা মরে গেছে কি না! লোকটা পানিতে কামড় দিয়ে দেখে, বায়ুমণ্ডল উষ্ণ হলো কি না। উষ্ণ হলে থুথু ফেলে দেখে, শীতল হলো কি না। লোকটা মাটিতে হাত রেখে হাঁটতে চেয়ে দেখে, আকাশটা নিচে এলো কি না। যদিও আকাশ নামে, মেঘগুলো ঠিক ওড়ে কি না! আকাশের সাথে তার বহু কথা আছে, এই কথা দিনরাত নদীর কাছে বলে। শেষে নিজেকে চিমটি দিয়ে দেখে, নিজেই সে বেঁচে আছে কি না!
৫. ঋণ
ঋণ বলতে আমি অর্থঋণকেই বোঝাচ্ছি
এর পাশে বৃষ্টির দিকে সিথান করে শোবো এমন ঋণ নাই।
একেকটা সিথানের নিচে জমে আছে দেনার খাতা,
গন্ধ আসছে পুড়ে যাচ্ছে চুলসহ মাথা
দরোজার কড়া নড়ছে
কেঁপে উঠছে দেনাদার হৃৎপিণ্ড-
এসবই আক্ষরিক ঋণের শব্দ ঘোড়ার ক্ষুরের মতো।
এছাড়া বৃষ্টির কাছে আমি কিছু ধার করি নি
যার জন্যে ভিখারির মতো হাত পেতে রইবো জানালার পাশে।
৬. বেকার
ভাইভাফেরত যুবকটি
তাকিয়ে আছে সদ্য সাবেক প্রেমিকার দিকে,
এমনই সদ্য যে
পাতা থেকে বৃষ্টি খসে এখনও মাটিতে পড়ে নি-
হাতের তালুতে লেগে আছে কলমের কালি;
আরও অনেক অনেক ভাইভা তাকে দিতে হবে
অনেক বৃষ্টির নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে,
তবু কোনদিন আর এমন করে তাকানো হবে না
প্রেমিকার দিকে।
Leave a Reply