বুধবার, ০৭ Jun ২০২৩, ১০:২৬ অপরাহ্ন

ভাববার বিষয়-পর্ব-৮ রবিঠাকুরকে ২টি চিঠি-অভীককুমার দে

ভাববার বিষয়-পর্ব-৮ রবিঠাকুরকে ২টি চিঠি-অভীককুমার দে

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাহিত্যাঙ্গনের পরিচিত মুখ কবি ও সমালোচক অভীককুমার দে’র ধারাবাহিক
ভাববার বিষয়-পর্ব-৮
রবিঠাকুরকে ২টি চিঠি
অভীককুমার দে

প্রিয়, ঠাকুর
আপনাকে চিঠি লেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও আর নেই। হয়তো চিঠিটা হাতে পেয়ে খুলেও দেখতে চাইবেন না। যদিও দেখেন, প্রথম লাইনটা দেখে ভালো চোখে দেখবেন না জানি, তবুও নামটা দেখে একবার চোখ বুলিয়ে নেবেন। মনে মনে হয়তো বলবেন, ‘যতবার দেশের কথা লিখিতে বসিয়াছিলাম, ততবারই তাহার কথা স্মরণ করিয়াছিলাম। অথচ সে নাকি আমার সহিত যোগাযোগের ইচ্ছেটাই রাখে নাই !’ কি করি বলুন ? আপনার মত একটা মানুষ, নিজের ভেতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে গলিয়ে সারাজীবন যে জাতের জন্য পরিচয় সৃষ্টি করলেন, যারা বুক ফুলিয়ে অন্য জাতীকে বলতে পারে– ঠাকুর একাই বিশ্ব কাঁপিয়ে একক, শান্তিনিকেতন। আমাদের ঘরের মানুষ। আত্মার আত্মীয়। তারাই আপনাকে ঘরছাড়া করছে ! নাহলে, করছে ঘরবন্দী !
জানেন, আপনার উপস্থিতির অনুভুতি এখন গোপন করার ফন্দি চলছে অথবা লোকদেখানো। কান পাতলেই মনে হয়, কারা যেন করোনাপাত করছে আপনার উপর। দেনাপাওনার হিসেব নিকেশ সেকালের চেয়ে একালে আরো মহামারীর রূপ নিয়েছে। শুনেছি, কিছুদিন আগে নাকি একবার ঘুরে গেছেন। ভঙ্গ বঙ্গ পুরোটাই দেখে গেছেন। আপনার পরবর্তী সময়ের প্রতিনিধিদের কাজকর্ম জরিপ করে গেছেন। এটাও শুনেছি, সব শেষে নাকি অভীকের বাড়িও ঘুরে গেছেন।যা কিছু চোখে পড়ার কথা, এতে মোটেও ভালো ভাবনা নিয়ে যাবার কথা নয়। সেদিন ভোররাতে আপনি চলে যাবার পর মনে হলো, কদিন বাদেই আপনার জন্মের একশ ষাট। যদিও এটা ঠিক নয়। সবাই যত্রতত্র বলে বেড়াচ্ছে, ‘ঠাকুরের একশত ষাট তম জন্মদিন’। ঠাকুরের আবার একশ ষাট কি ? রবি আর প্রেম তো চিরন্তন। ব্রহ্মান্ডের বুকের ভেতর সেই যে একবার মনের মত উদয় হয়েছে, তার কি প্রকৃত অস্ত আছে ? প্রেমও তো তাই ! ওরা ভুলে যায় কী করে ? কিরকম জাত এরা !
সব শেষে একথাই বলবো, এই চিঠিটাই আপনাকে আমার প্রথম ও শেষ চিঠি। দেশের ভেতর খবর জানাবার জন্যই লিখতে হলো বাধ্য হয়ে। আপনাকে এ সময়ের কথা জানাতে না পারলে আমিও শান্তি পাচ্ছিলাম না। এতকিছু বলে ফেললাম, কিছু মনে করবেন না ঠাকুর।
ও হ্যাঁ, একটা কথা তো বলাই হয়নি। আমার বাবা আপনার লেখা ‘দেনাপাওনা’ গল্পটি ভীষণ ভালোবাসতেন আর মা ‘ঘাটের কথা’। বড় হয়ে শুনতে পেয়েছি, বাবা নিরুপমা আর মা কুসুম রাখতে চেয়েছিলেন আমার নাম। মা কুসুম বলে ডাকলেও স্কুল রেজিস্টারে নিরুপাই রেখেছিলেন বাবা। কষ্ট করে যদি চোখ বুলিয়ে নিয়েছেন,তবে আমি ধন্য। প্রণাম জানবেন।
ইতি-
নিরুপমা।


প্রিয়, রবিদা
জানো, আজ হোসেন ভাই এক অদ্ভুত কথা বলেছেন–
‘দেনাপাওনা’ আর ‘ঘাটের কথা’ সব নিয়েই তুমি রবি ঠাকুরের ‘ফেরীওয়ালা’-
কবির চিঠি এক নিরুপমা…
আচ্ছা তুমিই বলো–
তোমার ফেরিওয়ালা হতে পারলে আর কিছু কি চাওয়ার আছে ?
তোমার ‘ঘাটের কথা’ শুনে শুনেই ভুলে যেতাম যতসব ‘দেনাপাওনা’।
তুমি তো জানো না–
আজকাল এখানে ‘চোরাই ধন’ ‘শেষ কথা’।
‘একটি ক্ষুদ্র পুরাতন গল্প’ আবার ‘সমাপ্তি’ থেকে ‘মধ্যবর্তিনী’,
‘রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা’ বলে চালিয়ে দিতে পারলেই
‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ এবং
‘ত্যাগ’ ‘মুক্তির উপায়’ এসব ‘এক আষাঢ়ে গল্প’…
‘রাসমণির ছেলে’ ঠিক জানে, ‘হৈমন্তী’ এ দেশে ‘বৈষ্টমী’ নয়,
‘মাল্যদান’ ‘শুভদৃষ্টি’ এসব বাদ দিয়েই
‘গুপ্তধন’ ‘পয়লা নম্বর’, ‘পুত্রযজ্ঞ’…
‘রীতিমত নভেল’, তারপর–
‘সংস্কার’ ‘করুণা’ এসব ‘পণরক্ষা’ মাত্র,
‘স্ত্রীর পত্র’ ‘নিশীথে’ অন্য এক ‘ল্যাবরেটরি’; অথচ
‘বিচারক’ বলছেন, ‘অসম্ভব কথা’!
‘দিদি’ দেখছেন–
‘অতিথি’ সবাই, নিজের ‘দৃষ্টিদান’ করে ‘মুক্তির উপায়’ খোঁজে, আর
দিল্লির তিনি ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করেও ‘ফেল’ !
‘মেঘ ও রৌদ্র’ মেখে এই যে ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ মানুষ,
এই যে ‘সদর ও অন্দর’ থেকে ‘ডিটেকটিভ’ ‘আপদ’
‘অনধিকার প্রবেশ’ বলে প্রতিহিংসার ‘মুসলমানীর গল্প’…
এই বুঝি ‘মুকুট’ ? এটাই কি ‘শেষ পুরস্কার’ ?
এ সময়ের ‘রাজপথের কথা’ তুমি তো জানো না,
‘স্বর্ণমৃগ’ খুঁজে ‘জীবিত ও মৃত’ মিছিলে ‘মহামায়া’,
‘সমস্যাপূরণ’ না হলেও ‘উলুখড়ের বিপদ’,
নাগরিকের ‘খাতা’ ‘কাবুলিওয়ালা’র মতই ‘সম্পত্তি- সমর্পণ’,
এসব কোনো ‘তারাপ্রসন্নের কীর্তি’নয়;
‘কঙ্কাল’ মানুষ হাঁটছে বছরের পর বছর,
‘রাজটিকা’ লাগিয়ে মা ‘অপরিচিতা’, ‘ভিখারিণী’!
‘জয়পরাজয়’ কার ?
এ কেমন ‘কর্মফল’ ! এ কেমন ‘নষ্টনীড়’?
ইতি-
আমার বাসুদেব

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge