ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাহিত্যাঙ্গনের পরিচিত মুখ কবি ও সমালোচক অভীককুমার দে’র ধারাবাহিক
ভাববার বিষয়-পর্ব-৭
মনোকক্ষের জানালায়
অভীককুমার দে
সংসার সমুদ্র। কতগুলো জীবন জাহাজের মতো, ভেসে। কখনো স্থির, কখনো অস্থির। রঙ ছড়িয়ে জেগে থাকা সমুদ্র জানে, ঢেউয়ের উপর ঢেউ উঠে এলে আঘাতের গর্জন। উজ্জ্বল সূর্য মাথা নত করে দিনের শেষে। এমন চক্রাকার নিয়মের ভেতর কূল খুঁজতে খুঁজতেই অথই জলে হারিয়ে যায় কত শত টাইটানিক জীবন।
জাহাজ জানে না, অথই সমুদ্রে লুকিয়ে থাকে বারমুডা। ট্রাইএঙ্গেল থেকে অনায়াসে শুঁকে নিতে পারে রক্তগন্ধ। মুহুর্তেই পরম্পরার ধারাপাত ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে ছন্দ পতনের শব্দ। যদিও জলপথের জীবন, অসংখ্য ঢেউয়ের জটিল সিঁড়ি ভেঙেই এগিয়ে যেতে হয়।
সংসার কোনো সং- সার নয়। সন্তান বড় হলে মা বাবা, আবার সন্তান, আবার। এক জীবনে সব ইচ্ছে পূরণ হয় না। পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সুতো প্যাঁচিয়ে নাটাই, জলমাঠের শিশুটি এগিয়ে এলে নিজের মতোই ওড়াতে চায় ঘুড়ি। গতিশীল স্রোতের ভেতর গা ভাসাতে হয় বলে হারিয়েও যায়। সে সব অপূর্ণ ইচ্ছে ছায়ার মতোই, ঝুলতে থাকে মনোকক্ষের জানালায়।
সন্তানের মুখে ঈশ্বর দর্শন হলে অপূর্ণ ইচ্ছেরা আবার তাজা শ্বাস নিতে চায়। কখনো রোদ এসে ভেতর ঘরে ঢুকে যদি, ইচ্ছেরা জেগে ওঠে। ডানা মেলে ভেসে বেড়ায় পাখির মতো। সন্তানের নিরাপদ অতিক্রম দেখলে, মুখে হাসি দেখলে, চোখে খুশি দেখলে স্মৃতির পাতায় জমে থাকা সব কষ্ট ধুয়ে মুছে যায়। অনুশাসনের ব্যাকরণ ভুল হলে আবার আভ্যন্তরীণ অবদমন এবং বারংবার পূর্ণতার ভেতর মুখ টিপে হাসে অবাঞ্ছিত অপূর্ণতা।
মনোবিজ্ঞান বলে, মানুষের ভেতর ইচ্ছে কখনও মরে না। আপাত সংযমের দিনগুলো সঠিক সময়ের জন্যই অপেক্ষা করে রাতদিন। সন্তানের বেড়ে ওঠা ছন্দে অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো পা মেলায় অগোচরে। এ সত্য মেনে নিলে সওদাগর তিনি মা বাবা, খুঁজে পেতে পারেন কূল এবং ঢেউয়ের রঙ মেখে নেচে উঠবে মনোমাঠ।
Leave a Reply