মারুফ হোসেন মাহবুব এর কবিতা তোমার উঠোনে প্রিয়তমা
মারী ও মড়ক পেরিয়ে একদিন ঠিক তোমার উঠোনে গিয়ে দাঁড়াবো প্রিয়তমা-
তোমার ঘরের চাল ছুঁয়ে বাতাসে দোল খায় কৃষ্ণচূড়ার লাল,
বাগানে জারুল ফুলে বসন্তের তুমুল আয়োজন,
পালানের ঝোঁপে সোনালু গাছের গায়ে হলুদ উৎসব,
এই যে মৃত্যুর মিছিল-
এই যে দুর্ভিক্ষের গন্ধ বাতাসে-
এই সব পার হয়ে
একদিন ঠিক তোমার উঠোনে গিয়ে দাঁড়াবো প্রিয়তমা,
তোমার ঘরের চাল ছুঁয়ে বাতাসে দোল খায় কৃষ্ণচূড়ার আগুন।
তোমার বাড়িভিটার পুবকোণে আম-জাম আর লিচুর মুকুল থেকে মধুর রেণু ওড়ে বাসন্তি বাতাসে,
তোমার সজনে গাছের ডালে নাচে ফিঙে আর ভোরের দোয়েল,
তোমার বাগানের গাছে পাকা পেঁপে খেয়ে যায় শালিক, বুলবুলি-
তোমার বাড়িভিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে শিলকড়ই গাছে অজস্র ফুল,
বর্ষায় কী মাতাল গন্ধ সে শিলকড়ই ফুলে-
এই সব হৃদয়ের মৃত্যু মিছিল-
এই যে মড়ক ও মারীর বীভৎসতা-
এই যে দুর্ভিক্ষের গন্ধ বাতাসে-
এই সব পার হয়ে
একদিন ঠিক তোমার উঠোনে
ধানরং অপরাহ্নে দাঁড়াবো প্রিয়তমা,
যেমন হলদে কুটুম পাখি সহসা ডেকে ওঠে
কদম গাছের একেবারে নিচের ডালে বসে,
যুগান্তের নিযুত দাগ ও স্মৃতি এই জীবনের
জড়িয়ে চাদর যেন পরম মমতায়
তোমার উঠোনে গিয়ে দাঁড়িয়ে, প্রিয়তমা,
তেমনি উঠবো ডেকে, আয়শা! আয়শা!!
এই দেখ চিরপুরাতন আমি
দাঁড়িয়ে তোমার উঠোনে…
তুমি তখন চিটা পাতান বাতাসে উড়িয়ে
জমাচ্ছো সোনালী ধান,
তুমি তখন ঝিঙামাচায় নিমগ্ন বধূটি,
তুমি তখন ক্ষুদ ছিটাচ্ছো মুরগীছানার দলে,
তুমি তখন বিচালি দিচ্ছো দুধেল গাভীটিকে,
তুমি তখন কলতলায় ঠং শব্দে পড়ে যায় হাতের গেলাস
তুমি তখন রান্নাঘরে রানছো পুঁইশাক পুঁটি মাছের ঝোল
তুমি তখন গুনগুনাচ্ছো বারান্দায় বসে-
‘সখি ভাবনা কাহারে বলে’।
খিড়কি জানালার পরে কলমিদামে কলমির ফুল,
বাতাসে পুকুর জলে তীরতীর ঢেউ,
এমনি সময় এক নিস্তব্ধ অপরাহ্নে
তোমার নিকোনো উঠোনে দাঁড়াবো, প্রিয়তমা,
যেমন হলদে কুটুম পাখি সহসা ডেকে ওঠে
কদম গাছের একেবারে নিচের ডালে বসে,
যুগান্তের নিযুত দাগ ও স্মৃতি এই জীবনের
জড়িয়ে চাদর যেন পরম মমতায়
তোমার উঠোনে দাঁড়িয়ে, প্রিয়তমা,
তেমনি উঠবো ডেকে, আয়শা! আয়শা!
Leave a Reply