ত্রিপুরা ভ্রমণ পর্ব-৬
সুশান্ত নন্দী
মহামুনি প্যাগোডা:
দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার আরও একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র হল মহামুনি প্যাগোডা। আগরতলা থেকে যার দূরত্ব ১৩৪ কিলোমিটার এবং উদয়পুর থেকে দূরত্ব ৮২ কিলোমিটার । মহামুনি প্যাগোডার অবস্থান যেখানে সেটি মনু বনকুল নামে একটি স্থানে। স্বর্নাভ প্যাগোডাটি শুধু যে সুদৃশ্য তাই নয়, সারা বছরই দেশ বিদেশের প্রচুর বৌদ্ধ পুণ্যার্থীও আসেন এই বৌদ্ধতীর্থ ক্ষেত্রে।
নীর মহল: নীর অর্থাৎ জল।আর সেই জলে যে মহল তাই-ই নীরমহল। এক বিশাল প্রাকৃতিক লেকের মধ্যে তৈরি এই নীরমহল। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে যার দূরত্ব ৫৩ কি. মি.। সিপাহীজলা জেলার মেলাঘরের রুদ্রসাগর লেকের মধ্যে অবস্থিত এই নীরমহল; রক সুরম্য প্রাসাদ। ৫ বর্গ কিলোমিটারের বেশি জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই রুদ্রসাগর । ত্রিপুরার শেষ রাজা বীর বিক্রম মাণিক্য বাহাদুর ১৯৩৮ সালে এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন।
১৯২১ সালে রাজা মাণিক্য বাহাদুরের মনে রুদ্রসাগরের মধ্যে একটি সুরম্য প্রাসাদ নির্মাণের ভাবনা আসে। কলকাতার একটি নির্মাণ সংস্থাকে এই প্রাসাদ নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নির্মাণ সংস্থার কর্মীরা আট বছরের চেষ্টায় হিন্দু ও মুসলিম নির্মাণ শৈলীর সংমিশ্রণে প্রাসাদটি নির্মাণ করেন।
রাজা পরিবার সহ গ্রীষ্মকালে প্রমোদ ভ্রমণের ক্ষেত্র হিসেবে এই প্রাসাদটিকে ব্যবহার করতেন। গ্রীষ্মের রোদে তীব্র দাবদাহে রাজা রাজমহলের সকলকে নিয়ে পাড়ি দিতেন নীরমহলে। রুদ্রসাগর লেকের শীতল হাওয়া স্বস্তি দিতো রাজা, রানীসহ রাজপরিবারের সকল সদস্যদের। এখনো গ্রীষ্মকালে নীরমহলে গেলে প্রচণ্ড গরমেও শীতল হাওয়ার ছোঁয়া লাগে শরীরে।
এই প্রাসাদ মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত, অন্দর মহল ও বাহির মহল। অন্দর মহল রাজ পরিবারের লোকজনদের জন্য এবং বাহির মহলে ছিলো দরবার কক্ষ, নাচঘরসহ খোলা মঞ্চ, সৈন্যদের পাহারা দেওয়ার গম্বুজ, তাদের থাকার জায়গা ইত্যাদি। সব মিলিয়ে এখানে মোট ২৪টি কক্ষ রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ফুলের বাগান।
জলের মধ্যে এমন মহল ত্রিপুরারই শুধু নয় সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে একমাত্র এবং সমগ্র ভারতের মধ্যে দ্বিতীয় মহল। এমন আরো একটি জল মহল রয়েছে রাজস্থানে।
রাজ পরিবারের লোকজন রাজঘাটে এসে নৌকায় চড়ে প্রাসাদে পৌঁছাতেন। এখনো পর্যটকদের নৌকায় চড়ে নীরমহল দেখতে যেতে হয়। জল ভর্তি লেকের মধ্য দিয়ে নীরমহলে যাওয়া এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। ভারতের স্বাধীনতার পর নীরমহল প্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব চলে যায় ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের হাতে। সেই থেকে এখনো নীরমহলের দায়িত্ব রয়েছে ত্রিপুরা সরকারের পর্যটন দফতরের হাতে। এখনো পর্যটকরা নৌকায় চড়ে নীরমহল দেখতে যান। এই জলযানে জলযাত্রা যেন এক অন্য অনুভূতি এনে দেয়।
Leave a Reply