শুক্রবার, ০৯ Jun ২০২৩, ০৫:১৪ অপরাহ্ন

মধ্যবিত্ত-মারুফ আল্লাম নুরী

মধ্যবিত্ত-মারুফ আল্লাম নুরী

মধ্যবিত্ত
মারুফ আল্লাম নুরী

আম্মা ব্যাগটা দেন ত্রাণ নিয়ে আসি। আম্মা একটা ব্যাগ খুঁজে দিল। ব্যাগটা নিয়ে দৌড়ে লাইনে দাঁড়ালাম। চেয়ারম্যান সাহেব আজ ৫হাজার মানুষকে ত্রাণ দিবে। হয়তো কিছু চাল পেলে আম্মা আজ ভাত রান্না করবে।
ছোট ভাইটা আর রুটি খেতে চায় না। সেদিন তো রুটিতে সুতা লাগিয়ে ঘুড়ির মতো উড়ার চেষ্টা করছিল।ধমক দিয়ে বললাম,রুটিরে এমন করলি ক্যান।চোখ দুইটা বড় বড় করে বলল,আম্মায় প্রতিদিন রুটি বানায় । রুটি আর খামু না।গুড্ডি বানাইয়া রুটিরে শাস্তি দিমু।ওর কথায় হেসে ফেললাম।হাসির মাঝে ও এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল । ভাবলাম ওর জন্য কিছু করা আমার দায়িত্ব।তাই কোন লজ্জা না করে ত্রাণ নিতে দাঁড়ালাম।
চেয়ারম্যান সাহেব এক এক করে সবাইকে ত্রাণ দিচ্ছে।এবার আমার হাতে তুলে দিবেন। কয়েকটা ক্যামেরা আমার সামনে। চেয়ারম্যান সাহেব ত্রাণ দিয়ে ছবি তুলে নিল। ব্যাগটা নিয়ে আসতে ধরছি,এমন সময় চৌকিদার চেয়ারম্যানের কানে কানে কী যেন বলল। চেয়ারম্যান সাহেব আমার ত্রাণ ফিরে নিয়ে বলল,ব্যাটা তুই তো মধ্যবিত্ত।এসব তো গরিবের খাবার। ত্রাণ না পেয়ে আকাশ ভেঙ্গে যেন মাথায় পড়ল। দেখলাম আব্বা দূর থেকে দেখতেছে।এক দৌড়ে আব্বারে জড়িয়ে ধরলাম। আব্বা এক ফোঁটা অশ্রু ফেলে বলল, বাবা আমরা তো মধ্যবিত্ত। আমাদের ত্রাণ নিতে নেই।
বাড়িতে বসে আছি।এমন সময় চৌকিদার বাড়িতে আসলেন। মনটা একটু খুশি হলো।যাক, মধ্যবিত্তের ব্যাপারটা চেয়ারম্যান বুঝতে পেরেছেন।একটু ভাব নিয়ে উঁচু গলায় বললাম, চৌকিদার সাহেব ত্রাণ আম্মার হাতে দেন। আম্মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আম্মারে বললাম,দেখছো তোমারা আমারে দাম দাও না। চেয়ারম্যান আমার জন্য বাড়িতে ত্রাণ পাঠিয়েছেন।যারা চেনার তারা আমারে চেনে। আমার কথা শুনে আম্মা মুচকি হাসি দিলো।
আমার বড় বড় লেকচার শুনে চৌকিদার চেঁচিয়ে বলল,তোর ত্রাণ নিয়ে আসিনি।
কাল পরিষদে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। চেয়ারম্যান তোরে আসতে বলেছে।এই কথা বলে চৌকিদার বের হয়ে গেল।
ভাবতে লাগলাম,যাক, ত্রাণ পায়নি কি হয়েছে । প্রশিক্ষণ দিলে টাকা তো পাবো। নিশ্চয়ই ২-৩হাজার টাকা দিবে। বাড়ির সবাইরে টাকার কথা বললাম ।এই টাকায় কি করব। সাড়া রাত চিন্তায় কেটে গেল।।
সকালে আম্মার আদর যত্ন দেখে মনে হচ্ছে ,তার ছেলে চাকরিতে যাচ্ছে।আজ গাইতে ইচ্ছে করছে।কী আনন্দ আকাশে বাতাসে,,ও,,,,,ও,,,
যাওয়ার সময় পিছন থেকে কয়েকজন ডাক দিল। বুকটা টান টান করে জানিয়ে দিলাম, পরিষদে মিটিং আছে। চেয়ারম্যান আমারে আমন্ত্রণ করছে। পরিষদে ঢুকতেই চৌকিদার রেগে গেল। তোমার এখন আসার সময় হলো ।তাড়াতাড়ি ভিতরে যাও। রুমে গিয়ে অবাক হলাম। এখানে সব মধ্যবিত্ত । একটু মুচকি হাসি দিলাম।যাক,ধনী আর গরীবরা ত্রাণ লুটে নিচ্ছে।এখন ধনী গরীবের দিন শেষ। মধ্যবিত্তের বাংলাদেশ।আর একটা গানের কলি মুখে আসলো। লজ্জায় সবার সামনে বললাম না। মনে মনে গাইতে লাগলাম।এমন সময় চেয়ারম্যান সাহেব হাজির হলেন। তিনি একটি করে সাবান আর একটা করে মগ হাতে দিলেন। প্রথমে দেখালেন কীভাবে হাত ধুতে হয় । তারপর আমাদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম তৈরি করলেন। যাদের পেটে খাবার নেই, তারা খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার নিয়ম শেখাবেন।
পরিষদে কয়েক ঘণ্টা থাকার পর বাড়িতে আসলাম। আমার জন্য আব্বা আম্মা খাবার নিয়ে বসে আছে।
ছোট ভাইটা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।আর কানে কানে বলছে,ভাই প্রশিক্ষণ এর টাকা দিয়ে একটা শার্ট কিনে দিবি। আম্মা পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে বলল,বাজান,কত টাকা দিছে।যা বাজার থেকে একটু চাল আন। আমার ও রুটি খাওয়ার আর ইচ্ছা করছে না।
মা আর ভাইয়ের কথা শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না। আব্বারে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।আর বুক ভরা ব্যাথা নিয়ে বলতে লাগলাম, আব্বা, ক্ষুদা আর স্বপ্ন নিয়ে কেন আমাদের চুপচুপি জীবন কাটাতে হয়। আমাদের দুঃখ কষ্ট কেন কেউ বুঝে না। আব্বা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলল,,বাজান ,আমরা যে মধ্যবিত্ত।

শেয়ার করুন ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © পাতা প্রকাশ
Developed by : IT incharge