বই আলোচনা : শ্রী পৃথ্বীশ ভট্টাচার্যের ‘মরা নদী’
সুতপা দত্ত দাশগুপ্ত
পাঠ প্রতিক্রিয়া নয় , কেমন একটা ডুবুডুবু অনুভূতি। ঠান্ডা ঠান্ডা কালো জলে গা ডুবিয়ে থাকতে থাকতে যেমন একটা গহীন অনুভব হয় ঠিক সেইরকম। মনে হয় এই জলটাই আমার জীবন আমার ঘেরাটোপ, আমার নীড়…
এই বইটাও আমার বাবার সংগ্রহের একটি মুক্তোকণা । অনেক অনেক বার পড়ার ফলে পাতাগুলো ঝুরঝুরে , হলদে হলদে… কিন্তু অন্তরবাস… চির নতুন, চির নবীন মানবিক অনুভূতি… ভালোবাসা…
ঘটনা আর পাত্রপাত্রী রা আমাদের চেনা ছকের অদূরেই বাস করে । ভদ্রপাড়ার একটেরে কোণে দুলে , হাঁড়ি, বাগদী অর্থাৎ অন্ত্যজদের বাস …তাদের জীবন, যাপন… চাষবাস , দোকানপাতি, ব্যবসা, মাছধরা… ধান ভেনে চাল চিঁড়ে জোগাড় করা , ঝুড়ি বোনা… জমিতে হাল দেওয়া , সব কিছু নিয়েই তারা জীবন্ত এই বইটায়…
এমনকি কঠোর শ্রমের ঘাম ঝরানো বিনিময়ে তাদের মুখের ভাত ওঠে তার ফাঁকে ফোকরে এই মানুষ গুলো গান গায়, দোতারায় সুর তোলে… রাতবিরেতে পদ্মবিলে ছিপ নৌকোয় বাতাস বাইতে বেরোয়…
এই সব চিত্রণে লেখকের কলমের ডগায় রামধনু রং খেলা করে… আমরাও
গুরুচরণের বাবরি চুল আর সাজোয়ান পেশীর নাচের তালে মুগ্ধ হই…. বালিকা দিগম্বরীর অজ্ঞতায় হাসি , দীঘল দেহের মেঘলা সুন্দরী কুসুমের নিবেদনের মৌনতায় জড়িয়ে পড়ি বারবার… আর আছে পরিবার
গুরোর বুড়ো বাপ ষষ্ঠীচরণ… ছেলেকে আগলে রাখতে চায় পরিবার পরিজনের বন্ধনে… কুটিলা রাঙাদি… দূতীয়ালি করতে চায় গুরো আর কুসুমের আশনাই এর… আর সমাজ, নিয়ম, পুজোপাব্বন আর গান…
“ওপারে নলের ফুল, গাছের আগায় টিয়া….. বন্ধুরে কৈয়ো খবর
সে যেন না করে বিয়া “…গুরুচরণ তার উদাত্ত কন্ঠ আর দুরন্ত পৌরুষ নিয়ে প্রেমের উন্মাদনায় মাততে চায় সুন্দরী কুসুমের সাথে… সাথী গান, রসিক মন , আর মাদকতা ভালোবাসার…
কি যে মোহ , কি আবেশ …. ছড়িয়ে আছে ব ইটার প্রতিটি লাইনে লাইনে
কি যে টেনে রাখে… “আসলে প্রেম ও তো কোন শব্দ নয়… ধীরে ধীরে মোহের শরীর হয়ে ওঠা…. বেদুইন মনে, টিকোলো নাকের পাটায় আলতো হীরের দ্যুতি “এই প্রেম কোন পূর্ণতা পায়নি… জ্বলে জ্বলে ছাই হয়ে গেছে… শেষপর্যন্ত কুসুম ফিরে গেল নিজের বাড়ি… গুরোও আপন ঘেরাটোপে
সাক্ষী রয়ে গেল পাঠকের মনছোঁয়া ভালোলাগা বকুলগন্ধটুকু।
Leave a Reply