রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন

সুলক্ষণা’র মুক্তকথা ইমোশনাল অত্যাচার

সুলক্ষণা’র মুক্তকথা ইমোশনাল অত্যাচার

সুলক্ষণা’র মুক্তকথা ইমোশনাল অত্যাচার

ধরুন খুব ভেবে, কটা শব্দ চয়ন করে একটা পোস্ট লিখি যা বেশ ভারি,ফিলসফিকালও বলা যায়।
ভাবতে থাকি ,লোক হয় দুঃখ প্রকাশ করবেন, না হলে লাল হৃদয় আঁকবেন।
মিথ্যে বলবো না,পোস্টটা করে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি, কি ধরণের emoji আসছে দেখার জন্য…।
মোটামুটি হলে ওই কাঁচকলা,ভালো হলে লাল হৃদয়,অবাক করার মতো হলে ‘ও-ও’ চিৎকার আর দুঃখের হলে দেড় ফোঁটা ক্ষার জল পাই।
মন যখন খুশিতে গদগদ,এমন সময় কেউ একটা অসম্ভব জোরে হেসে ওঠেন। আমি ছিটকে যাই। পোস্টটি আবার পড়ে হাসির খোরাক খুঁজতে যাই শার্লক হোমসের মতো। একটা ভুরু তুলে (অন্যটা ওঠেনা বলে)। মোবাইলটা বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে পরীক্ষা করি। কিন্তু কিছুতেই,আমার সাধারণ বোধ-জ্ঞানে তা খুঁজে পাইনা।
শেষ পর্যন্ত নিজেকে বোঝাই ,আমার বোধ শক্তি হয়তো ওনাদের মতো উচ্চমার্গের নয়।
সেই সময় একটা বিরতি নিই। টেবিলের ওপর মোবাইল রেখে বিস্কুট,চিনেবাদাম (মাসের প্রথম দশ দিনের মধ্যে হলে কাজুবাদাম) আর টিভিতে sad song শুনতে শুনতে শোক পালনে ব্যস্ত হই। তখন লেখার ভবিষ্যৎ,আমার ভবিষ্যৎ, এমন কি তেত্রিশ কোটি দেবতার ভবিষ্যৎ, ইঞ্চি স্কেলে-এ মেপে দেখি। তবে এই কথা তো নিকট কাউকে বলা যায়না। তাহলে তাঁরাই হয়তো নতুন করে মাইক্রোস্কোপ নিয়ে বেরিয়ে পরবে। আর লেখাটা কতটা কি রোগগ্রস্ত হয়েছে , বা সামাজিক কোনও আঙ্গিকে তাকে ফেলা যাচ্ছে না, অথবা আমার বন্ধুর তালিকা এমন কেন – এসব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলবে। যাতে-
মরার ওপর খাঁড়ার ঘা না হয় তাই ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে দুঃখ-উৎসব করি।”ম্যায় আউর মেরে তানহাই, আকসার য়ে বাতে কিয়া করতে হ্যায়” টাইপের একটা দুঃখু আর কি! শেষে সব ভুলে পণ করি,এবার হাস্যরস যুক্ত কিছু একটা লিখবোই। প্ল্যান ভেঁজে, ছেনি হাতুড়ি নিয়ে ফের লেগে পড়ি।
নতুন মূর্তি নির্মাণ করে, কথামতো তাতে হাস্যরস ভরে দিই। আশা রাখি, লেখাটা তালশাঁস সন্দেশ হয়ে উঠবে। পুনঃরায় বুকে বল ,মুখে হাসি টেনে ফেসবুকে পোস্ট দিই। বেশ ক’জন হেসে কেশে ,একসা হয়ে কমেন্টও করেন। আমি আবার খুশিতে আটখানা হই ! ভাবি, এই তো সিংহাসন ধরে রাখা গেছে! এমন সময় , হা রে রে রে বলে কারা যেন ছুটে এসে পোস্টটায় ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কেঁদে ফেলেন।
ব্যাস! আমি আবার কাজু আর বিস্কুট খুঁজতে বেরিয়ে পড়ি। একটা স্যাড ফাইভও বেজে উঠতো পারতো কিন্তু হঠাৎ ঈশ্বরই অট্টহাসি হেসে কারেন্ট অফ করে দেন। লেখা নামক এই নাটকের স্টেজে তখন পুরো ‘অন্ধেরা’। ইচ্ছে হয় জিজ্ঞেস করি, “ইতনা সান্নাটা কিঁউ হ্যায় ভাই!” কিন্তু কোনো জবাব পাইনা।
তখন বুঝি, “our sweetest songs are those that tell of saddest thought!”

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge