ফ্লাশব্যাক-৮
মো. শওকত আলী
একটি পাহাড় ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত পর্যটকদের কাছে থাইল্যান্ড একটি পছন্দের দেশ। যিনি বা যারা থাইল্যান্ড বেড়াতে যান তারা ব্যাংকক শহর ঘুরতে এবং শপিং করতে পছন্দ করেন।সেসংগে পাথাইয়া সমুদ্র সৈকতে আমোদ প্রমোদেও কাটাতে চান কিছুটা সময়। তাই, থাইল্যান্ডের অন্য জায়গার নামের চেয়ে এ জায়গা দুটো পর্যটকদের কাছে অতি পরিচিত। যথারীতি ২০০১ সালে যখন ব্যাংককে প্রশিক্ষণে যাই তখন সাপ্তাহন্তের সাইট ভিজিটে পাথাইয়ার নাম স্বাভাবিকভাবে অন্তর্ভুক্ত ছিল।তবে পাথাইয়া সমুদ্র সৈকতে যেদিন আমরা যাই সেদিন আরও ক’টি জায়গা দেখেছিলাম।
পাথাইয়া সমুদ্রসৈকত থেকে ২৫/৩০ মিনিটের দূরত্বে দক্ষিণ পাথাইয়ায় একটি পাহাড় আছে যার নাম হচ্ছে Khao Chee Chan তবে এখন এটি Budha Mountain of Pattaya নামে সমধিক পরিচিত।
দক্ষিণ পাথাইয়ায় খুব সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে এ পাহাড়টির অবস্থান। ঐ এলাকায় একমাত্র চুনাপাথরের পাহাড় এটি। আর বিপত্তিটা সেখানেই। স্হানীয় সব নির্মাণকাজের পাথর এ পাহাড় কেটে সংগ্রহ করা হতো। একসময় এ পাহাড়টি ধ্বংসের হুমকিতে পড়ে যায়।
এ পাহাড়ের কাছাকাছি একটা বুদ্ধ মন্দির রয়েছে। স্হানীয় কর্তৃপক্ষ পাহাড়টি রক্ষা করার বিষয়ে ধর্মীয় প্রধান পুরোহিতের সংগে একটি প্রস্তাব নিয়ে পরামর্শ করেন। তার সুপারিশে পাহাড়ের উত্তর পার্শ্বের খাড়া গায়ে পাথর কেটে মহামতি বুদ্ধের একটি ভাস্কর্য চিত্রিত করা হয়েছে। হাঁটুতে হাত রেখে মহামতি বুদ্ধ বসে আছেন Sukhithai Style এ। কম্পিউটারের সফটওয়্যার ব্যবহার করে এটির ডিজাইন করা হয়। তারপর লেজার রশ্মির মাধ্যমে পাহাড়ের পাথর কেটে কেটে বুদ্ধের আদল দেয়া হয়। পাথরে খোদাই করার পর খোদাইকৃত জায়গায় স্বর্ণপাত ব্যবহার করা হয়। ১০৯ মিটার উঁচু এবং ৭০ মিটার প্রশস্ত এ ভাস্কর্যটি নির্মাণকাজে প্রায় ২০টন স্বর্ণ প্রয়োজন হয়েছিল বলে জানা যায় ।
১৯৯৬ সালে থাই রাজা ভূমিবলের ৫০তম বার্ষিকীর স্মারক হিসেবে এ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করে শুধু পাহাড়টিকে ধসের হাত থেকে রক্ষা করা হয়নি অসাধারণ ভাস্কর্যটি একটি নন্দিত শিল্পকর্ম হিসেবে প্রসংশিত হয়েছে। আর এলাকাটিও একটি দর্শনীয় পর্যটন স্পট হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। অনেক দূর হতে ভাস্কর্যটি দেখা যায়। দেশি-বিদেশি প্রচুর পর্যটক বুদ্ধের এ ভাস্কর্যটি দেখার জন্য প্রতিদিন ভীড় করে।
শুধু বুদ্ধের ভাস্কর্য নয় পাহাড়সহ আশেপাশের নৈসর্গিক দৃশ্য অত্যন্ত চমৎকার। পাহাড়ের পাদদেশে পদ্মফুলে ভরা একটা ছোট লেক আছে। গোটা এলাকায় একটা শান্তিময় পবিত্র পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
বুদ্ধ পাহাড়ের সামনদিকে কাছাকাছি যে মন্দিরটি রয়েছে সেখানে গেরুয়াধারী অনেক ভিক্ষু থাকেন । পোশাকের বিধিনিষেধ মেনে (কাঁধ থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা থাকতে হবে) মন্দিরে যে কেউ প্রবেশ করতে পারে। মন্দির প্রাংগন থেকে বুদ্ধ ভাস্কর্যটি স্পষ্ট দেখা যায়। নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির কারনে (পাথর ভেঙে পড়ার আশংকা) এর চেয়ে কাছাকাছি যাওয়ার নিষেধ রয়েছে।
Viharn Sien
দক্ষিণ পাথাইয়ায় একটি দৃষ্টিনন্দন চীনা মন্দির আছে যেটিও মূল শহর থেকে ১৫ কি.মি এর মধ্যে। এ মন্দিরটির একটি বিশেষত হলো এর একাংশকে জাদুঘর করা হয়েছে আর সে জাদুঘরে এমন কিছু দূর্লভ নির্দশন রয়েছে যেগুলো চীন দেশ ছাড়া অন্য কোথাও নেই। সে নিদর্শনগুলো চীনের গৌরবময় ইতিহাস -ঐতিহ্যের স্মারক। থাই রাজা ভূমিবলের ৬০তম জন্মদিনে এ জাদুঘরটির উদ্বোধন করা হয়।
এ জাদুঘরে চীনা সরকারের নিকট থেকে উপহার হিসেবে প্রাপ্ত চিত্রকর্ম,মূর্তি ও প্রত্বতাত্তিক নানান নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্হা রয়েছে জাদুঘরে। ৩০০০ হাজার বছরের প্রাচীন মাটির তৈরি পাত্রও রয়েছে এ জাদুঘরে। আরও আছে প্রায় ২০০০হাজার বছরের পুরানো হাতে তৈরি ট্যারাকোটার সৈন্যদের মূর্তি। এছাড়াও রয়েছে কারুকার্যময় সোনার সিংহাসন। জাদুঘরে প্রবেশের মুখে চৈনিক পৌরনিক কাহিনীর কিছু দেব-দেবীর মূর্তি স্হাপন করা আছে।
মন্দিরটিকে Viharna Sienও বলা হয় যার অর্থ দেবতাদের ঘর। আবার এর পোশাকি নাম হচ্ছে Anek Kuson Sala.
Big Budha Temple
পাথাইয়া শহরের কাছাকাছি পাথাইয়া পাহাড়ে একটি খুবই দৃষ্টিনন্দন বুদ্ধ মন্দির রয়েছে। এ মন্দিরের সোনালী বর্ণের ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ মূর্তি দেখতে অসাধারণ লাগে। সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরে পৌঁছাতে হয়। সিঁড়ির শুরুতে দুপাশে ২০০ ফুট লম্বা পাহারারত আট মাথাওয়ালা ড্রাগনের ভাস্কর্য রয়েছে। থাইল্যান্ডেও একটা বিষয় দেখা যায় হিন্দু ধর্মের মত তাদের মাঝেও ধর্মের সাথে পৌরাণিক কাহিনীর মিশ্রণ ঘটানোর প্রবণতা আছে । সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলে বিকেলবেলায় সূর্য অস্তাচল, পাথাইয়া সমুদ্র সৈকত আর পাথাইয়া শহরের সুন্দর দৃশ্য চোখে পড়ে।
Leave a Reply