রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন

স্মৃতিময় ভ্রমণ ২ ভ্রমণ দেশে-বিদেশে ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ

স্মৃতিময় ভ্রমণ ২ ভ্রমণ দেশে-বিদেশে ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ

স্মৃতিময় ভ্রমণ ২
ভ্রমণ দেশে-বিদেশে
ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ

ফ্লাইট মিস ও একটি কৃতজ্ঞতা
সে অনেককাল আগের কথা। আরবের লোকেরা তখন গুহায় বাস করতো। তো প্রায় ঐ সময়েই(?) আমারো সাধ হয়েছিল পি এইচ ডি করার। স্কলারশিপ পেয়েছিলাম কোরিয়ার কিয়ংপুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (KNU) তত্ত্বিয় রসায়নে গবেষণা করার। স্কলারশিপ পাওয়ার কৃতিত্ব যতটা না আমার, তার চেয়ে বেশি আমার ভার্সিটির জুনিওর কেমিস্ট্রির মানিকের। সে আমাকে সর্বোতোভাবে সহায়তা না করলে ওটা সম্ভবপর ছিলনা বলেই আমার বিশ্বাস। ল্যাবে সে ছিল আমার সিনিয়র। সুখে দুঃখে কত সময় যে কাটিয়েছি একসাথে। রসায়নে পি এইচ ডির পাশাপাশি সেসময়ে অনলাইনে বাংলা নাটক দেখায়ও সমপর্যায়ের ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছি বললেও অত্যুক্তি হবেনা। মনে পড়ছে ‘রমিজের আয়না’ সিরিজের কথা আর ‘Prison Break’ এর কথা। কি দারুন উত্তেজনা নিয়ে পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় থাকতাম! সারাদিন রিসার্চের পর ওটাই ছিল তখন সেরা বিনোদন।
যাহোক, যার জন্য লেখা, সেই ভ্রমনের প্রসংগেই আসছি। গন্তব্য দক্ষিন কোরিয়া। শুধুমাত্র তিনজন একসাথে ভ্রমন করতে পারবো বলেই আমি প্রায় দশ হাজার টাকা গচ্চা দিয়ে একই ফ্লাইটে টিকেট কনফার্ম করলাম। সেটা ২০০৬ সালের কথা। আমি, সাজ্জাদ (বর্তমানে জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর), মানিক ( বর্তমানে আয়ারল্যান্ডে সেটেল্ড) থাই এয়ারলাইন্স যোগে ঢাকা থেকে ব্যাংককের উদ্দেশ্য রওনা হলাম। ডোমেস্টিক এর অভিজ্ঞতা থাকলেও এবারই প্রথম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সে ভ্রমন। আমি আর সাজ্জাদ পাশাপাশি সিটে। আসলে অভিজ্ঞতার দাম অনেক। প্লেনে আমি কিছু খেতেই পারছিলাম না আর সাজ্জাদ কি মজা করেই না থাই সব খাবার খেয়ে নিল এবং সুন্দর করে ট্রেটিও গুছিয়ে ফেরত দিল। ছোট্ট একটা ট্রের মধ্যে খাবার কোনরুপ না ফেলে খাওয়া আর মোটামুটি একটা মানসম্মতভাবে গুছিয়ে ট্রে ফেরত দেয়া আমার মত অনেক প্লেনযাত্রীর জন্যই চ্যালেঞ্জ বটে। এর পরে যতবার প্লেনে ভ্রমন করেছি ততবার দ্বিগুন মজা নিয়ে প্লেনের খাবার খেয়েছি আর সাজ্জাদকে স্মরণ করেছি। সত্যি বলতে প্লেনের খাবার আমার নেশার মত, অনেকেই দেখি প্লেনে খেতেই পারেনা, তাদেরকে হতভাগা ছাড়া আর কিইবা বা বলতে পারি?
ঢাকা টু ব্যাংকক তো ভালোই কাটলো। বিপত্তিটা বাধলো কানেক্টিং ফ্লাইটে। ব্যাংককে আমাদের ট্রানজিট ছিল প্রায় ৬ ঘন্টা ( ৮ ঘন্টাও হতে পারে ঠিক মনে নেই)। এই দীর্ঘ সময় কিভাবে কাটানো যায় তার পরিকল্পনা করা হলো। যদিও এই এয়ারপোর্ট এত বিশাল! এত সুন্দর! সব কিছু ঘুরে দেখতে একদিন লেগে যাবে। আমরা গল্প করছিলাম, আর বোর্ডিং এর খবর রাখছিলাম। প্রায় ২ ঘন্টা আগে বোর্ডিং দেখাচ্ছিল, গেট নম্বরও স্মরণে রেখেছিলাম। আমার চিন্তা ছিল না, সাথের দুজন ছিল এক্সপার্ট। সময়কে পাত্তা না দিয়ে আমরা আরো গল্প করতে থাকলাম। খুব বেশি পরে যে বোর্ডিং নিতে গেছি তা বলবোনা, একটু পরেই। কিন্তু এরই মধ্যে এত ভীড় লেগে গেছে, এত লম্বা লাইন, আর একেকটা গেট এত দূরে দূরে, আমরা দৌড়ে দৌড়ে ফ্লাট এস্ক্যালেটর ব্যাবহার করেও যথাসময়ে ফ্লাইট মিস করলাম।
(মন্তব্যঃ অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আর বোর্ডিং সময়কে কোনভাবেই হেলাফেলা নয়)।
এখন উপায়? উপায় নিশ্চয় আছে। বাংগালিরা কোনভাবে উপায় বের করেই ফেলে, ভাগ্যও সহায় হয়ে যায়। ঢাকা থেকে ব্যাংকক মাত্র সোয়া দু ঘন্টার পথ। কোরিয়ায় যাওয়ার বেশি পথটাইতো বাকি? ভাড়াও নিশ্চয় বেশি এবং সেটা নেহাত কম না হবারই কথা। বর্তমানে দেশে আয়ের তুলনায় বিমান ভাড়া বেশি না হলেও তখন কিন্তু ভাড়াটা সাধারনের নাগালের বাইরেই ছিল। প্রতিবিছর যে হারে আমরা বিদেশ ভ্রমন করি! ঘোরাঘুরির তালিকাটা দেখলেই বুঝা যায়। ডোমেস্টিক ফ্লাইটতো মুড়িমুড়কির মত চলে। যা বলছিলাম, এখন আমরা কোরিয়া যাবো কি করে? থাই এয়ারলাইন্সের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলো। কোন উপায় নেই। নতুন করে টিকেট কাটতে হবে। অনেক টাকা। সময়েরও বিষয় আছে। এয়ারপোর্টে থাকা মানেই অনেক খরচ। ভুলতো আর তাদের নয় যে আমাদের সব দায় দায়িত্ব তারা নিয়ে নেবে? আমরা বারবার তাদের অনুরোধ করতে থাকলাম। কোন একটা উপায় বের করতে বললাম। এবার ভাগ্য সহায় হলো, একটু পরেই আরেকটি ফ্লাইট যাবে কোরিয়াতে। চেক করে দেখে বলল, মাত্র তিনটি সিটই ফাঁকা আছে। আমরা সেটাতে যেতে পারি। টাকা? না কোন টাকা লাগবেনা। একটি টাকাও আমাদের দিতে হবেনা। এয়ারলাইন্সের সেবায় আমরা মুগ্ধ হলাম। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে ভ্রমন আমার শখ। তারপরও এই শখ অগ্রাহ্য করে কেন যেন থাইতেই বেশিরভাগ আসা যাওয়া করেছি। এটা কি কৃতজ্ঞতা?
লেখক: আঞ্চলিক পরিচালক ( দায়িত্বপ্রাপ্ত), উপ আঞ্চলিক পরিচালক, বাংলাদেশ বেতার, রংপুর

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge