রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন

সার্টিফিকেট নয় প্রকৃত শিক্ষায় পারে মানুষ গড়তে-আরজেনা শিরীন

সার্টিফিকেট নয় প্রকৃত শিক্ষায় পারে মানুষ গড়তে-আরজেনা শিরীন

সার্টিফিকেট নয় প্রকৃত শিক্ষায় পারে মানুষ গড়তে।
আরজেনা শিরীন

সাধারণত প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের মাপকাঠি নির্ণীত হয় একাডেমিক শিক্ষা শেষ করে যে মূল্যবোধের স্তরে উপনীত হয় তার উপর ভিত্তি করে।শিক্ষা গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হলো শুধু সার্টিফিকেট অর্জন নয় ব্যক্তির আচরণিক পরিবর্তন ও চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধন।প্রকৃত শিক্ষার নির্যাসটুকু যে অর্জন করতে পারবে সেই হবে প্রকৃত মানুষ।একাডেমিক কেন্দ্রিক শিক্ষায় প্রত্যেকেই সার্টিফিকেট অর্জন করে থাকে।আমি মনে করি সার্টিফিকেট হলো এক প্রকার তাত্ত্বিক জ্ঞান আর প্রকৃত শিক্ষা হলো তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান যা উপলব্ধির মাধ্যমে ব্যক্তি তার অন্তর্জগতকে সাজাতে পারে।চোখ পড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নামমাত্র সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তি পরিবার,সমাজ এমনকি রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে দ্বিধাবোধ করেনা কারণ তারা প্রকৃত শিক্ষা লাভ করতে পারেনি হয়ত পরিবার থেকে গ্রহণ করতে পারেনি সঠিক শিক্ষা।এধরণের লোকে দিনদিন নিজের বিবেককে পিষ্ট করে হতে থাকে কলুষিত ও নেতিবাচক প্রভাবে প্রভাবিত। এরা খুন, গুম,ধর্ষণ, লুট করতেও ছাড়েনা।পরিবারই হলো সর্বপ্রথম জ্ঞানার্জন ও প্রকৃত শিক্ষার প্রথম স্তর।জর্জ লুইস বলেছিলেন-আমার প্রধান সৌভাগ্য এই যে,আমি শিক্ষিত হয়েছি আমার পিতার গ্রন্থাগারে।শুধু মুখস্থ বিদ্যার মাধ্যমে সার্টিফিকেট অর্জন করলে প্রকৃত মানুষ হওয়া যাবেনা বরং জীবনে যে কোনো বিষয় আত্মস্থ করার জন্য গভীর থেকে গভীরতম অভ্যন্তরে প্রবেশের মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষায় যে জ্ঞান লাভ করতে পারবে তাই হবে প্রকৃত শিক্ষা। যা হলো প্রকৃত মানুষ হওয়ার সহায়ক।যা ব্যক্তির চরিত্রের বিভিন্ন দিকের জ্ঞান অর্জনে সক্ষম হবে। তারা পারবে যেমন রুদ্ধ দুয়ার উম্মুক্ত করতে পারবে তেমন দুর্গম পথকে সুগম করতে।জাতীয় উন্নয়নে পারবে অবদান রাখতে, হয়ে উঠতে পারে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক।
আজকাল যতই দিন যাচ্ছে অভিভাবকরা সন্তানদের ভালো একটা সার্টিফিকেটের জন্য রোবট বানিয়ে ফেলতেছে কখনও আবার এর জন্য মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে যা মোটেও কাম্য নয়।৭ বছর আগে টিভির সংবাদে দেখেছিলাম জিপিএ ৫ পাওয়া কয়েকজন ছাত্রকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তোমরা তো ভালো রেজাল্ট করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে বলতো জিপিএ এর পূর্ণরূপ কি?তারা কেউই পারেনি সঠিক উত্তর দিতে।তাহলে আমরা সত্যিই কি সার্টিফিকেটের পিছনে ছুটছি। এমনটা আশা করা কখনওই ঠিক নয়।দেশে বাড়ছে নামমাত্র শিক্ষার হার কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার গুণগত মান বাড়ছে কতটুকু।পুঁথিগত বিদ্যাকে সমাজব্যবস্থা বাহবা দিচ্ছে তাদের ধারণা সার্টিফিকেট পাশ যেন মেধার মূল্যায়ন আসলে কতটুকু যুক্তিযুক্ত। এরা পারেনা প্রকৃত মনুষ্যত্ববান মানুষ হতে, পারেনা আত্মশক্তি অর্জন করতে।
কান্ট এর মতে- আদর্শ মনুষ্যত্ব অর্জনই হলো শিক্ষা।আর প্রকৃত শিক্ষায় পারে দৈহিক,মানসিক,সামাজিক,আবেগিক,আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক জীবনের বিকাশ সাধন করতে। বিভিন্ন অভিজ্ঞা র আলোকে পুনর্গঠন, পুনসৃজন বাস্তব সমস্যার সমাধান করতে।সেজন্য থাকতে হবে দৃঢ় মনোবল,আত্মোপলদ্ধি,উৎকর্ষ সাধন যা মানুষের মতে মানুষ গড়তে সাহায্য করে।জ্ঞান অর্জনের শ্রেষ্ঠ ভান্ডার হচ্ছে বই।ভালো বই, ভালো গ্রন্থাকার পারে মনুষ্যত্ব লাভে ভালো মানুষ গড়তে যা সার্টিফিকেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।এর মাধ্যমে হয়ত অনেকে বিভিন্ন অফিসের বস হবে ভালো চাকুরী পাবে কিন্তু বস হলে আর ভালো জব হলে যে ভালো মানুষ হতে পারে এমনটা প্রত্যাশিত করা ভুল হবে।অনেক বসের যা ব্যবহার যা বলার মতো নয়।এধরণের মনমানসিকতার ব্যক্তির কারণে অফিসে, পরিবারে অশান্তি আসে।তারা পারেনা পিতামাতাকে সম্মান শ্রদ্ধা করতে, পারেনা তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে। অনেক বাবা মাকে আশ্রয় নিতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে।তারা শুধু সংকীর্ণ ও স্বার্থপরতায় নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পছন্দ করে।কারণ তারা সার্টিফিকেট শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেনি।
বলতে হয়-“স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা যেমন কঠিন,
সার্টিফিকেট অর্জনের চেয়ে প্রকৃত শিক্ষায় মানুষ হওয়া আরো বেশি কঠিন।”
প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিই তার জীবন দক্ষতাকে বিভিন্নসময়ে তার আচার- আচরণ, চিন্তন ক্ষেত্র, দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে পারে সমস্ত মানসিক প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু সংগঠন,অতীত জ্ঞানকে বর্তমান সমস্যার সমাধানে প্রয়োগ করতে। অর্থাৎ সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবন যাপনে আবেগিক চেতনাও লাভ করে আরো বেশি কনফিডেন্ট হয়ে উঠতে পারে।তাই বলা যায় শুধু সার্টিফিকেট নয় প্রকৃত শিক্ষায় পারে মানুষকে সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge