বুধবার, ০৭ Jun ২০২৩, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন

বাসানের বৃক্ষপ্রেম-কবির কাঞ্চন

বাসানের বৃক্ষপ্রেম-কবির কাঞ্চন

বাসানের বৃক্ষপ্রেম
কবির কাঞ্চন

“মা, আমার চারাগাছগুলো কোথায় রেখেছো? ওগুলো জলদি আমায় দাও। আমার জন্য জীবন দাঁড়িয়ে আছে।”
কথাগুলো বলতে বলতে কাঁধ থেকে স্কুলের ব্যাগটা নামিয়ে পড়ার টেবিলের ওপর রেখে মায়ের কাছে চলে আসে বাসান।
শিরিন বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,
: কিরে এতো তাড়া কিসের? সবেমাত্র স্কুল থেকে ফিরেছিস। আগে হাতপা ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে। তারপর চারাগাছ রোপণ করিস। তখন তোর সঙ্গে আমিও যাব।
বাসান মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
: ঠিক আছে, মা। তাহলে আমি জীবনকে বিদায় জানিয়ে আসি।
: জীবন এখন কোথায়?
: আমাদের উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে। স্কুল ছুটির পর আমি ওকে সাথে করে নিয়ে এসেছি। ভেবেছিলাম আমরা দুজনে চারাগাছগুলো রোপণ করবো। এখন তুমি যখন বললে…।
: একি কথা! এমন গরমের মধ্যে জীবন উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে কেন? আগে গিয়ে ওকে বাসায় নিয়ে আয়।
মায়ের অনুমতি পেয়ে বাসান একদৌড়ে গিয়ে জীবনকে ঘরে আসবার আমন্ত্রণ জানায়।
জীবন শুরুতে ইতস্তত করলেও বন্ধুর বিশেষ অনুরোধে বাসানের পিছুপিছু ঘরে ফিরে আসে।
বাসানের মা বাসান ও জীবনকে নিজ হাতে দুপুরের খাবার খাওয়ালেন।
খাবার খেয়ে দুই বন্ধু বাসানের পড়ার রুমে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়।
বাসান ও জীবন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। আর মাত্র কয়েক মাস পর তাদের পিএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। ক্লাসের সবার মধ্য থেকে জীবনের সাথে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক। এর একটাই কারণ। বাসানের মতো জীবনও গাছপালা ভালোবাসে। গাছ লাগানোর ব্যাপারে স্কুলের সেজান স্যারের পর যে তাকে বেশি উদ্বুদ্ধ করেছে সেই জীবন। জীবনের নিজের হাতে গড়া ফুলবাগানের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বাসানের বৃক্ষপ্রেমী হওয়া।
একটুপর বাসানের মা বাসান ও জীবনকে ডেকে তাদের ঘরের পিছনের দিকে নিয়ে আসেন। দুজনের হাতে দুটি করে চারাগাছ তুলে দিয়ে তিনি কিছু পানি ও প্র‍য়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে বাড়ির পিছনের দিকে এগুতে লাগলেন।
বাসানদের বাড়ির পিছনের পুকুরটির পাড় সংলগ্ন বেশকিছু জমি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত পড়ে আছে। সেখানে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে সযতনে চারাগাছগুলো রোপন করা হলো। প্রত্যেকটি চারাগাছের পাশে বাসানের নিজ হাতের লেখা গাছগুলোর পরিচিতি ঝুলিয়ে দেয়া হলো।
এরপর জীবন বিদায় নিয়ে চলে গেলে বাসানও মায়ের পিছুপিছু বাসায় ফিরে আসে।
বাসানের নিয়মিতভাবে পরিচর্যায় মাত্র কয়েকদিনেই চারাগাছগুলো তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে। বাসান রোজ স্কুলে যাবার আগে একবার চারাগাছগুলোতে পানি দিবে। আবার স্কুল থেকে ফিরে এসে চারাগাছগুলোর খুব কাছে দাঁড়িয়ে প্রাণভরে দেখবে। পাশে কোন আগাছা জন্মাতে দেখলে সাথে সাথে তা নির্মূল করে দেবে।
কখনও মায়ের সাথে আবার কখনও বাবার সাথে তার চারাগাছ নিয়ে গল্প করবে।
ছেলের এমন বৃক্ষপ্রেম দেখে বাবা-মা দুজনে মনে মনে খুশি হন। সুযোগ পেলেই বাসান বাবার কাছে চারাগাছ কিনে দেবার বায়না ধরে বসে। বাবাও না করেন না। ছেলের পছন্দমতো বিভিন্ন জাতের চারাগাছ কিনে আনেন। বাসান বাবার কাছ থেকে নতুন চারাগাছ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। দিনে দিনে বাসানের চারাগাছগুলো বড় হতে থাকে।
এভাবে দিন যায় মাস আসে। আবার মাসের পর বছরও চলে যায়। বাসানও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যায়।
এবছর সে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। দিনে দিনে তার বাগানের পরিসীমা বেড়েই চলেছে। বিশালাকৃতির বাগানের চারপাশে শক্ত বেড়া দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সার্বক্ষণিক কাজের জন্য দুইজন লোকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন নিজের বাগানের ফল খেয়ে কিছু ফল বিক্রিও করতে পারছে। এলাকার লোকজনেরা সুযোগ পেলেই তার ফুলবাগানের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে এখানে ছুটে আসেন। তাছাড়া ভেষজগাছগুলো থেকে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের জন্য কিছু অংশ নিতে আজকাল এলাকার লোকজন প্রায় বাসানের কাছে ছুটে আসেন। সে নিজ হাতে বাগানের ঔষধি গাছের পাতা, বাকল ইত্যাদি ছিঁড়ে দেয়। এলাকার মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে তার ভালো লাগে।
এলাকায় সবুজ বিপ্লব গড়ে তোলার কারণে বিভিন্ন মিডিয়ার লোকজন তার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য ছুটে আসেন।
ছেলের এমন সাফল্যে বাসানের বাবা খুব বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আজকাল একটু সময় পেলে তিনি প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিয়ে ছেলের বাগানে সময় দিতে ছুটে আসেন। বাবা-মাকে একসাথে বাগানে হাঁটতে দেখে বাসানের মন আনন্দে ভরে যায়।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge