পাকিস্তান ভ্রমণ -৩
মাহাতাব লিটন
কাহারো অসুবিধা না করিয়া বায়ু যানের পিছনের দিকে হাঁটিতে লাগিলাম। ইহাই ছিল শূন্যে হাঁটিবার অভিজ্ঞতা নতুন বটে না হোক ইহা মহাশূন্য।
মুহূর্তেই শূন্যে হাঁটিবার আনন্দে ছেদ পড়িল। কারণ আমাদের স্বদেশী ভ্রাতাগণ হট্টগোল বাঁধাইয়া পাকি বিমান সেবিকাদের দৃষ্টি আর্কষণ করিতে পারিয়াছেন। তাহারাতো শ্রমজীবি মানুষ তাহারাতো কথা বলিবেই। যাহা প্রয়োজন তাহা সরাসরি চাইবেই। নির্ঘাত কিছু একটা ঝামেলা হইয়াছে। কথোপকথনে তাহারা ইংরেজিতে বলিতেছে আমাদের বাঙ্গালী ভ্রাতাগণ বাংলিশ বলিতেছিল। আরও দুই একজন আসিয়া সংযুক্ত হইয়া সমস্যার সমাধান করিলেন। সুনির্দিষ্ট কি কারণে সমস্যা তাহা আমিও বুঝি নাই।
আমার সমস্যা অন্যখানে কি করিবো বটে ছোট ঘরটি ভিতর হইতে বন্ধ, বন্ধ পাশেরটিও। থাউক তবে ক্ষুদ্র কর্মটি নয় জিন্নায় সারিব। উড়ালপথ তো বেশি দূরের নয়। ১৪০০ মাইল মানে দাঁড়াইল মাত্র ২৩০০ কিঃমিঃ। আচমকা একদম সপাং করিয়া স্বদেশী ভ্রাতা বন্ধ দরজা খুলিলেন। হঠাৎ সম্মুখে আমাকে দেখিয়া তিনি বিরক্ত হইলেন কিনা বুঝিতে পারিলাম না। তবে আমি চরম বিরক্তি প্রকাশ করিলাম। বায়ুযানে আনলোড হইবার অটোওয়াশ রুমটি দেখিয়া
হতাশ হইলাম বৈকি দরজা হইতে ফিরত আসিয়া নিজ আসনে বসিলাম। পাঠক কারণ অনুমান যোগ্য। সে কথা থাক আবারও জানালা হইতে নিচের বস্তু গুলি দেখিবার বৃথা চেষ্টা মাত্র। মাঝে মাঝে আঁকাবাঁকা নদীর দেখা মিলিল। কোথাও বা দুই একটি টিনের ঘরের ছাদে রৌদ্রের ঝলকানি দিচ্ছিল। রুক্ষ প্রকৃতির আভাস মিলিল যতই সিন্ধি প্রদেশের কাছাকাছি আসিলাম।
পাকি বায়ু যানটি করাচিতে আমাদের নামাইয়া দিয়া দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে উড়াল দিবে। উড়ালপথে মাঝে মাঝে বড্ড ঝাঁকুনি দিয়া উঠিলেই আমার ভয়বিবি কাঁধে চাপিয়া বসিত। মনে হইতো সিটি করপোরেশনের ভাঙ্গা রাস্তায় রিক্সা যোগে শহর পরিভ্রমণ করিতেছি। অবশেষে
বৈকাল চার ঘটিকার সময় আমাদের বায়ুযানটি মরুর বুকে জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করিল। আবারও নামিবার পূর্বে বৈমানিক ঘোষণা দিল, ক্রুগণ চেক করিল নিশ্চিত করিল কোমর বন্ধনী যেন ঠিকঠাক থাকে। তাহারা উর্দু ও ইংরেজিতে বলিতেছিল।
হুমমম আমি কিন্তু ইংরেজি খুউব না বুঝিলেও উর্দু একটু আধটু পারি। ইহা অবশ্য থিয়েটার করিবার ফলাফল। দুই একটি সংলাপ মুখস্থ করিয়া ছিলাম। তবে কথা বলিবার কালে হিন্দি ও উর্দু গুলাই ফেলি।
কর্ণে তালা লাগাইয়া আবরো বায়ুুযানটি করাচীর মাটি স্পর্শ করিল।
বিশাল ✈ বন্দর। গগুল চাচার মাধ্যমে ইতিহাসটি পাঠ করিলাম যাহা নিম্নরূপঃ
“বিমান বন্দরটির আগে করাচি বিমানবন্দর হিসাবে পরিচিত ছিল। কিন্তু পাকিস্তান স্বাধীন হবার পর বিমানবন্দরটির নাম পাকিস্তানের জাতীর পিতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ-এর নামে উৎসর্গ করা হয়। বর্তমানে বিমান বন্দরটির নাম হল- জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর”
” স্বাধিনতার আগে করাচি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে প্রধানত বিমান পরিচালনায় যুক্ত ছিল টাটা এয়ার লাইন্স। এই সময় মুম্বাই (বোম্বে) থেকে বিমান চলাচল করত করাচি বিমানবন্দরে। এই বিমান চলাচল করত আহমেদাবাদ বিমানবন্দর হয়ে। এছাড়া বিমান বন্দরটি যুদ্ধের জন্য বায়ু সেনার ঘাটি হিসাবে ব্যবহৃত হত। ১৯৪০ সালে করাচি বিমানবন্দরে ব্রিটিশ সরকার হ্যাঙ্গার নির্মাণ করে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় এই বিমান বন্দরটি আমেরিমার বায়ু সেনার বিমান ঘাঁটি হিসাবে যুক্ত ছিল। এই বিমান বন্দর থেকে যুদ্ধ বিমানে করে সেনা ও মালপত্র নিয়ে যাওয়া হত বার্মা, থাইল্যান্ড ও চীনের যুদ্ধক্ষেত্রে। এর পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হয় ব্রিটিশ শাসন থেকে। এর পর করাচি হয় প্রধান শহর, বাণিজ্য কেন্দ্র ও প্রধান বিমান বন্দর।”
বলিয়া রাখা ভালো আমরা কিন্তু ২ ঘন্টা অর্জন করিলাম। ভালইতো ভারতে গেলে একঘন্টা আর পাকিস্তানে গেলে দুই ঘন্টা জয়। তার মানে মাঝের দুই ঘন্টা গেল কোথায়? বুঝিলাম না
বাঙালী বলিয়া ক্ষুধা লাগিল নাকি ভয়যাত্রা যখন জয়যাত্রায় রুপান্তরিত হইল তাহার কারণেই ক্ষুধা লাগিল।
বটবৃক্ষ মাহমুদা আপা আমার মুখখানি দেখিয়া অনুধাবন করিলেন আমার পাকস্থলী খাই খাই করিতেছে। তাই তিনি প্রথমেই আমেরিকান মুদ্রা পাকি রূপিতে রূপান্তরিত করিলেন। তারপর ম্যাকডোনাল্ড হইতে পপকর্ণ ও পেপসির ঠান্ডা পানীয় ক্রয় করিয়া বৈকালিক জলযোগ হইল। বিশাল আধুনিক অট্টালিকায় বসিয়া বসিয়া অপেক্ষা করিলাম। সন্ধ্যাকালীন কানেক্টিং আভ্যন্তরীণ বায়ুযানে করাচি থেকে ইসলামাবাদ। তাহার মানে হইল এখনও ৫০০ কিলোমিটার ৪৫ মিনিটের যাত্রা বাকি।
Leave a Reply