আমার এলোমেলো ভাবনারা
অনামিকা ফেরদৌস
আমার ইনসমোনীয়া আছে মানে অনিদ্রা রোগ আছে।মাঝেই মাঝেই সারারাত ঘুম হয় না।তাই সবরকম ব্যবস্হা থাকে ।বেড সাইড টেবিলে পানির বোতল, ফ্লাক্সে চা।বিস্কুটের কৌটো সব মজুত । জেগে থাকলে এসব প্রয়োজন হতে পারে তাইই এই ব্যবস্হা।
তবে এইগুলোর থেকে আমার শয্যার চারপাশে থাকে বই কমপক্ষে পাঁচজন লেখকের বই। যেন ইচ্ছেমতো পড়া যায়।
আজ পড়ছিলাম মৈত্রেয়ী দেবীর লেখা ” মংপুতে রবীন্দ্রনাথ “।
পড়তে পড়তে কখন রাত কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না।
সকালে চোখ জ্বালা নিয়ে উঠলাম। বৃষ্টি পড়ছে অঝোরে। চা নিয়ে বসলাম বাগানের ধারে। যেখানে বৃষ্টি আমার উপরে পড়বে না। যদিও বৃষ্টি দেখলেই ভিজতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এত সকালে নয়।
গান বাজছে রেকর্ডে মৃদু শব্দে। ” এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়।” সত্যিই প্রিয় রবি ঠাকুর বর্ষার এত গান এত কবিতা লিখেছেন তার তুলনা মেলা ভার । মনের কথাগুলো বলে দিয়ে গেছেন।
আমার সবুজ নির্বাক বন্ধুদের দিকে তাকালাম। বৃষ্টি পড়ছে তাদের উপরে, যেন খুশীতে মশগুল।
পপি আর ঘাসফুলেদের দেখে প্রান ভরে গেল ।অলকানন্দাও খুশীতে মাতোয়ারা ।রজনীগন্ধাও তাই। কিন্তু হাসনাহেনা আর সন্ধ্যাভালতী চোখ বন্ধ করে ফেলেছে, এখন ঘুমোচ্ছে রাতে জাগবে বলে।
কিন্তু গোলাপেরা বৃষ্টিতে প্রায় ঝরে গেছে পাপড়ি আর কুঁড়ি ফুটি ফুটি করছে। যেন তারা লজ্জিত। নার্গিসের অবস্হাও তাই।যেন বলছে আমরা আসছি বন্ধু খুব শীঘ্রই।কিছু মনে কর না।
বেশ লাগছে ।রাতজাগার ক্লান্তি যেন দুর হয়ে গেল।
চারিদিকে যখন এক অসহনীয় অবস্হা।প্রতিদিন যখন কোনো ভালো খবরই নেই।তখন এই নির্বাক বন্ধুরাই আমার প্রানে ভালোবাসার পরশ দেয়। আজ আবার বৃষ্টিও আছে । তাইই… “
মনোমোর মেঘের সংগী ” ….। আবারও রবি ঠাকুর । দুরের বন্ধু এভাবেই দিনের শুরু । বরষার সকাল বেলায়
বৃষ্টি পড়ে অঝোর ধারায় _
মনে পড়ে ছেলেবেলা _
বন্ধুদের সাথে আম কুড়োনো আর খেলা ।
এনে দিতে পারো কেউ সেই দিনগুলি
আমিও তবে দিতে পারি একগুচ্ছ রজনীগন্ধা আর বেলী ।।
শৈশবের সেই সুখসৃতি _ মন কেমন করা সব গল্প আর গীতি
আসবে না আর কখনো ফিরে _
তবুও সেই দিনগুলিই থাক
আমায় ঘিরে।
সকলকে শ্রদ্ধা।
Leave a Reply