মঙ্গলবার, ০৬ Jun ২০২৩, ০১:১৬ পূর্বাহ্ন

তুমিই আদর্শ মানুষ-মাহফুজ সুমন

তুমিই আদর্শ মানুষ-মাহফুজ সুমন

তুমিই আদর্শ মানুষ
মাহফুজ সুমন

আশিকের প্রায় মনে পরে যায় শৈশব কালের মায়ের কথাগুলো.
খোকা মানুষের সাথে সবসময় মধুর ভাষায়, সুন্দরভাবে কথা বলতে হয়। যারা বিশ্বাসী,চরিত্রবান, মধুুর ভাষায় কথা বলে, মানুষের সাথে ভাল আচরণ করে তারাই আদর্শ মানুষ।একজন আদর্শ মানুষের আরও একটি গুণ থাকা আবশ্যক,তা হলো কখনো আমানতের খিয়ানত করবে না, কক্ষনো না।
আশিকের বয়স বারো থেকে তেরো বছর। ভাল ছাত্র।গত বছর অষ্টম শ্রেণীতে স্কলারশিপ পেয়েছে।স্কুল থেকে শুরু করে সকল আত্মীয় স্বজন আশিককে ভালো জানে। আশিক মায়ের কথায় আদর্শ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়তে চায়।
আশিকদের পরিবার অনেক ছোট। মা,বোন আর নিজে অর্থাৎ তিন সদস্যের সংসার। বাবা অনেক আগে চলে গেছেন পরপারে। তখন থেকেই সংসারে নানাবিধ টানাপোড়া। মা দুই সন্তানের ভবিষ্যত ভেবেই কাপড় সেলাই মেশিন চালিয়ে এবং গার্মেন্টসে চাকুরি করে সংসার চালায়। এতেই সুন্দরভাবে দিন কেটে যায় ।
হঠাৎ, মার্চ মাসের শেষের দিকে মায়ের শরীরে জ্বরজ্বর ভাব, সব সময় অস্বস্তি অনুভূত হয়,খাবারে অরুচি। দিনদিন মায়ের শরীরটাও ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। আশিক মাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করালো। কয়েক দিন পর ডাক্তার রেজাল্ট দিলেন পিত্তথলিতে পাথর। জরুরী অপারেশন প্রয়োজন।
আশিক মাকে নিয়ে চিন্তিত। একমাত্র উপার্জনের পন্থা মা, তিনিই অসুস্থ ।আবার ডাক্তার বলেছেন অপারেশনের জন্য দশ হাজার টাকা লাগবে।কোথায় পায়, কি করে আশিক ! আশিক নিরুপায় হয়ে আত্মীয় স্বজন সবার সাথে যোগাযোগ করলো। কোন লাভ হলো না। মা যে গার্মেন্টসে কর্মরত ছিলেন সেখানে যোগাযোগ করলেন।দু’তিন দিন ঘুরে পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছে।বাকী আরও পাঁচ হাজার টাকা। এদিকে মায়ের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
আশিক মায়ের অবস্থা ভেবে অবশেষে এক সিএনজি গ্যারেজে যোগাযোগ করে একটি সিএনজি চালানো শুরু করলো।আশিক ভাড়া মারে কুর্মিটোলা টু মাটিকাটা আবার মাটিকাটা টু কুর্মিটোলা হাসপাতাল।আশিক সপ্তাহখানেক যেতেই তিন হাজার টাকা আয় করে ফেললো । আশিক ডাক্তারের সাথে কথা বললেন, ডাক্তার বললেন আগামীকাল সকাল দশটায় তোমার মায়ের অপারেশন হবে।
পরদিন সকাল সাতটায় সিএনজি নিয়ে হাসপাতালে রওনা করলো। রাস্তা ফাঁকা, শুভ্র বাতাস,বলা যায় যানবাহন শূন্য।পথিমধ্যে শেওড়ার কাছে ওভারব্রীজের নিচে এক ভদ্রলোক হাত ইশারা করে আশিককে থামালো। ভদ্রলোক বললেন, আমাকে বিমানবন্দরে নেমে দিয়ে আসেন প্লিজ। আশিক যেতে স্বীকার হলো না। কিন্তু বেচারি বলল আমার খুব বিপদ।আমার যাওয়া জরুরি। আশিক লোকটির বিপদের কথা ভেবে, লোকটিকে বিমানবন্দর নামিয়ে দিল। লোকটি ভাড়া দিয়ে বিমানবন্দরের ভিতরে চলে গেলেন।
আশিক একটানে চলে আসলো কুর্মিটোলা হাসপাতালে। আশিক সিএনজি থেকে নেমে পেছনে তাকাতেই দেখে সিটে একটি ব্রিফকেস। আশিক আশ্চর্য হলো, মনে পড়ল ভদ্রলোকের হাতে একবার দেখেছিল।আশিক ব্রিফকেসটা হাতে উঁচু করে দেখল ওজনও মোটামুটি ভালোই।
এদিকে ঘড়িও বসে নেই। প্রায় নয়টা বাজে, অপারেশনের বাকি মাত্র এক ঘন্টা। আশিক সিএনজিটা একটু আড়ালে নিয়ে ব্রিফকেসটার লকডিজিটগুলো মিলিয়ে ব্রিফকেসটা খুললো। দেখে ভিতরে শুধু টাকা আর টাকা। সব হাজার টাকার নোটের বান্ডিল । গননা করল পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। একবার ভাবল এখান থেকে তিন হাজার টাকা নিলে পুরা হতো মায়ের অপারেশনের দশ হাজার টাকা। কিন্তু না মায়ের শৈশবের কথাগুলো মুহূর্তের মধ্যে মনে পড়ে গেলো।আশিক ভাবলো এই টাকা আমার কাছে আমানত স্বরূপ।আশিকে ভাবলো ঐ ভদ্রলোক একবার বিপদের কথা বলেছিলেন। এই টাকা নিয়ে হয়তো বেচারা বিপদ সামলানোর জন্য রওনা করেছিলেন।আশিক ব্রিফকেসের সাইড পকেটে হাত দিয়ে পেলো একটি ভিজিটিং কার্ড । কার্ডে ঐ ভদ্রলোকের নাম ও ছবি দুটোই পেলো।আশিক একটু এগিয়ে এসে এক সিএনজিওয়ালার কাছে থেকে মোবাইল নিয়ে ঐ নাম্বারে রিং দিল। নাম্বারটি বারবার ব্যস্ত দেখাচ্ছে। এদিকে ভদ্রলোক আত্মীয় স্বজন, থানা পুলিশ সব জায়গায় বলে হয়রান পেরেশান। আশিক আবারও কয়েকবার চেষ্টার পর উনাকে মোবাইলে পেলো। আশিক সালাম জানিয়ে ওনাকে বললো আংকেল আপনার ব্রিফকেসটা ছেড়ে গিয়েছেন। ভদ্রলোক ব্রিফকেসের কথা শুনে অবাক, এতো ভাল মানুষ এখনও পৃথিবীতে আছে কখনো ভাবিনি। ভদ্রলোক আশিককে টাকার ব্রিফকেসটা নিয়ে বিমানবন্দরে ডাকলেন। এদিকে মায়ের অপারেশনের মাত্র ত্রিশ মিনিট বাকী।তারপরও আশিক এসে ভদ্রলোকের কাছে টাকার ব্রিফকেসটা হাতে তুলে দিল। ভদ্রলোক আশিকের নাম ও পরিবার পরিজন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আশিক খুব তাড়াহুড়ো করছিল। ভদ্রলোক বললেন এতো তাড়াহুড়ো করছো কেন ? আশিক বললো আমার মায়ের অপারেশন চলছে কুর্মিটোলা হাসপাতালে। বলেই আশিক দ্রুত চলে আসলো হাসপাতালে।
পথেই যানজট। আশিক হাসপাতালে পৌছাল বেলা বারোটায়। এসে দেখে মায়ের অপারেশন শেষ। ডাক্তার বলল অপারেশন সাকসেস, আগামী দু’দিন পর মাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবে। আশিক ভয় ভয় ভাবে ডাক্তারের সামনে সাত হাজার টাকা বাড়িয়ে দিল।ডাক্তার বললেন টাকা লাগাবে না।ও হ্যাঁ, শোন এখানে তোমার মাকে চিকিৎসা ও ঔষধের যত টাকা খরচ হয়েছে তত টাকা যাওয়ার সময় ক্যাশ কাউন্টার থেকে নিয়ে যেও। আশিক বলল স্যার বুঝতে পারলাম না। ডাক্তার মৃদু হাসি দিয়ে বললেন তুমি অনেক মহান। তুমিই আদর্শ মানুষ। তুমি যে ভদ্রলোকের ব্রিফকেসটা পেয়েছিলে উনি আমার ছোট ভাই।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge