পাতা প্রকাশ ঈদ সংখ্যা: যেন এক অন্যরকম আয়োজন
মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী
ঈদ আসলে ছোট থেকে শুরু করে বড়রা সবাই আনন্দে মেতে উঠে। ছোটরা আনন্দ করে বাইরে বেড়াতে যাবে নতুন পোশাক পড়বে। ছোটদেও আনন্দের অনুভূতিই মূলত বড়দেও আনন্দিত করে। তাই ঈদ এলে তারাও আনন্দিত হয়। তারা আনন্দ করে বাচ্চাদের পোশাক কিনে দেয়ার মধ্য দিয়ে, তাদের ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। বয়স্করা আনন্দিত হয় ঈদ এলেই ছেলেমেয়েরা বাসায় ফিরে আসে। মেয়ে জামাইরা বেড়াতে আসে। তাদের কাছে পাওয়ায় ঈদের অন্যরকম আনন্দ। সাহিত্য প্রেমিক কিংবা লেখকদের অন্যরকম একটা আনন্দ অনুভব ঈদ সংখ্যা দিয়ে। প্রতি বছর ঈদে সকল পত্রিকা বর্ধিত আকারে একটা ঈদ সংখ্যা করে। সাহিত্য প্রেমিরা সেই সংগ্রহ করে পড়ে ঈদের আনন্দকে দ্বিগুন করে তোলে। এবারই ব্যতিক্রম। করোনাকালীন ঈদে কোন পত্রিকা এবার বর্ধিত আকারে আলাদা করে কোন ঈদ সংখ্যা করেনি। ঈদ সংখ্যা করেনি সব অনলাইন ম্যাগাজিন গুলো। অল্প কয়েকটি অনলাইন ম্যাগাজিন ঈদ সংখ্যা করেছে। যাদের মধ্যে অন্যতম পাতা প্রকাশ। বেশ বর্ধিত আকারেই করেছে ঈদ সংখ্যা।
চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়। এমনই একটি কবিতার লাইন দিয়ে প্রবন্ধ শুরু করেছেন লেখক প্রফসর মোহাম্মদ শাহ আলম। করোনার নিদানকাল: তবুও ঈদ শিরোনামের প্রবন্ধটি করোনকালীন সকলের ভূমিকা সহ ঈদ আনন্দের পূর্নতা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। অসাধারণ একটি লেখা। আরও যে প্রবন্ধ গুলো আছে সেগুলো হলো- ইসলাম খাতরে মে হায় লিখেছেন রেজাউল করিম মুকুল। ইরান দেশে ঈদ, ঈদে নওরোজ লিখেছেন ডা. মফিজুল ইসলাম মান্টু। ঈদ উৎসব দিন বদলের পালায় লিখেছেন আনওয়ারুল ইসলাম রাজু । অসাম্প্রদায়িক জাতি গঠনে বঙ্গবন্ধুর ভ‚মিকা লিখেছেন রক্তিম কুমার মিলন। বাংলা নববর্ষ: একাত্মতর উৎসব লিখেছেন স্বাত্তি¡ক শাহ আল মারুফ। কবির শিল্পীত ভাবনা ও কবিতার শক্তি লিখেছেন বিমলেন্দু রায়।
করোনাকালের পরকীয়া নিয়ে অনুগল্প চক্র লিখেছেন জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হক। ৯৯ভাগ পুরুষের প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার একটা না ্একটা গল্প থাকে। সেই ব্যর্থ প্রেমে পড়ার অনুগল্প লিখেছেন লেখক আদিল ফকির প্রেমের এক কপাট। করোনাকালে সীমিত আকারে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার নোটিফিকেশন নিয়ে অনুগল্প আজান লিখেছেন লেখক মজনুর রহমান। অনুগল্প অপেক্ষা লিখেছেন শামসুজ্জামান সোহাগ এবং কাক্সিক্ষত একটি চুম্বন লিখেছেন দীপক সরকার তপু।
মৃত্যুর বিষাক্ত ছোঁয়া উপন্যাস লিখেছেন লেখক পল্লব শাহরিয়ার।
“স্বামী হত্যার দায়ে দোষী প্রমাণিত হয়ে সাথীর ফাঁসি হচ্ছে আজ ভোর ৪.০১ মিনিটে। ঘড়ির কাটা ৪টা ছুঁতেই সাথীর দেয়া সমস্থ চিঠি একটি ব্যাগে ভরে অজানার উদ্দ্যেশে রওনা হলো সজল।” এরকম ১০টি পরমানু গল্প লিখেছেন আসহাদুজ্জামান মিলন।
তৃষ্ণা গল্পের শুরুতে লেখক একটা গøাস ভেঙ্গে ফেললেন। গল্পের চরিত্র রাহেলা বেগম যে তৃষ্ণা’র তাড়নায় পানির গøাস হাতে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন সেটা কিন্তু শুরুতে বোঝার সুযোগ নাই। সেই ভাঙ্গা গøাস নিয়ে গেলেন গল্পের শেষ পর্যন্ত। তৃষ্ণা লিখেছেন অঙ্কনা জাহান। এ্যারেঞ্জ ম্যারেজেও যে স্বল্প সময়ে প্রেম হয় তা লিখে দেখিয়েছেন লেখক সাজ্জাদ মোহাম্মদ। চমৎকার একটি রস গল্প পরী-পাত্রী।
অযুত শব্দ তোমার জন্য গল্প লিখেছেন এস এম সাথী বেগম। ফিরতি যাত্রা লিখেছেন সোহানুর রহমান শাহীন। চেনা মানুষের অজানা দুঃখ লিখেছেন এটিএম মোর্শেদ। জীবন লিখেছেন মারুফ হোসেন মাহবুব। ও পাড়ের ডাক লিখেছেন মোঃ মোশফিকুর রহমান। অনামিকার কাহিনী লিখেছেন জাকির সোহান।হৃদয় সমীকরণ লিখেছেন মাসুদ বশীর। পরের কথা নিজের কথা লিখেছেন শাহেদুজ্জামান লিংকন। লকডাউন লিখেছেন এ, এস, এম. হাবিবুর রহমান। করোনায় ঈদের আমেজ লিখেছেন আদিব রহমান। নীলাভ সুখে লিখেছেন কামরুন নাহার রেনু। ভ্রæণ লিখেছেন সুমাইয়া তাসনিম স্মৃতি এবং গলাকাটা লাশ লিখেছেন খলিল ইমতিয়াজ।
শিশুকিশোরদের জন্যও আছে আয়োজন। শিশুকিশোর উপযোগী গল্প লিখেছেন ৪ জন লেখক। ঈদের জামা লিখেছেন ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ, দাদুর বাড়িতে ঈদ লিখেছেন কবির কাঞ্চন, বাবার চোখে জল লিখেছেন শেখ বিপ্লব হোসেন, নীলিমার লালজামা লিখেছেন রাফিয়া ইসলাম রিয়া। ছবি একেঁছে সুমাইতা সুয়াদী, আবিদ মারুফ রিহান, মাহিম বশীর এবং রূপকথা নন্দী।
কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, বান্দরবন ভ্রমণের স্মৃতি কথা নিয়ে দীর্ঘ একটি ভ্রমণ কাহিনী পাহাড় সাগর এবং আমরা লিখেছেন পিয়াল হাসান।
রংপুরের ১৮ খানা জমিদারির সংক্ষিপ্ত আকারে ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন মুস্তাফিজ রহমান। পড়লে জানা যাবে রংপুরের জমিদারদের ইতিহাস।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ ফেরদৌস রহমান লিখেছেন উৎসবে শিশুদের কিভাবে যতœ নিতে হবে কি খাওয়াতে হবে বাইরে গেলে কি সাথে নিতে হবে ইত্যাদি। অভিভাবকদের লেখাটা পড়া অবশ্যই জরুরী।
নিরানন্দ সময়ে পিছু ফিরে দেখা ঈদের দিন শিরোনামে স্মৃতিকথা লিখেছেন লেখক রানা মাসুদ। স্মৃতিকথা লিখেছেন সাজিয়া আফরিন ঈদের বেদনা।
ব্যক্তিত্ব পর্বে হাজী শরীয়তুল্লাহ নিয়ে লিখেছেন ড. তপন বাগচী এবং মৌলভী খেরাজ আলীকে নিয়ে লিখেছেন কাজী মো. জুননুন।
চমৎকার একটি রসরচনা লিখেছেন লেখক আবিদ করিম মুন্না। লেখার শিরোনাম পরীক্ষায় নকল : একাল-সেকাল।
“সব গুনাহ কবুল করো / আমার বুকের ভেতর থেকে উচ্চারিত হবে প্রার্থনা মন্ত্র। এরকম ১২টি অনু কবিতা লিখেছেন ওপার বাংলার কবি সুশান্ত নন্দী। প্রত্যেকটি অনু কবিতা পাঠককে মুগ্ধ করবে।
ছড়া লিখেছেন রফিকুল হক, একে এম শহীদুর রহমান, মতিউর রহমান বস্নীয়া কাব্যনিধি, হাসনাত আমজাদ, সালেম সুলেরী, স.ম. শামসুল আলম, মুকুল রায়, সৈয়দ সায়েম, জাহাঙ্গীর আলম জাহান, মানসুর মুজাম্মিল, জগলুল হায়দার, এস এম খলিল বাবু, দিলারা সাম দিলু, সাঈদ সাহেদুল ইসলাম, কাদের বাবু, রেজাউল করিম জীবন, নূর হোসেন, শরিফুল আলম অপু, ইকবাল বাবুল, রফিক হেলাল, নূরুন্নাহার বেগম, রেজাউল রেজা, আলমগীর কবির, অভিজিৎ দাশ, শক্তিপ্রসাদ ঘোষ, ফজলে রাব্বী, আতাউর মালেক, মো. আব্দুর রহিম, চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু, শাহীন খান, আদিব রহমান।
অনুবাদ কবিতা লিখেছেন শাশ্বত ভট্টাচার্য এবং রেজাউল ইসলাম হাসু। গদ্য কবিতা লিখেছেন কবি জাহিদ কাজী।
বই আলোচনা করেছেন কবি সোমের কৌমুদি। তরুণ কবি মজনুর রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আর এক কবি শিষ খন্দকার।
এছাড়াও এপার বাংলা আর ওপার বাংলা মিলে রয়েছে আরও অসংখ্য কবিতা। কবিতার কবিরা হলেন- মাহবুবুল ইসলাম, সরকার মাহবুব, এম এ শোয়েব দুলাল, বাদল রহমান, ড. এ আই এম মুসা, মাহবুব রহমান , মিনার বসুনীয়া, নাসিমা আকতার, হাই হাফিজ, রশীদুল ইসলাম চৌধুরী, মনজিল মুরাদ লাভলু, নূর-ই-হাসিন দিশা, নিশি কান্ত রায়, হেলেন আরা সিডনী, জাকিয়া সুলতানা চৈতী, ফিরোজ কাওসার মামুন, আসাদ বিপুল, মাহফুজ রিপন, শেখ এ শাহেদ ফারসি, নবনিতা রুমু সিদ্দিকা, শাহিদা মিলকি, উমর ফারুক, আহমেদ অরণ্য, সেলিনা জামান, সূনৃত সুজন, সাব্বির হোসেন, সাকিল মাসুদ, মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ্, মোস্তাফিজুর রহমান, রবীন জাকারিয়া, মির্জা মুহাম্মদ নরুন্নবী নূর, আবু হানিফ জাকারিয়া, বাবুল আনোয়ার, মেহেনাজ পারভীন, নাহিদ সারোয়ার, ইয়ামিন বসুনিয়া, কমল কান্ত রায়, মাসুদ মুস্তাফিজ, মিকদাদ মুগ্ধ, শাহনাজ বেগম, জিনাত আক্তার ডলি, ডা.এম এ ওহাব লাবিব, শাহরিয়ার জামান, জিয়াউর রহমান।
ওপার বাংলার কবিরা হলেন-সৌমিত বসু, গোবিন্দ ধর, অপাংশু দেবনাথ, শুভদীপ রায়, বাপ্পাদিত্য দে, অভীককুমার দে, চৈতন্য ফকির, হারাধন বৈরাগী, দিব্যেন্দু নাথ, অমলকান্তি চন্দ্র, দেবাশীষ ভট্টাচার্য, সপ্তদ্বীপা অধিকারী, শান্তনু প্রধান, সুলক্ষণা, সজল হালদার, তমালশেখর দে, সুমিত বৈদ্য, সৌগত প্রধান, তীর্থঙ্কর মৈত্র, অরূপম মাইতি, দিলিপকুমার ।
প্রবন্ধ, উপন্যাস, গল্প, অনুগল্প, পরমানু গল্প, ছড়া-কবিতা, অনু কবিতা, স্মৃতিকথা, অনুবাদ, ভ্রমণ, ইতিহাস, ব্যক্তিত্ব, রসরচনা, সাক্ষাতকার, চিকিৎসা, সচেতনতা, বই আলোচনা। কি নেই এই ঈদ সংখ্যায়? সবকিছু আছে। কোন কিছুরই অভাব নেই। আছে শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজনও। শিশুতোষ গল্প এবং আকিঁবুঁকি। মোটামুটি ভালোভাবেই ঈদ সংখ্যাটা পড়ার চেষ্টা করলাম। এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য সম্পাদক জাকির আহমদকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ঈদের এই বিশেষ আয়োজন যেন এক অন্যরকম আয়োজন। সম্পাদকের সম্পাদকীয়’র প্রথম লাইনটি একটু পরিবর্তন করে লিখে শেষ করতে চাই এই লেখাটা। করোনা মুক্তির প্রার্থনায় কাটুক প্রতিটি মুহুর্ত। সবাই ঘরে থাকুন ভালো থাকুন। ঈদ সংখ্যার লিংক : pataprokash.com/2020/05/09/পাতা-প্রকাশ-ঈদ-সংখ্যা-২০২/
Leave a Reply