রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ১২:৪১ অপরাহ্ন

এম. তামজীদ হোসাইন এর ৫টি কবিতা

এম. তামজীদ হোসাইন এর ৫টি কবিতা

এম. তামজীদ হোসাইন এর ৫টি কবিতা

১. ভয়
অতি ক্ষুদ্র অনু থেকে পয়দা মানুষ
তারাই একে অন্যরে বলে খামুশ
জন্মিলে মরিতে হয় এটাই পরম সত্য
তবুও মানুষ অন্যায় অত্যাচারে থাকে লিপ্ত
দুইদিন আগে পরে সবাই তো যাবে মরে
তবুও তো এরা কতো অহংকার করে
পূর্বে কতো জাতি হয়েছে যে ধ্বংস
তবুও মানুষ ধর্ম ভুলে হয় কেন হিংস্র?
দুনিয়াটা স্রষ্টার নিয়ামতে ভরপুর
অথচ মানুষ আইন মানে না প্রভুর
পার্থিব জীবনে তারা করে দেশে দেশে যুদ্ধ
স্রষ্টার সৃষ্টি দেখে কি হয় না তারা উদ্বুদ্ধ?
ধনী আছে যারা প্লাবনেও এরা খেতে পায়
পায় না খেতে যারা দিনে এনে দিনে খায়
চোখ আছে তবু সমাজ আজ বড় অন্ধ
স্রষ্টার দেওয়া ফুলে পায় তারা গন্ধ
যতই করবে মানুষ অন্যায় অবিচার
দুনিয়াতে-আখিরাতে হবেই সবার বিচার
সবল কি দুর্বল সবাই তো আমরা মানুষ
অচিরেই ধ্বংস হবে সবার রঙিন ফানুস।

২. ফিরে এসো
যদি আকাশে মেঘ জমে
তবে কি আকাশের দিকে চেয়ে থাকবে?
যদি ঝুমঝুম বৃষ্টি নামে
তবে কি অবারিত মাঠে হাত ধরে ভিজবে?
যদি সমুদ্র ঢেউ খেলে
তবে কি বালুচরে দাঁড়িয়ে এক চিলতে হাসবে?
যদি পায়রার ঝাঁক উড়ে
তবে কি দুর্বাদলশ্যামে লাল শাড়ি পড়ে দৌঁড়াবে?
যদি বাতাসে আম ঝড়ে পড়ে
তবে কি বাঁধা ভুলে গাছ তলায় এসে আম কুড়াবে?
যদি বর্ষায় মাছ উজানে উঠে
তবে কি হাসির ছলে পুকুরের পাড়ে মাছ কুড়াবে?
যদি নবান্নের ধান বাড়ির উঠানে আসে
তবে কি মনের খুশিতে আত্মহারা হয়ে ধান মাড়াবে?
যদি নৌকারা পাল তুলে
তবে কি ডিঙি করে ঘুরে বেড়ানোর বায়না করবে?
যদি আড্ডা জমে উঠে
তবে কি ফন্দি আঁটিয়ে কঠিন প্রহেলিকা ছুড়ে দিবে?
যদি পাখিরা বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়
তবে কি দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে লুকোচুরি খেলবে?
যদি আবার মনে পড়ে যায়
তবে কি অতিথি পাখি বেশে হলেও ফিরবে?

৩. জীবনকে খুঁজি
জীবনকে খুঁজি জীবনের ছন্দে
সবুজ প্রকৃতির মাঝে
নিঃসঙ্গ সাগরের তীরে বসে
সকাল সন্ধ্যা সাঝে।
জীবনকে খুঁজি ভোরের আলোতে
চুপসা ঘুমের ঘোরে
সাদা নীল চন্দ্রমল্লিকা ফুল
উন্মত্ত করেছে মোরে
জীবনকে খুঁজি নদীর মাঝে
স্বচ্ছ জলের ধারায়
আলো আঁধারের খেলার ছলে
জীবন চলে ছলনায়
জীবনকে খুঁজি পাহাড় পর্বতে
পাতা ঝরা পথে
সমুদ্রের বুকে গাঁ ভাসিয়ে
আপন মনের মতে
জীবনের উত্তর পায়না খুঁজে
হেঁটে পথের ধারে
ছুটি আমি দেশ দেশান্তরে
পায়না খুঁজে তারে
জীবন কচুপাতার শিশিরবিন্দুর মতো
নড়ে টলমল করে
এক মুহূর্তে যেতে পারে
আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে গেলে
রক্ত মাংশ অঙ্গ থাকিলে
বলেনা তাহারে জীবন
ত্যাগের ইচ্ছে মনে থাকিলে
হয় জীবনে কল্যাণ
জীবন রুচি আজো পাইনি
খুঁজে মরি বহুবারে
মানবতার জন্যে জীবনদান করিলে
খুঁজিয়া পাই তাহারে।

৪. করোনার করালগ্রাস
উন্নত শহর আজ থমকে গেছে
করোনা ভাইরাসের করাল গ্রাসে
মৃত্যুভয় মানুষকে ঘরকুনো করেছে
নি:শব্দ শহরের রাস্তা কাঁদছে ত্রাসে
কোনো শপিংমলে দম্পতির ভীড় নেই
পুরো নগরী যেন এক জনশূন্য মরুভূমি
রাস্তার ধারে সবুজ ঘাস জন্মেছে
এ যেন এক প্রাকৃতিক সৃষ্ট তৃণভূমি
উন্নত হাসপাতাল শ্মশানে রুপ নিয়েছে
ডিগ্রিধারী ডাক্তারেরা আজ ভিষণ শঙ্কিত
জ্বর, হাঁচি, কাশি হলেই আইসোলেটেড করছে
মানুষ প্রাণনাশের ভয়ে কাঁপছে হয়ে আতঙ্কিত।

৫. জিন্দা লাশ
জীবন শৈত্য সায়াহ্নে এসে
সব বিস্বাদ ক্লান্তি শেষে
যোগ-বিয়োগের হিসাব কষে
বন্ধু হারিয়ে বারান্দায় বসে
ভাবছি তাকিয়ে নীলাভ আকাশে
জীবন ছিলো ভরা যশে
কত কিছু এসেছিলো যে বসে
জড়িয়ে ছিলো ভোগান্তি ক্লেশে
ভরা যৌবনে রমনীরা আসে
চোখের সম্মুখে সে স্মৃতি এখনো ভাসে
যৌবন ফুরিয়ে যায় সর্বনাসে
সবকিছু আসে জীবনে ছদ্মবেশে
তারপর জীবনে অন্ধকার নেমে আসে
যখন জীবন সায়াহ্নে আসে
থাকে না কেউ কারো পাশে
সবাই চলে যায় দিন শেষে
কোলাহলমুক্ত জীবন শ্যামল পরিবেশে
জীবন প্রকৃতিময় হয় একাকিত্ব বসবাসে
জীবন কখন যে পরিণত হয় জিন্দা লাশে!

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge